একটা ছবিই বলে দিচ্ছিল সব। মেসিকে আটকাতে চাইছেন ইতালির চার খেলোয়াড়। স্বাভাবিক পথে ব্যর্থ হয়ে গিওর্গিও কিয়েলিনি পেছন থেকে মেসির জার্সি টেনে ধরেছেন। তারপরও মেসিকে থামাতে পারেনিনি কিয়েলিনি। থামাতে পারেননি আর্জেন্টিনাকে। ফুটবল বিশ্বের সেরা দুই মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বেল লড়াইয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে এক প্রকার উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জিতেছে মেসির আর্জেন্টিনা। ৩-০ গোলে জয় মেসিদের। আর এর ফলে চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন খেতাবটা পেলো মেসিরা। একই সঙ্গে ধরে রাখলো শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে টানা দুই আসরের শিরোপা জিতলো আর্জেন্টিনা।
তিন গোলের ব্যবধানে আর্জেন্টিনা জিতলেও ম্যাচটা শুরু হয়েছিল সমানতালে। এমনটাই হওয়াই স্বাভাবিক। একদিকে ইউরো চ্যাম্পিয়ন, অন্যদিকে কোপা চ্যাম্পিয়ন। বাঘে মহিষে লড়াই হওয়ারই কথা। তবে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব পার হতে না পারায় মানসিকভাবে একটু হলেও পিছিয়ে ছিল ইতালি। আরবা ওয়েম্বলিতে খেলা হওয়ায় একটু হলেও স্বস্তিতে ছিল তারা। কেননা মাত্র ১১ মাস আগে এখানে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তারা ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে মাঠটাও ছিল পরিচিত।
তারই ধারাবাহিকতা এ ম্যাচের জয় মাঝ দিয়ে ইতালি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠতে ব্যর্থ হওয়ায় সমর্থকদের মাঝে যে হতাশা ঘিরে ধরেছিল তা উপশমের একটা পথ খুঁজে পেতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু লিওনেল মেসির দল সে সুযোগ তাদের দিল না। বরং বিশ্বকাপ মিশনে নামার আগে বাছাই পর্বের পর নিজেদের আরো একটু ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করেননি আর্জেন্টিনা কোচ স্কোলানি। অন্যদিকে লিওনেল মেসি সমর্থকদের হতাশ করেননি। গোল পাননি, কিন্তু ম্যাচ উপলক্ষে ওয়েম্বলিতে হাজির হওয়া হাজার হাজার আর্জেন্টাইন সমর্থকদের আনন্দে ভাসিয়ে দিয়েছেন।
গোল পাননি মেসি, কিন্তু দুটো গোলের রূপকার ছিলেন তিনি। ২৮ মিনিটে লাউতারো মার্টিনেজ যে গোলটি করেছিলেন তার রূপকার ছিলেন মেসি। আর ম্যাচের শেষ গোলটিরও। এটি করেছেন পাউলো দিবালা। এ গোলের মাঝ দিয়ে দিবালা দলে গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়িয়ে তুলেছেন। মার্টিনেজ ও দিবালার দুই গোলের মাঝে স্কোরশিটে নাম লেখান কোপার ফাইনালের গোলদাতা অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া।
আর্জেন্টিনা অবশ্য আরো বেশি গোল পেতে পারতো। কিন্তু দূর্ভাগ্য মেসির। তার একাধিক শট ইতালি গোলরক্ষক গিয়ানলুইগি দোনারুমা দারুণ দক্ষতায় রুখে দিয়েছেন। দোনারুমা মেসিকে গোল বঞ্চিত রাখতে পারলেও তার আনন্দ উৎসবে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। ম্যাচ শেষে মেসিকে ঘিরেই আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা আনন্দে মেতে ওঠে। মেসিকে শূন্যে ছুঁড়েও তারা আনন্দ করে।
এ জয়ের মাধ্যমে আর্জেন্টিনা টানা ৩২ ম্যাচ অপরাজিত থাকার কীর্তি গড়লো। কোপা আমেরিকা জয়ের কয়েক মাসের মধ্যে তারা দ্বিতীয় ট্রফি জয়ের কীর্তি দেখালো। দীর্ঘ ২৮ বছরের ট্রফি খরা কাটিয়ে ২০২১ সালো জুলাইয়ে মেসিরা জিতেছিল কোপা আমেরিকা। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে তারা দ্বিতীয় ট্রফি জয় করলো।
ম্যাচ শেষে মেসি বলেন, ‘এটা ছিল দারুণ এক ফাইনাল। স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার দর্শকে ভরপুর ছিল। এখানে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা দারুণ। আমরা জানতাম এটা চমৎকার এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক ম্যাচ হতে যাচ্ছে। যাহোক এখন আমরা যে কোনো দলের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি। দুর্দান্ত এক দল ইতালি। ফলে আমাদের পরীক্ষাটাও ভালো হয়েছে।’
অন্যদিকে লাউতারো মার্টিনেজ এ ম্যাচের মাধ্যমে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘এটা অবিষ্মরণীয়। যেভাবে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি তাতে আমরা খুশি। বিশ্বকাপের এখনো আরো কয়েক মাস বাকি। আমরা জানি এখন আমাদের সঠিক পথে থাকতে হবে।’
দলের হয়ে দ্বিতীয় গোল করা দি মারিয়া বলেন, ‘কোপা জয়ের পর সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। কোপা জয়ের পর আমাদের ঘাড় থেকে ব্যর্থতার বোঝা নেমে গেছে। এখন আমরা খেলাকে উপভোগ করতে পারছি। দারুণ সময় পার করছি। এখন আমাদের কাজটা আরো সহজ হয়েছে। আমরা এখন আশাবাদী। তবে কোনো কিছু হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।