শুরুতেই এক গোল হজম। কিন্তু দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের। মিনিট পাচেকের মধ্যে গোল। ম্যাচে আসে সমতা। কিন্তু এ ধারা ধরে রাখতে পারেননি বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। দ্বিতীয়ার্ধে এক গোল হজম। লিড নেয় তুর্কমেনিস্তান। শেষদিকে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। কপালে জোটে হারের তিক্ততা। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে শনিবার মালয়েশিয়ার বুকিত জলিল স্টেডিয়ামে তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে ২-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। ‘ই’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাহরাইনের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। টানা দুই হারে পয়েন্ট তালিকায় তলানিতে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচ হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পেল তুর্কমেনিস্তান।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে কর্নারের পর ডি-বক্সে বল পেয়ে অরক্ষিত বাবাজানোভ জাফরের নেওয়া শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। প্রথম ৭ মিনিটের মধ্যে চারটি কর্নার পাওয়া তুর্কমেনিস্তান এগিয়ে যায় চতুর্থটি কাজে লাগিয়ে। কর্নারে আন্নাদুরদিয়েভ আলতিমিরাতের কোনাকুনি শট আটকানোর পথ জানা ছিল না গোলরক্ষক জিকোর। একটু একটু করে গুছিয়ে ওঠা বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায় ১২ মিনিটে। বিশ^নাথ ঘোষের লম্বা থ্রো ইনে রাকিব হাসানের ব্যাক হেড গোলরক্ষক লাফিয়ে উঠে আটকালেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি, হেডেই সমতা ফেরান ইব্রাহিম (১-১)। ২০ মিনিটে বল নিয়ে সাজ্জাদ হোসেন বক্সে ঢুকে পড়লেও শেষ পর্যন্ত গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা ডিফেন্ডারের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান এ ফরোয়ার্ড। ৩ মিনিট পর রাকিবের দুর্বল শট আটকান গোলরক্ষক। সাজ্জাদ ডিবক্সে সুযোগ পেয়েছিলেন শট নেওয়ার, কিন্তু নেননি তিনি। ২৫ মিনিটে সতীর্থের পাসে অনেকটা লাফিয়ে আন্নাগুলিয়েভ গুচমিরাতের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপরই সাজ্জাদের পাসে ইব্রাহিমের শট সরাসরি গোলরক্ষক বরাবর যায়।
৩৬ মিনিটে বিশ^নাথের লম্বা থ্রো ইনে সাজ্জাদের ব্যাক হেডের পর ইয়াসিন আরাফাত গোলমুখ থেকে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি। গোললাইন থেকে বিপদমুক্ত করেন ডিফেন্ডার। বিরতির আগের ৫ মিনিট ভালো সুযোগ পায় দুই দলই। হালমামেদভ রোভসেনগেলিদের কাছের পোস্টে নেওয়া শট আটকান জিকো। একটু পরই ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা রাকিব দারুণ ক্রস বাড়ান সাজ্জাদের উদ্দেশে। দুর্দান্ত সøাইডে বিপদমুক্ত করেন গুশমিরাত। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ। ৪৭ মিনিটে রাকিবের ক্রসে সাজ্জাদ আগুয়ান গোলরক্ষককে একা পেয়েও লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি। নষ্ট হয় দারুণ একটি সুযোগ। ৫২ মিনিটে সতীর্থের কাটব্যাক থেকে ফাঁকায় আমানভ আরসলানের প্লেসিং শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। ২ মিনিট পর ইব্রাহিমের ক্রসে সাজ্জাদ ঠিকমতো মাথা ছোঁয়াতে পারেননি। পরের মিনিটে ইব্রাহিম চোট পেয়ে বাইরে চলে যান, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম নামেন। ৭১ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় আক্রমণে ওঠা বিপলু আহমেদ পাস বাড়িয়েছিলেন ডিবক্সে বাঁ দিক থাকা ফাহিমের উদ্দেশে। বদলি এ ফরোয়ার্ড গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন।
এর ৬ মিনিট পরই গোল খেয়ে বসে বাংলাদেশ। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা আলতিমিরাতকে আটকাতে পারেননি ডিফেন্ডার ইয়াসিন। এ ফরোয়ার্ডের গোলমুখে বাড়ানো আড়াআড়ি ক্রস ফাঁকায় থাকা আরসলান টোকায় জালে জড়িয়ে দেন। ম্যাচের শেষ দিকে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। তার মাঝেই ৮৮ মিনিট জামালের ফ্রিকিকে দুরের পোস্টে ফাঁকায় ছিলেন বাংলাদেশের তিনজন। তাদের মধ্যে টুটুল হোসেন বাদশার শট বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। সুবর্ণ সুযোগ নষ্টের হতাশায় মাথা কুটতে দেখা যায় এ ডিফেন্ডারকে। ম্যাচজুড়ে সাহসী ফুটবল খেলা বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়তে হয় হারের বিষাদ নিয়ে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৫৪ ধাপ এগিয়ে থাকা তুর্কমেনিস্তান লাল-সবুজ জার্সিধারীদের ওপর পরিসংখ্যানের পাতায় আধিপত্য ধরে রাখল। ২০০২ সালে এশিয়ান গেমসে মুখোমুখি লড়াইয়ে ৩-১ গোলে জিতেছিল তারা। তবে এবার জামালদের বিপক্ষে তাদের জয়টি সহজ হয়নি মোটেও। টানা দুই ম্যাচে হারলেও লড়াকু ফুটবল খেলার আত্মবিশ^াস নিয়ে আগামী মঙ্গলবার স্বাগতিক মালয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।