logo
আপডেট : ২ জুন, ২০২২ ১১:০৯
কুসিক নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা
নারীদের বাড়তি আয়, চাকরির আশায় মাঠে তৃতীয় লিঙ্গ
মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা

নারীদের বাড়তি আয়, চাকরির আশায় মাঠে তৃতীয় লিঙ্গ

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক)

প্রচার-প্রচারণায় অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে জমে উঠেছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকে গানের সুরে সুরে প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাওয়া হয়। পাশাপাশি প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি লেখা সংবলিত হ্যান্ডবিল নিয়ে ভোটারদের দরজায় যান প্রচারকর্মীরা। বলা যায়, বিয়ে বাড়ির আমেজে আছে কুমিল্লা নগরী।

এবার সিটি নির্বাচনে ব্যতিক্রম প্রচার লক্ষ্য করা গেছে। ২৭টি ওয়ার্ডে দলে দলে বোরকা পরিহিত নারীরা বিকেল থেকে রাত অবধি হ্যান্ডবিল বিতরণ করেন। তাদের কেউ ভোটার। কেউ আবার ভাড়াটিয়া। প্রচারণা শেষে তাদের হাতে প্রার্থীরা কিছু অর্থ তুলে দেন। ওই টাকায় পরিবারের কিছু আর্থিক জোগান হয় বলে প্রতিদিনই বাড়ছে নারী প্রচারকর্মীর সংখ্যা।

পাথুরীয়াপাড়া, কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড। অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই ওয়ার্ডে অন্তত প্রচারকর্মী নারীদের পাঁচটি দল দেখা যায়। সবাই বোরকা পরিহিত। তাদের সবার হাতে বিভিন্ন প্রার্থীর হ্যান্ডবিল।

প্রচারকর্মীদের একজন শাহিদা আক্তার। বছর পাঁচেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা গেছেন। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে ওই ওয়ার্ডের একটি ঝুপড়ির মতো ঘরে ভাড়া থাকেন।

শাহিদা বলেন, ‘আমি অন্যের বাসায় কাজ করি। সেখানে মাসে যে টাকা পাই তা দিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনো রকম খেয়ে পড়ে আছি। নির্বাচন আসার পর প্রতিদিন বিকেলে হ্যান্ডবিল বিতরণ করছি। একবেলা ওয়ার্ক করলে ২০০ টাকা পাই। তা দিয়ে প্রতিদিন কিছু চাল ও তরকারি কিনতে পারি। আমার মতো আরো অনেক নারী আছেন, প্রচার করে তারাও টাকা পাচ্ছেন।

নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ড শুভপুরে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে প্রচারে কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারীরা।
মিলি বেগম, নারী প্রচারকর্মীদের একটি দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘সবাইরে ২০০ টাকা কইরা দেয়। তারা সবাই ভোটার না। শুধু প্রচারের লাইগ্গা তারারে বিভিন্ন এলাকা থেকে আনি। দুপুরে আইয়ে আর সন্ধ্যায় যাওনের সময় ২০০ কইরা দিই।’

আপনি দলের নেতা। আপনি কত করে পান। এমন প্রশ্নে মিলি বেগম বলেন, ‘আমি সবাইরে একলগে করি। কোন কোন পাড়া-মহল্লায় যাব, কয়ডা হ্যান্ডবিল বিতরণ করব, কেমনে ভোট চামু তা সব আমার দায়িত্ব। তাই আমি ৫০০ টাকা পাই।’

আপনি কোনো ওয়ার্ডের ভোটার এমন প্রশ্নে মিলি বেগম বলেন, ‘আমার বাড়ি দেবিদ্বার। হেয়ানের (সেখানের) ভোটার আমি।’ কুমিল্লা নগরীতে কতজন নারী প্রচার কাজে আছেন এমন প্রশ্নে মিলি বেগম বলেন, ‘অন্তত ২০০ নারী কাজ করেন। যারা বিভিন্ন বাসায় ঝিয়ের (গৃহ পরিচারিকা) কাজ করেন। এই নির্বাচনে প্রচারের কাজটা তাদের পরিবারে কিছুটা আর্থিক জোগান বেড়েছে।’

মিলি বেগম বলেন, ‘১৫ তারিখ ভোট। ১৪ তারিখের পরে কেউ আর জিজ্ঞেস করবে না। তাই এহন যেমনে পারি কুদ্দুর কাম কইরা কয়ডা টেহা কামাই করি। পোলা মাইয়া লেহাপড়া করে। এডির লেহাপড়ার খরচ আর সংসারডার খরচ মিলাইয়া কুলাইয়া উঠতে পারি না।’

নেচে গেয়ে ভোটের প্রচারণায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ

নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাস করে ভোট চাচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের একদল মানুষ। নিজেরাই গান পরিবেশন করছেন। পাশাপাশি ভোটও চাচ্ছেন। নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় থেকে শুরু করে অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন তারা। কুসিক নির্বাচনে সাবেক মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে তাদের অবস্থান।

গতকাল বুধবার দিনভর তাদের দেখা যায় গানের সঙ্গে নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাস করতে। তাদের নাচ দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।

তাদের মধ্যে নাগি ও ববিতা বলেন, ‘আমরা মানুষের কাছে হাত পেতে খাই। সাক্কু ভাই আমাদের ভালোবাসেন। আমাদের বলেছেন, এবার নির্বাচিত হলে আমাদের চাকরি দেবেন। আমরাও আর মানুষের কাছে হাত পাততে চাই না। তাই সাক্কু ভাইয়ের জন্য ভোট চাচ্ছি।’

মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো আমাকে ভালোবাসে। আমিও তাদের আশ্বস্ত করেছি, তাদের যেন আর কখনো হাত পেতে খেতে না হয়। তাদের চাকরির ব্যবস্থা করব।’

কুসিক নির্বাচনে পাঁচ মেয়র প্রার্থীসহ ১৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নগরীর ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ২৭ হাজার ৭৯২ জন। আগামী ১৫ জুন ১০৫টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।