logo
আপডেট : ১৮ জুন, ২০২২ ১১:৫৭
এখনো কোনো চরিত্র রিপিট করিনি: নওশাবা
বিনোদন প্রতিবেদক

এখনো কোনো চরিত্র রিপিট করিনি: নওশাবা

বাংলা শোবিজের সুপরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ কাজী নওশাবা আহমেদ। একাধারে কাজ করছেন নাটক, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে। উপহার দিয়েছেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘ভুবন মাঝি’, ‘চন্দ্রাবতী কথা’, ‘কষাই’সহ বেশ কয়েকটি দর্শকপ্রিয় সিনেমা। দীর্ঘ ছয় বছর যুক্ত ছিলেন ছোটদের অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর’-এর ইকরি মিকরি চরিত্রে কণ্ঠদান ও পাপেটটি পরিচালনার সঙ্গে।

পাশাপাশি কাজ করেন প্রকৃতি নিয়ে। বহু প্রতিভাধর এ অভিনেত্রীর নতুন সিনেমা ‘অমানুষ’ মুক্তি পেয়েছে শুক্রবার। সেই সিনেমা ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন গণমাধ্যমে। তারই চুম্বক অংশ রইল আজকের লেখায়।


দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মুক্তি পেল ‘অমানুষ’। অনুভূতি কেমন?


খুবই টেনশনে আছি। কারণ একটা এক্সপেরিমেন্ট তো সবসময় আমি করি। সেই ‘ঢাকা অ্যাটাক’ থেকে শুরু করেছি। তারপর ‘আলগা নোঙ্গর’, ‘চন্দ্রাবতী কথা’, ‘স্বপ্নের বাড়ি’, ‘ভুবন মাঝি’, ‘কষাই’। এই সিনেমায় নতুন আরেকটা ক্যারেক্টর। একটার সঙ্গে আরেকটা ক্যারেক্টারের মিল নেই। কোনোটা ১৫৫০ সালের, কোনোটা ১৯৫৭ সালের। তাই অনুভূতি খুবই ভালো। কারণ, দর্শককে আরো একটি নতুন ক্যারেক্টার দিতে পেরেছি।


চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনে সিনেমাটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কতটুকু?


প্রত্যাশাটা হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করেছি। সবাই যে যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চটা দিয়েছি। খুবই কষ্ট করে যে যার চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এখন দর্শক প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমাটি দেখলেই আমাদের সেই চেষ্টা সফল হবে। এটা যে শুধু আমাদের সিনেমা তা নয়, আপনাদেরও সিনেমা।

‘তালাশ’ সিনেমাটা রিলিজ পেয়েছে। আমার মনে হয় সবার গল্পটা একই। তাই প্রত্যাশা হলো, দর্শক সহানুভূতির জায়গা থেকে আমাদের কষ্টটা বুঝবেন, ‘অমানুষ’ হলে গিয়ে দেখবেন। আশা করি কেউ নিরাশ হবেন না।


একই দিনে ‘তালাশ’ মুক্তি পেল। কোনো চাপ মনে হচ্ছে?


চাপ তো থাকেই। তবে এই চাপটা খুব ভালো চাপ। কারণ, সুস্থ প্রতিযোগিতা খুবই জরুরি। যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম, তখন এই চাপটা ছিল বলেই আমরা চেষ্টা করতাম যে, ভালো কিছু করব। সুস্থ প্রতিযোগিতা কিন্তু যেকোনো জিনিসের উন্নয়নের জন্য খুব জরুরি। তাই চাপ থাকা জরুরি এবং এই প্রতিযোগিতাটা ক্যারিয়ারের জন্যও খুব ভালো।


‘অমানুষ’-এ আপনার চরিত্রটি সম্পর্কে জানতে চাই


এখানে আমার চরিত্রটি একজন নারী ডাকাতের। নাম দিশা। ডাকাত যে রকম হয়, সে রকমই। খুবই বন্য সে। তার ভেতরে ভায়োলেন্স রয়েছে। তার একটা পেছনের গল্প রয়েছে, একটা ছোট্ট জার্নিও রয়েছে। নারী ডাকাত আমরা বাংলা সিনেমা একটা দুটো বোধহয় দেখেছিলাম।

আমি খুবই ভাগ্যবতী যে, আমার কাছে এ রকম একটা ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার এসেছে। তার মানে আমি ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এ আদুরে সিনথিয়ার ক্যারেক্টার করতে পারি, ‘চন্দ্রাবতী কথা’য় সোনাইও করতে পারি, আবার নারী ডাকাতের ক্যারেক্টারও করতে পারি। আমি খুবই কৃতজ্ঞ আমার ডিরেক্টরদের প্রতি, তারা আমাকে এমন চ্যালেঞ্জিং ক্যারেক্টরে ভাবেন। আমার দিকে চ্যালেঞ্জটা ছুঁড়ে দেন।


পরিচালকসহ গোটা টিমের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?


