logo
আপডেট : ৫ জুন, ২০২২ ২০:৪৯
জন-বাজেট সংসদ ২০২২
সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন
নিজস্ব প্রতিবেদক

সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন আয়োজিত’ জন-বাজেট সংসদ ২০২২ আলোচনা সভা

# কৃষির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার : স্থানীয় সরকার মন্ত্রী # বিরোধী দলের কথা সরকারের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না : রুমিন ফারহানা

# দক্ষতা বাড়ানোর কোনো মেগা প্রজেক্ট সরকারের নেই : শামীম পাটোয়ারী

জন বাজেট সংসদ ২০২২ অনুষ্ঠানে জনসাধারণের পক্ষ থেকে বলা হয়, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী উন্নয়ন, তারুণ্য নির্ভর, দক্ষতা ভিত্তিক, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিসহ পরিচ্ছন্নকর্মী, চা-শ্রমিকসহ দলিত গোষ্ঠীরসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষের কথা ভেবে বাজেট করতে হবে।

কাউকে পিছনে রেখে নয় বরং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নে এগিয়ে যেতে হবে।

রোববার (৫ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন আয়োজিত’ জন-বাজেট সংসদ ২০২২ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসব কথা বলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণ।

আলোচনা সভার প্রথম অধিবেশনে ‘জাতীয় আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ও বাজেট জনপ্রত্যাশা’ বিষয়কে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেব বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ ও দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ।

দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘জীবন ও জীবিকা রক্ষায় সর্বজনীন কৌশল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা’ বিষয়কে সামনে রেখে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনে’র আহবায়ক ডা. রশীদ ই-মাহবুবের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রুমিন ফারহানা এমপি ও শামীম পাটোয়ারী এমপি।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণ ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২২’ এ জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে বাজেট করার প্রস্তাবের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আয় বাড়ানো, অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প ছেঁটে ফেলা, সর্বজনীন পেনশন স্কিম আইন প্রণয়ন, ক্ষুদ্র কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সহায়ক নীতি সুরক্ষা, স্বাস্থ্যখাতে বিকেন্দ্রীভূত বাজেট প্রণয়ন, সারাদেশে দক্ষ চিকিৎসকের সুষম বন্টন, অধিক সংখ্যক নার্স তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে লোকবল, ঔষধের সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, মানসম্মত শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অধিক বরাদ্দ ও যথাযথ ব্যবস্থপনা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল পেতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন শিক্ষা প্রযুক্তির সমন্বয়ে সুসজ্জিত করা, সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলিত কোটা বাস্তবায়ন এবং বাজেট প্রণয়নের পূর্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তাদের সংগঠনসমূহের সাথে আলোচনা করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদা উপযোগী বাজেট প্রণয়ন করার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান।

প্রথম অধিবেশনের প্রধান অতিথির বক্তব্য তাজুল ইসলাম বলেন, সরকার কৃষিখাতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে।

বর্তমানে কৃষকরা এখন শুধু কৃষিকাজ করেই ক্ষান্ত হন না।

তাদের সন্তানরা এবং কৃষকরা বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রমের দিকে ঝুঁকছে। যা আমাদের জন্য আশার দিক।

কৃষিখাতসহ প্রয়োজনীয় খাত রক্ষার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।’

স্থানীয় নির্বাচনকে দলীয়করণ মুক্ত করার পাশাপাশি সংস্কারের প্রতি নজর দিয়ে কৃষিখাত রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ, দুর্যোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ, হাওড়ের সংস্কার এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করার আহবান জানান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় উন্নত দেশগুলো তাকিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, মানুষের প্রত্যাশার শেষ নেই। সরকার প্রয়োজন ও সক্ষমতা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বাজেটে সমতা আনয়নে সরকারকে সহযোগিতা করার আহবান জানান মমতাজ।

দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার তার প্রয়োজন অনুযায়ী সবটুকু করছে।

বিরোধী দলের কাজ হলো সরকারের যৌক্তিক সমালোচনা করে জনগণের কাছে যাওয়া, পত্রিকায় লেখালেখি করা কিন্তু বিরোধী দল জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারে না।’

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার মূদ্র্যাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে।

বাজেটের ১০০% বাস্তবায়ন করা যায় না। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

যাদের টাকায় বাজেট হয় তাদেরকে নিয়ে বাজেটে কোনো আলোচনা নেই বলে মন্তব্য করেন বিরোধী দলীয় এমপি রুমিন ফারহানা।

তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠীর স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করা হয়। সবসময় সাধারণ জনগণ অবহেলিত থাকে।

জনগণের কোনো কথা শোনা হয় না। আমরা দু একটা ক্ষীণকণ্ঠে সংসদে দাড়িয়ে যে কথাগুলো বলি জনগণের হয়ে তা সরকারে কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।

যার কারণে কখনো তা বাজেটে প্রতিফলিত হয় না। কেন্দ্র থেকে যা পরিকল্পনা তাই বাজেট উল্লেখ করা হয়।

দক্ষতা বাড়ানোর কোনো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই।

শুধু উন্নয়নের মেগা প্রজেক্ট হলে করলে হবে না। দক্ষতা বাড়ানোর মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া উচিত।

পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে বাজেট প্রণয়নের আহবান জানান শামীম পাটোয়ারী।

জনপ্রত্যাশা নিয়ে কাজ না করলে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন ডা. রশীদ-ই মাহবুব।

তিনি বলেন, বাজেট সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের ওপর চাপানো হয়। জনপ্রত্যাশা চাইলেই পাওয়া যায় না।

জনসাধারণের দাবিগুলোকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করে কাজ করা দরকার।

আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের (ডিবিএম) সহ-সভাপ্রধান আমানুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক সেকেন্দার আলী মিনা।

প্রবন্ধের উপর আলোচনা রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ, অর্থনীতিবিদ ড.নাজনীন আহমেদ ও সেন্টার অন বাজেট পলিসির পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ।

সভা সঞ্চালনা করেন দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও ডিবিএমের সহ-সভাপ্রধান আসগর আলী সাবরি।