সিলেটের সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় আটকা পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ২১ জন শিক্ষার্থী।
তাদের উদ্ধারের ব্যাপারটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী।
জানা যায়, সেমিস্টার পরীক্ষা শেষে সিলেটে ট্যুরে গিয়েছিলেন ওই শিক্ষার্থীরা। গত ১৪ জুন রাতে তারা টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের জন্য সুনামগঞ্জে যান। ১৫ জুন দিনে বৃষ্টির মধ্যে হালকা ঘুরাঘুরি করলেও পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় তারা বিপাকে পড়েন। পরে ট্রলারে কোনোরকম সুনামগঞ্জ শহরে পৌঁছে শহরের পানসী রেস্টুরেন্টে আশ্রয় নেন। সেখানে বিদ্যুৎ এবং নেটওয়ার্ক না থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ দুরূহ হয়ে পড়েছে। সেখানে খাবার এবং খাবারের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় তারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মো. শোয়াইব আহমেদ। তিনি এক জাতীয় দৈনিকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে খাবার, সুপেয় পানির সংকটে আছি। এখানে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক ঠিকমতো কাজ করছে না। সব মিলিয়ে আমরা খুব দুরবস্থার মধ্যে আছি। আমাদের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা কাজ করছে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। ’
এ বিষয়ে প্রক্টর বলেন, ‘আমি ছেলে মেয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেছি, তারা ভালো আছে। আমরা তাদের বলেছি ভয়ের কিছু নেই। নিজেদের মত করে ভালো থাকার চেষ্টা করো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে এ ব্যাপারে আমরা সহযোগিতা কামনা করছি। ডিসি এবং এসপির সঙ্গে কথা বলে গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করেছি। বিশেষ করে খাদ্য, পানীয় এবং দ্রুত উদ্ধার করার কথা বলেছি।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ প্রক্টর অফিসে এসে খোঁজ নিয়েছেন৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে গতকাল শোয়াইব আহমেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবিষয়ে পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘একটা হঠাৎ ট্যুরের আয়োজন এতটা বাজে এক্সপেরিয়েন্স দিবে ভাবতেও পারি নাই৷ সারাদিন বৃষ্টি, বজ্রপাত আর নিজেদের সব আনন্দের জলাঞ্জলি। এখন থাকার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এলাকার মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে হোটেলে উঠে গেছে৷ হাইওয়ে রোড পানির নিচে ডুবে আছে, ঢাকার সব বাস সার্ভিস বন্ধ। সুনামগঞ্জের এই থ্রিল মৃত্যুর আগপর্যন্ত নাড়া দিতেই থাকবে...তারপরও আমরা সবাই ঠিকঠাক আছি, আলহামদুলিল্লাহ। সবাই দোয়া করেন। দ্রুত যাতে ঢাকা ফিরে সবার সাথে দেখা হয় সুস্থমতো।’
প্রবল বর্ষণে সিলেট-সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে সারা দেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন জেলার কয়েক লাখ মানুষ।