logo
আপডেট : ৪ জুন, ২০২২ ১২:১৩
চট্টগ্রামে জমে উঠেছে বাণিজ্যমেলা
রুবেল খান, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে জমে উঠেছে বাণিজ্যমেলা

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জমে উঠেছে ২৯তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জমে উঠেছে ২৯তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। নগরীর রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত এই মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলায় গতকাল শুক্রবার বন্ধের দিন ছিল ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটির দিনটি উদযাপন করতে নগরবাসীর অনেকেই পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে ছুটে গেছেন মেলা প্রাঙ্গণে। করোনা মহামারির কারণে গত দু’বছর এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করতে পারেনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। এ কারণে চট্টলাবাসী এতদিন মুখিয়ে ছিলেন এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার জন্য। তাই এবারের মেলা শুরু হতে না হতেই জমে উঠেছে।

প্রথমবারের মতো এই আন্তর্জাতিক বণিজ্য মেলায় স্টল নেয়া খাবারের দোকান ‘কাচ্চি ডাইন’ এর ম্যানেজার মো. ফয়সাল আনোয়ার বলেন, ‘এই মেলায় অনেকগুলো খাবারের দোকান রয়েছে। আমরা এবারই প্রথম মেলায় অংশগ্রহণ করেছি। ‘প্রচারেই প্রসার’ এই চিন্তা থেকে আমরা তুলনামূলকভাবে খাবারের দাম কম রাখছি। মেলায় আগত ক্রেতারা অল্প টাকাতেই আমাদের এখানে দুপুরের খাবার, বিকেলের নাস্তা ও রাতের খাবার খেতে পারবেন। মেলায় আমরা খাবারের পাশাপাশি জুসও বিক্রি করছি। মেলা বেশ জমে উঠেছে। আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি।’ এই মেলায় অংশ নেয়া আবুল খায়ের কোম্পানির মার্কেটিং ইনচার্জ সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘যদি আবহাওয়া ভাল থাকে, তাহলে আমরা বেশ আশাবাদি। আমরা ডিফারেন্ট টেস্টের ব্রাজিলিয়ান কফি নিয়ে এসেছি। মেলায় আগত ক্রেতারা বেশ পছন্দ করছেন। মেলা বেশ জমে উঠেছে।’

এই মেলায় কেনাকাটা করতে আসা মুহাম্মদ হানিফ তালুকদার বলেন, চট্টগ্রামের এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নিত্যনতুন অনেক পণ্য আসে। বিভিন্ন অফারও থাকে। করোনার কারণে গত দুইবছর এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হয়নি। তাই অপেক্ষায় ছিলাম। এবার মেলা হলে পছন্দের জিনিস কেনার জন্য আগেভাগেই চলে যাব। যাহোক, অনেকদিন পরে মেলায় আসার সুযোগ পেয়ে বেশ ভালো লাগছে। এবার শুরুতেই মেলা জমে উঠেছে।’ মেলায় আগত মো. মোরশেদ বলেন, ‘এখনো সব দোকান চালু হয়নি, মেলার পরিবেশ বেশ সুন্দর। মেলা প্রাঙ্গণে সেইফটি টাও খুব ভাল। সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। তবে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি।’

নগরীর রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠের প্রায় চার লাখ বর্গফুট এলাকায় আয়োজিত এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রথমবারের মতো একটি আধুনিক বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও এই মেলায় ১৭ টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, ৩৩ টি প্রিমিয়ার স্টল, ৯৯ টি গোল্ড স্টল, ৪৮টি মেগা স্টল, ১৪ টি ফুড স্টল, দু’টি আলাদা জোন নিয়ে ৩৭০টি স্টলে ৩১০ এর অধিক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। সর্বস্তরের মানুষজন যাতে ব্যাপকহারে এই মেলায় আসতে পারেন, সেজন্য দর্শনার্থীর টিকেটের মূল্য ১৫ টাকা রাখা হয়েছে। ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশ ফ্রি করে দেয়া হয়েছে। এবারের মেলায় নিজস্ব পণ্য নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে ভারত, থাইল্যান্ড ও ইরান। বিভিন্ন স্টলের মাধ্যমে তাদের পণ্য নিয়ে প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হচ্ছে।

নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে এই ২৯তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাটি শুরু হয়েছে গত ৩১ মে থেকে। ওইদিন মাসব্যাপী এই বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি। চিটাগাং চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম-এর সভাপতিত্বে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এম.এ লতিফ এমপি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এর মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এর কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, পিপিএম। এছাড়াও মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর এবং চেম্বার পরিচালক ও সিআইটিএফ-২০২২ কমিটির চেয়ারম্যান এ. কে. এম আকতার হোসেনসহ চেম্বার পরিচালকবৃন্দ ও সাবেক পরিচালকবৃন্দ, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চসিক কাউন্সিলরবৃন্দ, বিভিন্ন ট্রেডবডি নেতৃবৃন্দ, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমুহের প্রতিনিধিসহ নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন প্রসঙ্গে চিটাগাং চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘দেশের অন্যতম প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়ন, আমদানি-রপ্তানি, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই সংগঠন কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে ১০০ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করে চলেছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স। বছরের বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা, এসএমই মেলা ও আইটি মেলার আয়োজন এই চেম্বারের অন্যতম অর্জন।

গত ২৮ বছর ধরে আমরা দেশিয় পণ্যের প্রসার ও প্রচারের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে আসছি। গত দুইবছর করোনা মহামারির কারণে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এবছরও নির্দিষ্ট সময়ে এই মেলা শুরু করা সম্ভব হয়নি। বিলম্ব সত্ত্বেও ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং দর্শনার্থী ও অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক আগ্রহের কারণে ২৯তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’