logo
আপডেট : ১৮ জুন, ২০২২ ০৯:৫৫
দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র
হালদা নদীতে ফের চলছে মাছের ডিম সংগ্রহের উৎসব
রুবেল খান, চট্টগ্রাম

হালদা নদীতে ফের চলছে মাছের ডিম সংগ্রহের উৎসব

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পাশে বয়ে চলা হালদা নদী দেশের কার্প জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র। বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ খেতাব পাওয়া এই হালদা নদীতে মা মাছ ফের ডিম ছেড়েছে। তাই হালদা নদীতে এখন চলছে মাছের ডিম সংগ্রহের মহা উৎসব। রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালাবাউশ পুরোদমে ডিম ছাড়ছে এখন হালদা নদীতে। চলতি বছর হালদা নদীতে তৃতীয়বারের মতো ডিম ছেড়েছে ওই মা মাছ।

১৬ জুন দিবাগত রাত দুইটার পর থেকে হালদা নদীর কয়েকটি স্থানে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা মাছ। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুই শতাধিক নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহকারী নেমে পড়েছেন ডিম সংগ্রহে। তবে এ সময় ডিমের পরিমাণ ছিল কম। তারপরও অনবরত বৃষ্টি থাকলে ভালো ডিম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

এ ব্যাপারে হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘হালদা নদীতে এই বছর তৃতীয়বারের মতো মা মাছ ডিম ছেড়েছে। রাত দুইটার পর বিক্ষিপ্তভাবে ডিম সংগ্রহ করছেন সংগ্রহকারীরা। এখনো ডিম সংগ্রহের কাজ চলছে। কিন্তু ডিম ছাড়লেও তা আশানুরূপ নয়। রাত দুইটা থেকে যারা ডিম সংগ্রহ করছেন তারা মোটামুটি ভালো পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। রুই, কাতলা, মৃগেল, কালাবাউশ মাছের কিছু ডিম সংগ্রহ করেছেন। তবে শুক্রবার সকাল থেকে ডিমের পরিমাণ কম পাওয়া গেছে। যদি এমন লাগাতার বৃষ্টি থাকে, তাহলে ভালো পরিমাণে ডিম পাওয়ার আশা করতে পারি।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাতে ডিম সংগ্রহকারীদের নৌকা কম ছিল, যার কারণে ডিম সংগ্রহ করা যায়নি। তবে এ সময় যারা নদীতে ছিল, তারা ভালো পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করেছেন। এখনো ডিম সংগ্রহ চলছে। কি পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হয়েছে তার পরিপূর্ণ হিসাব করতে আরো কিছুটা সময় লাগবে।’

এ বছরের গত ১৪ মে থেকে হালদা নদীতে মা মাছগুলো নমুনা ডিম ছাড়তে শুরু করে। ওইদিন জোয়ারের সময় রাত সাড়ে ১১টা, ভাটার সময় শেষ রাত তিনটার দিকে ও পরদিন দুপুরে এবং এর পরদিন ভোরে হালদা নদীর বেশ কিছু এলাকায় নমুনা ডিম পাওয়া গেছে। ডিম সংগ্রহকারীদের অনেকেই ২৫০ গ্রাম থেকে আধা কেজি পর্যন্ত করে নমুনা ডিম পেয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাস হালদা নদীতে কার্প জাতীয় রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালাবাউশ মা মাছেরা ডিম ছাড়ে, যা এ দেশের অন্য কোনো নদীতে হয় না। এ কারণে এই হালদা নদী দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিদুল আলম জানান, ডিম ছাড়ার আগে মা মাছ খুবই দুর্বল থাকে। তাই এই সময় মা মাছ নিধনকারীদের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। এসব অপতৎপরতা রোধে এখন উপজেলা প্রশাসন দিনরাত তদারকিতে রয়েছে। এছাড়াও ডিম সংগ্রহকারীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।

চবি হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরির তথ্যানুসারে, হালদা নদীতে গতবার মাছের ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল আট হাজার ৫০০ কেজি। রেণু পোনা হয়েছিল ১০৫ কেজি। গতবার প্রজননের সময় ঘূর্ণিঝড় হওয়া এবং নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ডিম কম ছেড়েছিল মা মাছ।

তবে এর আগে ২০২০ সালে নদীতে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৫ হাজার কেজি, যা গত ১২ বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। কিন্তু অবিরত দূষণ, কুম ভরাট, ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন, রাবার ড্যাম, বাঁক কাটা, বেড়িবাঁধ, স্লুইসগেট, দখল-বেদখলসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে হালদা নদী। এ কারণে দিন দিন এখানে কমে যাচ্ছে মাছের ডিম সংগ্রহের পরিমাণ।