logo
আপডেট : ৯ জুন, ২০২২ ১১:১৬
ধারাবাহিক অবনতি করোনা পরিস্থিতির
শনাক্তের হার বাড়ছে
নিখিল মানখিন

ধারাবাহিক অবনতি করোনা পরিস্থিতির

প্রতীকী ছবি

মারাত্মক না হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের করোনা পরিস্থিতির ধারাবাহিকভাবে অবনতি ঘটছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক দৈনিক প্রতিবেদনে অবনতির চিত্র ফুটে উঠেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারাবাহিক অবনতির বিষয়টি অবহেলা করা যাবে না। নতুন রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার প্রতিদিন বাড়ছে। করোনার ভয়াবহ থাবার বিষয়টি ভুলে যেতে বসেছে দেশের মানুষ। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশঙ্কা

কমসংখ্যক নমুনা পরীক্ষায় পুরো চিত্র জানা যাচ্ছে না

নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার এক বছর পর করোনা পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে বিশ্বের অনেক দেশে। তাই দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপচিালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর স্বাক্ষরিত করোনাবিষয়ক দৈনিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে করোনায় নতুন শনাক্ত ও শনাক্তের হার গত ২ জুন ছিল যথাক্রমে ২২ জন ও ০.৪২ শতাংশ, ৩ জুন ২৯ জন ও ০.৬২ শতাংশ, ৪ জুন ৩১ জন ও ০.৭৫ শতাংশ, ৫ জুন ৩৪ জন ও ০.৭৯ শতাংশ, ৬ জুন ৪৩ জন ও ০.৯৯ শতাংশ এবং ৭ জুন ৫৪ জন ও ১.১৪ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন অনেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তারা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে করোনায় দৈনিক মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা এবং শনাক্তের হারের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে মানুষের আচরণ ও করোনাবিষয়ক বেশ কয়েকটি সূচকে দেশের করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। উপসর্গ থাকলেও মানুষ করোনা টেস্ট করাচ্ছে না এবং হাসপাতাল ও চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে না। বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। দৈনিক সংগৃহিত নমুনার সংখ্যা কমে গিয়ে তিন থেকে চার হাজারের মধ্যে থাকছে। ফলে করোনা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। করোনা প্রবেশের গত দুই বছরের বেশি সময়ে দেশের করোনা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র জানা হয়ে উঠেনি। বিপুল জনসংখ্যার বিপরীতে করোনা সীমিত নমুনা সংখ্যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলে আসছে। এমন সুযোগে দেশে বিরাজ করছে করোনাময় স্বাভাবিক অবস্থা। করোনা ভাইরাস থেকেও যেন নেই। এমন পরিস্থিতিতে সতর্কতা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনা মোকাবিলার জন্য গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও চলমান অবনতির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। দেশের করোনা পরিস্থিতি এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়ে গেছে। করোনার ভয়াবহ থাবার বিষয়টি ভুলে যেতে বসেছে দেশের মানুষ। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার এক বছর পর করোনা পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে বিশ্বের অনেক দেশে। তাই দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুসতাক হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, মারাত্মক না হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের করোনা পরিস্থিতির ধারাবাহিকভাবে অবনতি ঘটছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক দৈনিক প্রতিবেদনে অবনতির চিত্র ফুটে উঠেছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু পরবর্তী ঢেউয়ের বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশে দৈনিক করোনা রোগী শনাক্তের হার এক শতাংশ অতিক্রম করেছে।

বিশ্বের অনেক দেশে শূন্যের কোঠায় গিয়েও নতুন ঢেউয়ের ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করার ঘটনা রয়েছে। তাই করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে উদাসীনতা দেখা যাবে না। তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই করোনা সংক্রমণের উঠানামার খেলা চলে আসছে। যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যায় তখন মানুষ অসতর্ক হয়ে যায়, ফলে সংক্রমণ পুনরায় বেড়ে যায়। আমরা এমনিতেই অসতর্ক, তাই দেশে সংক্রমণ আবার বেড়ে যেতে পারে।

টিকা মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়, সংক্রমণ ঠেকাতে পারে না। তাই টিকা গ্রহণ করলেই পুনরায় সংক্রমিত হবেন না এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবী থেকে করোনাভাইরাস পুরোপুরি বিদায় না হবে ততদিন সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবেই। সংক্রমণের হ্রাস-বৃদ্ধির খেলা চলবে।

আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি বর্তমানে সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিকে আমরা কোনোভাবেই ঝুঁঁকিমুক্ত ভাবতে পারি না। কমে গিয়ে হঠাৎ প্রবল হয়ে ওঠার ঘটনা রয়েছে। তাই নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই করোনা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমলে কিছুদিন পরই সংক্রমণ বাড়তে দেখা যায়। স্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে তা বলার সময় আসেনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে করোনা পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতির বিষয়টি অবহেলা করা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে করোনার সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। তাই সতর্ক থাকতেই হবে।