এই সিনেমার শুটিং যেহেতু লকডাউনের মধ্যে হয়েছে, একটা চাপা শঙ্কা, বাড়ির সবাই অসুস্থ, কেউ একটু হাঁচি দিলেই মনে হতো এই বুঝি করোনা, আমারও বুঝি করোনা হয়ে গেল। এর মাঝে আমাদের মুখে কোনো মাস্ক নেই, আমরা শটের সময় কাছাকাছি আসছি, শটের পরে একটু দূরে দূরে গিয়ে বসি।

সে সময় প্রচণ্ড গরম। চারপাশে একটু বাতাসও নেই। তার মধ্যে বুট পরে, ভোরবেলা ওঠে মেকআপ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। ওই অবস্থায় প্রখর রোদে পুড়েছি, বৃষ্টিতে ভিজেছি। গা দিয়ে কালো কালো, সে এক অদ্ভূত অভিজ্ঞতা।
আমার মেয়ে তো আমাকে দেখে চিনতই না। রীতিমতো আমাকে দেখে বলত, মাম্মা তুমি এ রকম হয়ে গেলে কেন।

তার বুঝতে সময় লাগছিল যে, এটা একটা চরিত্র। প্রথম দিকে তার মোটেই পছন্দ হচ্ছিল না। এখন সে খুবই এক্সসাইটেড। বলে, আমার মাম্মাম ডাকাতও হতে পারে। সব মিলিয়ে খুবই ইন্টারেস্টিং একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।


কতদিন পর নতুন সিনেমা মুক্তি পেল?


অনেক দিন পর আমার সিনেমা মুক্তি পেল। ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর পর ‘ভুবনমাঝি’, ‘চন্দ্রাবতী কথা’। প্রায় এক বছর পর নতুন সিনেমা মুক্তি পেল। এর আগে ‘চন্দ্রবতী কথা’ মুক্তি পেয়েছিল করোনার মধ্যে। সেটি হলে গিয়ে দেখার সুযোগ পাইনি। সে সময় দেশের বাইরে ছিলাম।

তাই আনন্দটাও উদযাপন করতে পারিনি। এবার ‘অমানুষ’-এর সময় দেশে আছি। খুবই মজা করে সবাই মিলে প্রচারণা চালিয়েছি। ইচ্ছা আছে, বিভিন্ন হলে গিয়ে দর্শকদের সঙ্গে সিনেমাটি দেখব, তাদের প্রতিক্রিয়া জানব।


দর্শকদের উদ্দেশ্যে আপনার বার্তা কী?


বরাবরের মতো নতুন একটি ক্যারেক্টার করেছি। চলচ্চিত্রে আমার কোনো ক্যারেক্টার এখন পর্যন্ত রিপিট হয়নি। দর্শকরা সেগুলো গ্রহণ করেছেন। আশা করি, এই চেষ্টাটাও তারা গ্রহণ করবেন, আমাকে উৎসাহ দেবেন। সঠিক সমালোচনা করবেন। সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে, বাংলা সিনেমার সঙ্গে থাকুন, হলে গিয়ে আমাদের চেষ্টাটুকু দেখুন। যদি অপছন্দ হয় সেটা বলুন, কী ভালো আছে সেটাও বলুন। তাহলে আমরা সামনে আরো ভালো কাজ করতে উৎসাহ পাব।


ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে প্রাপ্তি কতটুকু?


পৃথিবীর সবচেয়ে যে দামি অ্যাক্টর, তারও স্ট্রাগল রয়েছে। আমারো আছে। ভীষণ ধরনের একটি চড়াই উৎরাই রয়েছে। অনেক গ্যাপ রয়েছে। প্রাপ্তি হচ্ছে এটাই যে, আমার কোটি কোটি ফলোয়ার নেই, একটা ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট নেই, ফেসবুকে একটা পেজও নেই। তার পরও আমার একটা নির্দিষ্ট ধরনের দর্শক রয়েছে।

যারা শুরু থেকে আজ অবধি আমাকে পছন্দ করেন। এমন না যে, তারা অথেন্টিক্যালি আমাকে ফলো করেন, আমার ভালো কাজে উৎসাহ দেন, আমার ভুলগুলো শুধরে দেন। তবে তারা আমাকে কখনো আঘাত করেন না।
এত যুদ্ধের পর আজকে আমি ফিরে এসেছি শুধু সেই দর্শকদের জন্য।

তাদের এসএমএস, চিঠি, বারবার বলা যে, কেন আপনি অভিনয় করছেন না, অভিনয়ে ফিরে আসেন। যখন পুরো পৃথিবী আমাকে বলেছে, তোমার আর ফেরার দরকার নেই, সেখানে আমার দর্শক আমাকে বলেছে, আপনি ফিরে আসেন। একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এটাই।


সামনে ঈদ। এই উৎসবকে ঘিরে কোনো কাজ করছেন?


ঈদকে মাথায় রেখে আমাদের অনুদানের একটা সিনেমা আসার কথা। নাম ‘ছায়াবৃক্ষ’। তবে সেটির ঘোষণা এখনো হয়নি। তাই আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। এর বাইরে গল্প পছন্দ হলে হয়তো ঈদের জন্য দুই-তিনটা নাটক করব। সেগুলো ঈদে প্রচারও হবে। এছাড়া সিনেমার কথাও চলছে। দুটি শর্টফিল্ম করেছি। তবে এগুলো ঈদে প্রচারিত হবে কিনা বলতে পারব না।


ক্যারিয়ারের একটা বাজে অভিজ্ঞতা বলুন, যা এখনো কষ্ট দেয়।


বাজে অভিজ্ঞতা আমি মনেই রাখি না। মনে রাখলে তো ওঠে দাঁড়ানো যাবে না। তবে বাজে অভিজ্ঞতা থেকে যে শিক্ষাটা আমি নিই, সেটা আমার অর্জন এবং সেটা আমি কখনো ভুলে যাই না। তবে বাজে মনে রাখিনি। মনে রাখিনি বললেও আবার ভুল হবে, আসলে মনে করতে চাই না।

তাই ওটা নিয়ে আলাপ করারও কিছু নেই। বাজে অভিজ্ঞতা থেকে যে শিক্ষাটা আমার অর্জন হয়েছে, সেটাকে কাজে লাগাতে চাই। সামনে এগিয়ে যেতে চাই।