logo
আপডেট : ১৮ জুন, ২০২২ ০৭:৫৭
বৃক্ষমেলায় চার লাখ টাকার চায়না বনসাই
শিপংকর শীল

বৃক্ষমেলায় চার লাখ টাকার চায়না বনসাই

‘বৃক্ষপ্রাণে প্রকৃতি-প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ’- এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২২।

বৃক্ষমেলাকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে বিশাল মাঠে তৈরি হয়েছে ঘন সবুজের সমারহ। মেলায় স্থান পাওয়া নানা প্রজাতির গাছ, থোকায় থোকায় ধরে থাকা চেনা-অচেনা ফল, প্রস্ফুটিত ফুলের সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যায়।

বনজ, ফলদ, ঔষধি, মশলাগাছ কিংবা ঘর সাজানোর অর্কিড, বনসাই- কী নেই এ মেলায়! নানা বয়সি, শ্রেণি পেশার ক্রেতাদের পদচারণায় বেশ জমে উঠেছে এবারের বৃক্ষমেলা।

আষাঢ়ের শুরুতে ঢাকার আকাশে মুষলধারে বৃষ্টি। তাই সকালের দিকে মেলায় ক্রেতা দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কম থাকলেও দুপুরের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে।

এ সময় ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় থেকে যতটা না গাছ কিনছেন তার চেয়ে বেশি ঘুরে দেখছেন। কারো পছন্দ হলে গাছ কিনে খুশিমনে বাড়ি ফিরছেন।

গতকাল শুক্রবার বৃক্ষমেলা ঘুরে এ চিত্রই দেখা গেছে। সরেজমিন দেখা যায়, স্টলের সামনের জায়গায় থরে থরে সাজানো নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছ।

স্টলগুলোয় অর্কিড, বনসাই, বীজ, সার, ছোট কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ফলের চারাগুলোয়ও ধরেছে মৌসুমি ফল। বিশেষ করে গাছে ঝোলানো রসালো টসটসে আম চোখে পড়ার মতো।

এছাড়া পাকা কাঁঠাল, জাম্বুরা, কমলা, বেদানা, মাল্টার ঘ্রাণ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। গোলাপ, গাঁদা, কনকচাঁপা, নয়নতারা, টগর, জুঁই ক্রেতা-দর্শনার্থীরা সম্ভাষণ জানাবে।

দমকা বাতাসের তালে পাতা, ফুল ও ফলের দুলে ওঠা যেকোনো বৃক্ষপ্রেমীর মনকেও দুলিয়ে যাবে। স্টলের ডিসপ্লেতে সাজানো ক্যাকটাস আর অর্কিডও নজর কেড়ে নিবে। মেলা ঘুরে চেনা-অচেনা নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ দেখতে পাওয়া যায়।

এগুলোর মধ্যে আছে- ডুরিয়ান, অলিভ, কাউ, পিচ, কিউই ফল, অ্যাভোকেডো, আলমন্ডা, ড্রাসিনা, চেরী ফল, পার্সিমন ফল, ড্রাগন, ট্যাং ফল, অ্যাপ্রিকট ফল, আদা জামির, স্ট্রবেরি পেয়ারা, বিলাতি গাব, রাম্বুটান, জয়ফল, সাদা নাশপতি, রাবাবা, মালবেরী, লোকাট ফল, এবিউ ফল কালোজাম, সাতকরা, সফেদা, কদবেল, আতা, কুল, বরই, ডালিম, করমচা, বেল, জাম্বুরা, কাঁঠাল, লাল কাঁঠাল, চাম কাঁঠাল, ডুমুর, কাজুবাদাম, জবাফুল, ম্যান্ডেভিলা, ফুল, হাস্নাহেনা, পলাশ, কনকচাঁপা, বাসন্তী, মালতী, নয়নতারা, আঁশফল, ঘৃতকুমারী, লটকনসহ নাম জানা-অজানা হাজারো ফল ও ফলের দেশি-বিদেশি গাছ।

জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২২-এর তথ্যকেন্দ্রের বন বিভাগের কর্মকর্তা সরোজ আলী সরদার ভোরের আকাশকে বলেন, এবারের মেলায় ১০৮টি স্টল স্থান পেয়েছে। তবে ক্রমান্বয়ে আরো স্টল বাড়তে পারে। ৫ জুন থেকে শুরু হওয়া এ মেলা আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মেলা চলে। শুক্র ও শনিবার মানুষের চাপ বেশি থাকে।

তিনি আরো বলেন, শুক্রবার এ মেলায় চারা বিক্রি হয়েছে ৬৪ হাজার ৩৩০টি; যার মূল্য ৩৭ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭৭ টাকা। এ মেলায় গড়ে প্রতিদিন ১২ হাজার ক্রেতা ও দর্শনার্থী আসেন।

সবুজ-বাংলা নার্সারির ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়নুল আবেদিন ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের এখানে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর দাম প্রজাতিভেদে ভিন্ন ভিন্ন। এখানে ২০ টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকার চারা পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বনসাইয়ের। চায়না প্রজাতির কোনো কোনো বনসাইয়ের সর্বোচ্চ দাম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা।

এরপর ফলদ উদ্ভিদের চারা যেগুলোয় ফল ধরে আছে, সেগুলোর সর্বোচ্চ দাম ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা, ফুলের চারা, ঔষধি গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ দেড় থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যেই।

উত্তরা ভাই ভাই নার্সারির প্রোপাইটর মো. ফারুক সরকার ভোরের আকাশকে, এ স্টলে ২০০ প্রজাতির বিভিন্ন ফল, ফুল, বনজ গাছের চারা রয়েছে; যা সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বেশি দামের চারার বিক্রি কিছুটা কম।

রাজধানীর শ্যামলী থেকে মেলায় গাছ কিনতে এসেছেন এনজিওকর্মী মনিরা ত্রিপুরা। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ছাদবাগান করব বলে এখানে গাছ কিনতে এসেছি। মেলায় এসে নানা প্রজাতির গাছ দেখতে পাচ্ছি। এবার চারার দাম অনেক বেশি। আগে যে চারা ৩৫০ টাকায় কিনেছি, এখন তা কিনতে হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। তবে ভালো জাতের গাছ পেলে কিছু গাছ কিনে নিয়ে যাব।’

তিনি আরো বলেন, গাছ আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এ মেলায় এলে আমরা নানা প্রজাতির গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি। তাই সময় পেলেই প্রতি বছরই বৃক্ষমেলায় আসি।

কাশবন নার্সারির স্বত্বাধিকারী মো. আবুল কাশেম মণ্ডল বলেন, আমাদের বাগানে ৪০০ থেকে ৫০০ প্রকারের চারা গাছ রয়েছে। এখানে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকার চারাগাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ বাগানে মোট ৩০ লাখ টাকার চারাগাছ রয়েছে।

বৃক্ষপ্রেমীরা বছরজুড়ে এ মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। দেশে এত বড় বৃক্ষমেলা আর কোথাও হয় না। বৃক্ষমেলা ঘুরে দেখতে অনেকেই দেশ বিদেশ থেকে মেলায় আসেন। এবারের বিক্রি এখন পর্যন্ত ভালোই।

উল্লেখ্য, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী এ বৃক্ষমেলা চলবে আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত। মেলায় মোট ১০৮টি স্টল রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য বৃক্ষমেলায় প্রবেশ একদম ফ্রি।