ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের কথা আসলে সবার আগে মনে আসে ২০১৮ সালের কথা। সে সফরে দুঃসহ সব অভিজ্ঞতা হজম করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। স্বাগতিকদের দাপটে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ছয়টা দিনও স্থায়ী হতে পারেনি। এবারের সফরে সেউ স্মৃতি মুছে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। কিন্তু নর্থ সাউন্ডে বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই সেই স্মৃতি জেঁকে বসার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবস্থা অতটা নাজুক হয়নি। আবার শঙ্কা যে পুরোপুরি উবে গেছে তাও নয়। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৩ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। বিপরীতে দিন শেষে স্থানীয় দল দুই উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান করেছে। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম দিন শেষে ৮ রানে পিছিয়ে।
প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করলেও কিছুটা হলেও দেশবাসীকে আশাবাদী করে তুলেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। কিন্তু আসল পরীক্ষা শুরু হতেই ব্যাটাররা সব ফেলের তালিকায়। স্বাগতিকদের আমন্ত্রণে ব্যাট হাতে নামার পর বোলারদের উৎসবে মেতে ওঠার উপলক্ষ তৈরি করতে বাংলাদেশের ব্যাটাররা মোটেও দেরি করেননি। ইনিংসের দ্বিতীয় বল থেকেই শুরু হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদে উল্লাস। কেমার রোচের বলে বোনের হাতে ক্যাচ দেন মাহমুদুল হাসান জয়। এক বল খেলে কোনো রান না করেই বিদায় নেন তিনি। নতুন ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তরও একই অবস্থা। পাঁচ বল খেলেছেন, তবে রানের খাতা শূন্য। ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি সাবেক অধিনায়ক মমিনুল হকের। প্রতিপক্ষ পরিবর্তন হলেও আছেন সেই ব্যর্থতার গণ্ডিতে। তিনি রানের দেখা পাননি। শীর্ষ তিন ব্যাটারের রান না পাওয়ায় সেই ২০১৮ সালের স্মৃতি মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করে।
তবে তামিম ইকবাল ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দৃঢ়তায় সে লজ্জা থেকে মুক্তি পায় বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, দলের সংগ্রহকে তিন অঙ্কের রানে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়। ২৯ রানে যখন তামিম বিদায় নেন তখন দলের সংগ্রহ মাত্র ৪১। দলীয় একই রানে বিদায় নেন লিটন দাস (১২)। তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান (৫১) ব্যক্তিগত সংগ্রহকে দুই অঙ্কে নিতে সমর্থ হন। এট ছিল টেস্টে সাকিবের ২৮তম টেস্ট অর্ধশতক। অন্য আট ব্যাটারের ছয়জনই রানের দেখা পাননি। আর দুই ব্যাটার করেছেন ৫ রান। মেহেদি হাসান মিরাজ ২ ও এবাদত হোসেন অপরাজিত ৩।
জেডেন সিলেস ও আলজারি জোসেফ তিনটি করে উইকেট শিকার করেন। এছাড়া কেমার রোচ ও কাইল মায়ার্স দুটো করে উইকেট পান।
জবাবে ব্যাট হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার জন ক্যাম্পবেল ও রেমন রেইফার ধৈর্য্যর অনন্য প্রতীক হয়ে দেখা দেন। বাংলাদেশের পেসার আগুন ঝরা বোলিংয়ের মুখে ব্যাকফুটে চলে থাকতে বাধ্য হন। তারা রান করার দিকে মনোযোগী হননি, বরং মনোযোগ দিয়েছিলেন টিকে থাকতে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বোলারদেরও ধৈর্য্যরে পরীক্ষা নিয়েছেন। প্রথম পাঁচ ওভারে দুই ব্যাটার কোনো রানই নেননি। ১০ ওভারে তাদের রান দাঁড়ায় মাত্র ৮। আর ২০ ওভারে ২৬। মূলত দুই পেসার খালেদ আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান সরে যাওয়ার পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজ রানের দিকে মনোযোগ দেয়। রান করার জন্য তার দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজের বোলিংকে বেছে নেয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম দিনে যে দুই উইকেট হারিয়েছে তার দুটোই নিয়েছেন পেস বোলাররা। একটি মুস্তাফিজুর রহমান, অন্য উইকেটটি জমা হয়েছে এবাদত হোসেনের ঝুলিতে। ক্যাম্পবেল ২৪ রানে মুস্তাফিজুরের বলে বোল্ড হন। ৭২ বলে তিনি এ রান করেন। অন্যদিকে রেমন রেইফার এবাদতের বলে নুরুল হাসানের হাতে ধরা পড়েন। ২৬ বলে ১১ রান করেছেন। অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাথওয়েট ৪২ রানে অপরাজিত ছিলেন প্রথম দিনে। ১৪৯ বলে ৪২ রান করেছেন তিনি। তার সঙ্গে থাকা এনক্রুমাহ বোনের ১২ রানে অপরাজিত।