মুমিনুল সরে দাঁড়িয়েছেন। তার জায়গায় নতুন করে আবার টেস্ট দলের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। সাকিবের নেতৃত্বেই ক্যারিবীয় সফরে টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। কেমন করবেন সাকিব? বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স অবশ্য বেশ উচ্ছ্বসিত সাকিবকে নিয়ে। তার মধ্যে বেশকিছু ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছেন তিনি। যাতে দলের জন্য বেশ উপকার হবে বলেই মনে করছেন সিডন্স।
প্রায় এক যুগ আগে জেমি সিডন্স যখন ছিলেন বাংলাদেশের দলের প্রধান কোচ, তখন নেতৃত্বে ছিলেন সাকিব। সিডন্সের কোচিং আর সাকিবের নেতৃত্বেই ২০১১ বিশ^কাপ খেলেছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় দফায় সাকিবের টেস্ট অধিনায়কত্ব ফেরার সময়ে সিডন্সের ভূমিকা ব্যাটিং কোচের। আগের অভিজ্ঞতা থেকে এ অস্ট্রেলিয়ান সাকিবের নেতৃত্বে ফেরায় এবার দুটি ইতিবাচক দিক দেখতে পাচ্ছেন। যদিও দল ঘোষণার পর এভাবে নেতৃত্ব বদল নিয়ে আছে সমালোচনা। মুমিনুল নিজে সরেছেন নাকি সরতে বাধ্য হয়েছেনÑ এমন আলোচনাও আছে। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এসব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পুরো পরিস্থিতিকে ভীষণ ইতিবাচক হিসেবে ব্যাখ্যা করলেন সিডন্স, ‘আমার মনে হয়, এখানে দুটি ইতিবাচক ব্যাপার আছে। সাকিব খুব ভালো অধিনায়ক ও খুব ভালো চিন্তক। সে খুব ধারাবাহিক পারফরমার। কাজেই সে অধিনায়ক হিসেবে দারুণ করবে। সবাই তাকে অনুসরণ করে। সে দারুণ নেতা।’ ‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে, মুমিনুল এখন শুধু ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে পারবে। সে কিছুটা ধুঁকছে, এখন সে শতভাগ মনোযোগ ব্যাটিংয়ে দেবে। আমরা চাই সে পারফর্ম করুক। আমরা জানি সে ভালো খেলোয়াড়। আমরা তাকে আগের অবস্থায় ফিরে পেতে চাই। অধিনায়কত্বের ভার ছাড়া সে মুক্ত হয়ে খেলবে।’
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা চোটে পড়লে নেতৃত্ব পান সাকিব। ২০১১ সালে আবার তা হারান তিনি। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০১৮ সালে ফের উইন্ডিজ সফরের আগে অধিনায়ক হন সাকিব। ২০১৯ সালে জুয়াড়ির তথ্য গোপন করে নিষিদ্ধ হলে নেতৃত্ব হারান আরেকবার। ২০২২ সালে আরেকটি উইন্ডিজ সফরের আগে সাকিবকে করা হলো অধিনায়ক। এবার বিসিবি তার নেতৃত্বের কোনো মেয়াদ ঠিক করেনি। সাকিব কতদিন অধিনায়কত্ব করবেন, তা-ও বলা মুশকিল বলে জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকলেও সিডন্স মনে করছেন সাকিবের ওপর সবারই আছে আস্থা, দলের নেতৃত্বের সব ঘাটতিও পূরণ হবে, ‘আমার মনে হয় সাকিবের অধিনায়কত্বে সবার আস্থা আছে। সে আগেও করে দেখিয়েছে। খেলোয়াড়রা ওর ওপর আস্থা রাখে। মুমিনুল যেটা পারেনি, সাকিব হয়তো সেটা বেশি করে পারবে। তাকে নেতৃত্বে ফিরে পাওয়া দারুণ ব্যাপার। মুমিনুলও তার খেলাটা খেলবে।’ ‘যখন সে অধিনায়ক, তখন তো খেলতেই হবে। অধিনায়ক হয়ে না খেলাটা খুব কঠিন। আমার মনে হয়, আরেক দফায় নেতৃত্বের সম্ভাবনা নিয়ে সে খুব রোমাঞ্চিত। দলে খুব ভালো একটা নেতৃত্বের আবহ আসবে, যেটার হয়তো ঘাটতি ছিল।’
অন্যদিকে বেশ কয়েকটি টেস্টে ছন্দহীন মুমিনুল হক। নিজের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের উন্নতির জন্য অধিনায়কত্বের ভার ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। অধিনায়কত্বের চাপ সরে যাওয়ায় এবার ছন্দে ফিরবেন মুমিনুল হকÑ এমনটাই আশা ব্যাটিং পরামর্শ জেমি সিডন্সের। সাকিব অধিনায়ক হওয়ায় আরো একটি ভালো দিকও খুঁজে পেয়েছেন সিডন্স। বলেছেন, ‘মুমিনুল এখন নিজের ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে পারবে। সে কিছুটা ছন্দহীনতায় ভুগছিল। এখন শতভাগ মনোযোগ দিতে পারবে ব্যাটিংয়ে। আমাদের তার পারফরম্যান্সটা দরকার। আমরা জানি, সে ভালো খেলোয়াড়। আমাদের সেটা দরকার।’ অধিনায়কত্বের ভার সরে যাওয়ায় সেরা মুমিনুলকে দেখার আশা সিডন্সের, ‘অধিনায়কত্বের ভারটা কাঁধ থেকে সরে যাওয়ায় মুমিনুলকে পারফর্ম করতে দেখাটা দারুণ হবে।’ সাকিবের সঙ্গে মুমিনুলের নেতৃত্বের পার্থক্য নিয়ে সিডন্স বলছেন, ‘আমার মনে হয় আত্মবিশ^াস। সাকিব আগেও অধিনায়কত্ব করেছে। তার ওপর খেলোয়াড়দের বিশ^াসটা আছে। মুমিনুল পায়নি এমন নয়, কিন্তু সাকিব কী করে সেটা সবসময় অন্য খেলোয়াড়রা অনুসরণ করে। সাকিবকে দায়িত্বে দেখাটা দারুণ হবে।’