বাংলা চলচ্চিত্রের এই সময়ের ব্যস্ত চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন। চলচ্চিত্রে তার পথচলা ২০০৭ সাল থেকে। ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের অবস্থান পাকা করে নিয়েছেন তিনি। গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত নতুন সিনেমা ‘আগামীকাল’। সেই সিনেমা এবং সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ভোরের আকাশ বিনোদন প্রতিবেদকের সঙ্গে।
★দীর্ঘদিন পর নতুন সিনেমা মুক্তি পেল প্রেক্ষাগৃহে। অনুভূতি কেমন?
এ প্রশ্নের উত্তরে দিতে একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। ২০২০ সালের মার্চে তো দেশে করোনা শুরু। যে বড় প্রজেক্টগুলো নিয়ে এগোচ্ছিলাম, হঠাৎ তা থেমে গেল। ভেবেছিলাম, এই পরিস্থিতি দুই-চার মাস থাকবে। কিন্তু এটা যে দুই বছর পেরিয়ে যাবে, এতদিন ধরে সিনেমা হল বন্ধ থাকবে, সেটা ভাবিনি।
বন্ধ হয় আমার স্বপ্নের জায়গা। প্রেক্ষাগৃহে নতুন সিনেমা মুক্তি, দর্শকের উপচেপড়া ভিড়, শিষ বাজানো, সবকিছু মিস করি। খুব আপসেট হয়ে পড়ি। সেই জায়গা থেকে এবার ছবিটি রিলিজ হলো। করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে ফিরছে। এটা তো অনেক আনন্দের।
★ কেমন চলছে ‘আগামীকাল’?
দর্শক হলে এসে ছবিটি দেখছে। সবাই গল্পের প্রশংসা করছে, অভিনয়ের প্রশংসা করছে। ‘আগামীকাল’ ঈদের ছবি নয়, সাপ্তাহিক ছবি। এর পরও দর্শকের যে ভিড় দেখেছি, বিষয়টি আমার কাছে ভালো লাগছে। দর্শকের এই অভ্যাসটা যদি থাকে, তা হলে চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে।
★ ‘আগামীকাল’ আপনার অন্য সিনেমাগুলো থেকে কতটা ব্যতিক্রমী এবং কেন?
আমার মনে হয়, প্রত্যেকটি সিনেমা- একটি অন্যটি থেকে ব্যতিক্রম। ‘আগামীকাল’ অন্য সব সিনেমা থেকে ব্যতিক্রম এই জন্য যে, অন্য সিনেমাগুলোর গল্প থেকে এর গল্প ব্যতিক্রম। মানে এটি মৌলিক গল্পের সিনেমা। এটাকে বেস্ট ছবি বলছি না। আমি বলছি, এর গল্পটি পুরোপুরি আলাদা। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ঘরানার। এখানে পরিচালক দর্শকদের আলাদা একটা গল্প বলেছেন।
★ নিজেকে এখন নায়ক নয়, অভিনেতা ভাবতে চান। এতদিন পর এই ভাবনার কারণ কী?
অনেক দিন ধরেই এটা ভাবছি। একটা সিনেমায় নায়কের চারটা গান, কিছু ডায়লগ, ব্যাস! ছবি শেষ হয়ে গেল। খেয়াল করেছি, এতে দর্শক কোনো ভালো অনুভূতি নিয়ে হল থেকে ফেরে না। নায়কও অভিনেতা বটে। পরিচালকও নায়ক হিসেবেই আমাকে সিনেমায় নেবেন। তবে আমি যদি দাগ কাটার মতো কোনো কাজ করতে পারি, তাতে দর্শক আলাদা রেসপন্স করবে। যেমন চঞ্চল চৌধুরী। তিনি তার সিনেমাগুলোতে এর প্রমাণ দিয়েছেন।
★ এই সিনেমার মাধ্যমে বহুদিন পর মমর সঙ্গে কাজ করেছেন, অভিজ্ঞতা কেমন?
অভিজ্ঞতা চমৎকার। অসম্ভব ভালো একজন অভিনেত্রী মম। দীর্ঘদিন পর তার সঙ্গে কাজ করাটা ভীষণ এনজয় করেছি।
★ ছবিটি মুক্তির আগে প্রচারণায় মমকে দেখা যায়নি। সিনেমার ব্যবসার ক্ষেত্রে এটি কোনো প্রভাব ফেলেছে কিনা?
দেখুন, প্রমোশনে একজনের অনুপস্থিতি ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে না কখনো। কারণ সেই নায়িকা কিংবা নায়ককে তো দর্শক হলে গিয়েই দেখবে। কিন্তু একজন পরিচিত মুখ যখন নিজের সিনেমার প্রচারে আসে, বিষয়টি সেই সিনেমার জন্য অবশ্যই ইতিবাচক।
★ নতুন সিনেমায় চুক্তির ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য দিচ্ছেন?
অবশ্যই গল্প এবং চরিত্র। সঙ্গে মেকিং। গল্পটা দর্শকদের সামনে কীভাবে প্রেজেন্ট করা হবে, তাও দেখি। সিনেমায় আমার কো-আর্টিস্ট একজন স্টার নায়িকাই যে হতে হবে, এমন নয়। যদি গল্প ভালো হয়, নতুন নায়িকাদের সঙ্গেও কাজ করতে আপত্তি নেই।
★ আপকামিং সিনেমাগুলো সম্পর্কে বলুন-
এ বছরে আমার ‘বীরত্ব’, ‘কাগজ’, ‘কানামাছি’ সিনেমাগুলো মুক্তি পাবে, ইনশা আল্লাহ। এ ছাড়া ভালো ভালো কয়েকটি সিনেমার কাজ হাতে রয়েছে।
★ কোরবানির ঈদে ইমন অভিনীত কোনো সিনেমা মুক্তির সম্ভাবনা আছে?
‘বীরত্ব’ সিনেমাটি নিয়ে আমরা কিছু পরিকল্পনা করছি। এখন দেখা যাক কী হয়। সবকিছু ব্যাটে-বলে মিললে ঈদে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা আছে। এ সিনেমাটি সবাইকে দেখাতে চাই। তবে ঈদে রিলিজের ব্যাপারটা নির্ভর করছে হল পাওয়ার ওপর।
★ ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
চরিত্রপ্রধান এবং ভালো গল্পের সিনেমায় নিজেকে ঢেলে সাজাতে চাই। ভালো ডিরেক্টর যারা আছেন, তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমার ডেডিকেশন লেভেলটা এখন যেখানে আছে, সেটা সব সময় ধরে রাখতে চাই।
★ ইদানীং তরুণ নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করছেন। কতটা দক্ষ মনে হচ্ছে তাদের?
ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক তরুণ নির্মাতা এসেছেন। যারা অনেক ভালো কাজ করছেন। এর মধ্যে আমার ‘বীরত্ব’ সিনেমাটির পরিচালক সাইদুল ইসলাম রানা, ‘কাগজ’-এর জুলফিকার জাহেদী, অঞ্জন দাদার ‘আগামীকাল’- সবারই প্রথম সিনেমা। প্রত্যেকেই ভালো করেছেন।
তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজের অভিজ্ঞতা আছে। তাদের প্রথম সিনেমায় আমাকে ভেবেছেন, এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। কাজ করার সময় তারা যে নতুন তা বোঝাই যায়নি। তাদের চিন্তাভাবনায় আধুনিকত্ব ও নতুনত্ব পেয়েছি। অনেক কিছু শিখতেও পেরেছি।