চলমান ভয়াবহ বন্যার পানি বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রে প্রবেশ করায় পুরো সিলেট অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কুমারগাঁও ও বরইকান্দিতে বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রে পানি প্রবেশ করেছে। কুমারগাঁওয়ে জাতীয় গ্রিডের উপ-কেন্দ্রের মাধ্যমে পুরো সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
ইতোমধ্যে কুমারগাঁওয়ের ১৩২/৩৩ কেভি উপ-কেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বর্তমান ধারায় পানি বৃদ্ধি হতে থাকলে অচিরেই কন্ট্রোল রুমের ভেতরে পানি প্রবেশ করবে। তখন পুরো সিলেটের বিশাল অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দিতে সিলেটে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩ এর অধীন আরেকটি উপ-কেন্দ্র বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
এই উপ-কেন্দ্রের মাধ্যমে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন, বরইকান্দি, কামালবাজার, মাসুকগঞ্জ, বিসিক, লালাবাজার, শিববাড়ী ও কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
সিলেটে বিদ্যুতের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল কাদির জানান, বরইকান্দি উপ-কেন্দ্র চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। সবার নিরাপত্তার স্বার্থে যে কোনো সময় উপ-কেন্দ্রের আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে হতে পারে।
জানা গেছে, সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধার্থে নগরীসহ আশপাশের পুরো এলাকাকে পাঁচটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে।
বরইকান্দি উপ-কেন্দ্র বন্ধ হলে সিলেটে কার্যত এক পঞ্চমাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
এদিকে, সিলেট নগরের উপশহর, শাহী ঈদগাহ, মদিনা মার্কেটসহ কয়েকটি এলাকার কিছু বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত মে মাসের মাঝামাঝি বন্যায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র তলিয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ সুরমা ও নগরের উপশহরসহ কয়েকটি এলাকায় বেশ কয়েকদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে বন্যার পানির পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে পানীয় জলের তীব্র সংকটে পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ।
এবার কুমারগাঁও উপ-কেন্দ্রে পানি ওঠায় পুরো সিলেট অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান এই উপ-কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সুরঞ্জিত সিংহ।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপ-কেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। যে হারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তাতে যে কোনো সময় কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করতে পারে। খুব দ্রুত পানি বাড়ছে। কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করলে স্বাভাবিকভাবে গ্রিড উপ-কেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে হবে। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই এই গ্রিড উপ-কেন্দ্র বন্ধ করলে পুরো সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদী সিলেট (নগরী) পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৪৪ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাট পয়েন্টে দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিন মধ্যরাত থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (শুক্রবার দুপুর ১২টা) সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল।