কদিন ধরেই ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ ছিল রাজধানীর জনজীবন। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি দেখা যাচ্ছিল। সারা দিন ঝুম বৃষ্টি না হলেও ঘনকালো মেঘে আকাশ ছেয়ে ছিল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। হঠাৎ চারদিকে নেমে এলো সন্ধ্যা। দেখে মনে হচ্ছিল রাতের কোনো প্রহর। পলকেই চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকারে পরিণত হতে শুরু করে।
শুক্রবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে রাজধানীতে হঠাৎ এমনই পরিবেশের দেখা মেলে। মনে হচ্ছিল যেন মেঘ ভেঙ্গে এখনই নামবে মুষলধারে বৃষ্টি। প্রকৃতিতে আচমকা অন্ধকার নেমে আসায় রাস্তায় চলাচলরত পরিবহণগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে দেয়। দোকান, শপিং মলে ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও জ্বালাতে হয় বাতি।
সামান্য দূরের কোনো বস্তুকে ছায়ার মতো অস্পষ্ট প্রতীয়মান হতে থাকে। তবে আধা ঘণ্টা পরই মেঘ কেটে গিয়ে আবার সবকিছু পরিষ্কার হতে থাকে। প্রকৃতিতে আবার দিনের ভাব ফিরে আসে।
তবে দিনের বেলায় এভাবে হঠাৎ সন্ধ্যা নেমে আসার ব্যাখ্যাও দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তারা ব্যাখ্যায় বলছে, শুক্রবার বেলা সোয়া তিনটার পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয় বজ্রমেঘ। এই মেঘের ঘনত্ব এত বেশি হয় যে সূর্যের আলো মেঘ অতিক্রম চলে আসতে পারে না। ফলে হঠাৎ চারদিকে অন্ধকারের আবহ তৈরি হয়। সবকিছু তখন দেখতে অস্পষ্ট মনে হয়।
আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, বজ্রমেঘের কারণে মূলত শুক্রবার দুপুরে রাতের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল ঢাকাতে। এই মেঘের বৈশিষ্ট্য হলো, এর ঘনত্ব এত বেশি হয় যে সূর্যের আলো মেঘ অতিক্রম করে আসতে পারে না। তখন চারদিকে অন্ধ্যকার নেমে আসে। তিনি বলেন, বজ্রমেঘ তৈরির পরপরই শুরু হয় বজ্রপাতের ঘটনা। এই বজ্রপাত প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ২০ জুন পর্যন্ত সারাদেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করবে। এই সময়ে সারাদেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। আবহাওয়া অফিস ইতোমধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে।
শুক্রবার এই ধরনের সতর্কতায় বলা হয় রংপুর রাজশাহী ময়মনসিংহ ঢাকা, চট্টগ্রাম সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় অতি ভারী ও তার অধিক ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। একই সঙ্গে বজ্রপাতসহ ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জানান, দেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ২০ জুন পর্যন্ত বিরাজ করতে পারে। অতিবৃষ্টির কারণে দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির হবে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, আগামী দুই থেকে তিন দিন এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। সবচে বেশি বৃষ্টি হতে পারে সিলেটে। এছাড়া মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের অধিকাংশ এলাকায় কমবেশি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া ভারী বৃষ্টির সতর্কতা এবং নদী বন্দরে আমরা ১ নম্বর সতর্কসংকেত দিয়েছি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
তারা জানায় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত দেশের সব বিভাগেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময়ে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ১০৯ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে রংপুরে। আর ঢাকায় বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে ২ মিলিমিটার। আগামী তিনদিন দেশে বৃষ্টিপাতের ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।