২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বানের জলের মতো ঢুকে পড়ে রুশ বাহিনী। তারপর থেকেই চলছে যুদ্ধ। প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা বাড়লেও যুদ্ধের ময়দান ছাড়তে রাজি নয় কোনো পক্ষই। কিন্তু মস্কোর সমস্যা বাড়িয়ে কিয়েভের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সামরিক জোট। এই বিস্ফোরক পরিস্থিতিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা উসকে ইউক্রেনে ন্যাটোর অস্ত্রভাণ্ডারে ভয়াবহ মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের পশ্চিমাংশে লিভিভ শহরে ইউক্রেনীয় বাহিনীর একটি গোদামে আছড়ে পড়ে একের পর রুশ মিসাইল। ওই গুদামে ন্যাটোর দেওয়া অস্ত্রশস্ত্র রাখা ছিল। বিশেষ করে সেখানে মজুত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম-৭৭৭ হাউৎজার কামানের গোলা।
অসমর্থিত সূত্রের খবর, লিভিভ শহরে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপ থেকে আসা অস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার মজুত করেছে জেলেনস্কি বাহিনী। এখানে রয়েছে কামানের গোলা, জ্যাভলিনের মতো অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইলসহও আরও অনেক অস্ত্র। ফলে এই হামলা ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার বিরোধিতা করে এসেছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট পুতিন সাফ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো কিয়েভেকে অস্ত্র দিলে ফল ভুগতে হবে। ফলে এবার কি ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে রাশিয়া? তবে কি বিশ্বযুদ্ধের মুখে দুনিয়া? উঠছে এমন প্রশ্নই।
এদিকে, দোনেৎস্কও ও লুহানস্ক প্রদেশ নিয়ে তৈরি পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে তুমুল লড়াই চলছে রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর। লুহানস্কে জেলেনস্কি বাহিনীর শেষ ঘাঁটি সেভেরদোনেৎস্ক শহর প্রায় দখল করে ফেলেছে রাশিয়া। গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্পশহরে আটকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ শহরের একমাত্র সংযোগকারী সেতুটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। তবুও শহরটির একটি রাসায়নিক কারখানায় ঘাঁটি গেড়ে লড়াই চালাচ্ছে ইউক্রেনীয় সৈনিকেরা। তাদের অস্ত্র ফেলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা মিখাইল মিজিনিৎসেভ। এর আগে ইউক্রেনের মারিওপোল শহর দখল করেছে পুতিন বাহিনী।
যুদ্ধের মধ্যেই নতুন সমস্যার মধ্যে পড়েছে ইউক্রেন। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। খাদ্যের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারা। এছাড়াও যত্রতত্র মানুষকে কবর দিয়েছে রাশিয়া। সেই মৃতদেহের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। তাতেও আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। শহরের সত্তর শতাংশ রুশ সেনার হাতে চলে গিয়েছে। তবে আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর পথটুকু কোনোক্রমে খোলা রয়েছে। প্রায় ধ্বংসস্তূপ হয়ে গিয়েছে সেভেরদোনেৎস্ক। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, চাইলে আত্মসমর্পণ করতেই পারে ইউক্রেনীয় সেনা। কিন্তু তা না করলে ওদের মরতেই হবে।