logo
আপডেট : ৫ জুন, ২০২২ ১৮:৫২
সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি: যে কারণে এতো বড় বিস্ফোরণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি: যে কারণে এতো বড় বিস্ফোরণ

বিস্ফোরণস্থলে ছড়িয়ে আছে দাহ্য পদার্থের জার- ভোরের আকাশ

দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাসায়নিক থাকার কারণে সেখানে এতো বড় বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে তারা ধারণা করছেন। খবর-বিবিসি বাংলা।

তারা বলছেন, ডিপোর কয়েকটি কন্টেইনারে অত্যন্ত দাহ্য এই রাসায়নিকটি ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

তারা বলছেন, এ কারণে সেখানে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটেছে যাতে এতো বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রাম শহরের কাছে এই ডিপোতে গতকাল শনিবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের সূচনা ঘটে যাতে আজ রবিবার বিকেল পর্যন্ত অন্তত ৪৯ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে দমকল বাহিনীর কয়েকজন কর্মীও রয়েছেন।

আহত হয়েছে আরো কয়েকশ মানুষ। কর্মকর্তারা বলছেন কারো কারো শরীর এমনভাবে পুড়ে গেছে যে তাদের চিহ্নিত করা কঠিন।

হাসপাতালগুলোতে আহত লোকজন উপচে পড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে হতাহতের সংখ্যা আরো অনেক বেড়ে যেতে পারে।

দমকল বাহিনীর একজন পরিচালক লে. কর্নেল রেজাউল করিম যিনি সীতাকুণ্ডের আগুন নেভানোর কাজ তদারকি করছেন, বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ডিপোতে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ হয়েছে।

‘শুধু একটা বিস্ফোরণ ছিল না। কিছুক্ষণ পর পর, থেকে থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। আগুন যখন একটা কন্টেইনার থেকে আরেকটা কন্টেইনারে গিয়ে লাগছিল তখন একটা একটা করে বিস্ফোরণ হচ্ছিল,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন, এসব কন্টেইনার আগুনের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথেই সেগুলো বিস্ফোরিত হয়।

মি. করিম বলেন, তার মধ্যে কিছু বিস্ফোরণ ছিল বড় আর কিছু ছোটখাটো।

কর্মকর্তারা বলছেন, এই ডিপোটি প্রায় ২৬ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। ধারণা করা হচ্ছে সেখানে কয়েক হাজার কন্টেইনার ছিল।

এসব কন্টেইনারে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছাড়াও আরো কিছু রাসায়নিক ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও সেখানে রপ্তানির জন্য গার্মেন্টসের তৈরি পোশাকও ছিল বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

এই ঘটনায় দমকল বাহিনীর অন্তত আটজন কর্মী নিহত হয়েছেন। চার পাঁচজন এখনো নিখোঁজ।

বাংলাদেশে কোনা একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নেভাতে গিয়ে এই বাহিনীর এতো কর্মীর প্রাণহানি স্মরণ কালের মধ্যে কখনো ঘটেনি।

কর্মকর্তারা বলছেন, সীতাকুণ্ডের মতো শিল্প এলাকায় আগুন মোকাবেলা করার মতো প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্র-সামগ্রী দমকল বাহিনীর রয়েছে।

কিন্তু এই ডিপোতে যে রাসায়নিক-ভর্তি কন্টেইনার ছিল দমকল বাহিনীর কর্মকর্তাদের সেটা জানা ছিল না।

রেজাউল করিম বলেন, ‘তারা যখন আগুন নেভাচ্ছিলেন তখনই এসব বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে এবং তাতে প্রাথমিক যে দলটি সেখানে কাজ করছিল তাদের কয়েকজন নিহত হন।’

‘আমরা যদি জানতে পারতাম যে এখানে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাসায়নিক পদার্থ আছে তাহলে আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারতাম।

রাসায়নিক বিশেষজ্ঞরা তাদের সরঞ্জাম নিয়ে আগেই সেখানে যেতে পারতো।’

তিনি বলেন, ‘সেখানে মালিক-পক্ষের কেউ কিম্বা কর্তৃপক্ষের কেউ ছিলেন না। তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারিনি এবং খোঁজ করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। সে কারণে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে,’ বলেন তিনি।

বিপদজনক পদার্থ বিশেষজ্ঞরা রাজধানী ঢাকা থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছেছে।

তিনি বলছেন, বিস্ফোরণের কারণে বাতাসে যে গ্যাস ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে তার কারণে স্থানীয় লোকজনের চোখ এবং ত্বকে জ্বালাপোড়া করছে।

‘এটা অবশ্যই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। শুরুর দিকে আশেপাশে যারা ছিলেন তারা বেশি ভুগেছেন। সময়ের সাথে সাথে এর তীব্রতা কমে এসেছে।

এখন ডিপোর আশেপাশের এলাকা নিরাপদ বলেই আমরা মনে করছি,’ বলেন দমকল বাহিনীর পরিচালক লে. কর্নেল রেজাউল করিম।

তিনি বলছেন, বিকেল পাঁচটা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তারা আশা করছেন, নতুন করে আর কোনো বিস্ফোরণ না ঘটলে রবিবার রাতের মধ্যে তারা আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হবেন।