logo
আপডেট : ১৭ জুন, ২০২২ ১৬:৪৪
ফল বাঁচানোর নিষ্ঠুর ফাঁদে নির্মমতায় মরছে পাখি
কাশেম হাওলাদার, বরগুনা

ফল বাঁচানোর নিষ্ঠুর ফাঁদে
নির্মমতায় মরছে পাখি

ফলের বাগানে জালের ফাঁদে আটকে পড়ে মারা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি

একটি ফলবাগানের ফল রক্ষা জালের ফাঁদে আটকা পড়ে নির্মমভাবে মারা যাচ্ছে পরিবেশের অনন্য প্রাণ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

নিষ্ঠুর এই ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কড়ইতলা এলাকায় আহসান হাবিব নামের এক উদ্যোক্তার ফলবাগানে।

যদিও বাগানমালিকের দাবি, ‘পাখি মারতে নয়, ফলের সুরক্ষায় জাল পাতা হয়েছে। পাখি জালে আটকে গেলেও ছেড়ে দেওয়া হয়।’ তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জালে আটকে প্রতিদিনই বেশ কয়েক প্রজাতির পাখি মারা পড়ছে।
প্রকৃতিপ্রেমীরা বলছেন, পাখি নিধনযজ্ঞ বন্ধ করতে বন বিভাগের পদক্ষেপ নিতে হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, আহসান হাবিবের বাড়ির পেছনে দেড় একর জমিতে আম ও জামের বাগান করেছেন। এই বাগানে প্রতিদিন শালিক, বুলবুলি, দোয়েল ও ফিঙ্গেসহ নানা প্রজাতির পাখি আসছে। পাখির হাত থেকে ফল রক্ষা করতে গাছগুলোতে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। জালের ভেতরে পাখি প্রবেশ করতে পারলেও আর বের হতে পারছে না। এভাবে জালে আটকে পড়া বেশ কিছু মৃত পাখিও দেখা গেছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বাগানের মালিক দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। ২০০৮ সালে দেশে ফিরে তিনি বাড়ির পেছনে দেড় একর জমিতে বিভিন্ন জাতের বৃহৎ ফলের বাগান গড়ে তোলেন।

তার বাগানে ৮০টি আম, ৪০টি জাম ও লিচুর গাছ রয়েছে। এই বাগানে পাখি ঢুকে ফলসহ বিভিন্ন পোকামাকড় খেয়ে থাকে। এসব গাছের ফল রক্ষায় বাগানমালিক ফলের গাছগুলো ফাঁসের জাল দিয়ে আটকে রেখেছেন। পাখিরা এসব গাছে এসে বসতেই ফাঁসের জালে আটকা পড়ছে, আর জালের সুতো পেঁচিয়ে ছটপট করতে করতে মারা পড়ছে। এভাবে প্রতিদিনই মারা পড়ছে শত শত পাখি।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল খালেক বলেন, ‘প্রতি বছরই বাগানের ফল পাখির হাত থেকে রক্ষার জন্য এভাবে জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে রাখেন বাগানমালিক। ফাঁদে আটকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এভাবেই মারা যায়। এসব মরা পাখি পঁচে গিয়ে আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়ায়। পাখিগুলো ফসলের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে থাকে। এভাবে নির্বিচারে পাখি মারা হলে ফসলে পোকার উপদ্রব বেড়ে যাবে।’

এ বিষয়ে বাগানমালিক আহসান হাবিব বলেন, ‘বাগানের ফল রক্ষায় জাল দেওয়া হয়েছে। আমি কোনো পাখি হত্যা করছি না। দু-একটা পাখি জালে আটকে গেলে শিশুরা ধরে নিয়ে যায়। জাল দিয়ে পাখির উপদ্রব কমানো যাচ্ছে না, বাগানের ফল নষ্ট করেই যাচ্ছে।’

উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মারুফ রহমান বলেন, ‘এসব পাখি ফলসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে থাকে। এতে আমরা উপকৃত হই। ফলবাগানটি আমি ঘুরে দেখেছি, যেভাবে পাখি হত্যা করা হচ্ছে, এটা মারাত্মক অন্যায়। এতে প্রকৃতি ভারসাম্য হারাবে। হুমকিতে পড়বে আমাদের জীববৈচিত্র্য।’

অ্যানিমেল লাভারস্ বরগুনার সদস্যসচিব জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পৃথিবীতে সব প্রাণীর মুক্ত-স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। বাগানটিতে নির্বিচারে পরিকল্পিতভাবে পাখি হত্যা করা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। শিগগিরই ওই ফল বাগানে অভিযান চালিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বন বিভাগ বরগুনার সহকারী বন সংরক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বন্যপ্রাণী আইনে ফাঁদ পেতে কোনো প্রাণী হত্যা আইনত দণ্ডণীয় অপরাধ। ওই বাগানের পাখি হত্যার বিষয়টি জানা ছিল না। স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে প্রশাসনের সহায়তায় অল্প সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’