অ্যান্টিগা টেস্টের নিয়ন্ত্রণ প্রথম দিনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে ছিল। দ্বিতীয় দিনে তার কোনো পরিবর্তন আসেনি। মাঠে বোলার-ফিল্ডার, ব্যাটারদের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে। প্রথম ইনিংসে নিজেদের করা ১০৩ রানের জবাবে বোলারদের কল্যাণে স্বাগতিক দলকে ২৬৫ রানে বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ দুই উইকেট হারানোয় নিয়ন্ত্রণটা স্বাগতিক দলের হাতে রয়ে গেছে। ১৬২ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে ৫০ রান করতেই দুই উইকেট হারিয়েছে। ফলে ১১২ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশকে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করানোর জন্য বাংলাদেশের হাতে রয়েছে ৮ উইকেট।
অ্যান্টিগার এ টেস্টের পিচ ব্যাটারদের জন্য দুঃসহ এক স্মৃতি হয়ে আছে। বোলারদের জন্য স্বর্গ। বোলাররা ব্যাটারদের দিকে চোখ রাঙাচ্ছে। তার ফলে ব্যাটারদের রানের জন্য ভয়াবহ লড়াই করতে হচ্ছে। সফরকারী ব্যাটাররা যেমন স্বাগতিক ব্যাটারাও তা ভালোভাবে টের পাচ্ছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাথওয়েট ভালোভাবেই তা উপলদ্ধি করেছেন। সে সঙ্গে তার হতাশাটাও বেড়েছে। দলের সংগ্রহকে তিনি সমৃদ্ধ করে চলেছিলেন। দেখছিলেন সেঞ্চুরির স্বপ্ন। কিন্তু একটুর জন্য তার সে স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয়নি। খালেদ মাহমুদের বলে এলবিডব্লিুউর শিকার হয়ে যখন ফিরেছেন তখন তার রান ৯৪। অথচ এই রান করতে তাকে ২৬৮ বলের মোকাবেলা করতে হয়েছে। খেলতে হয়েছে সাড়ে ছয় ঘন্টারও বেশি সময়। দলের তো বটেই ব্রাথওয়েটও ওভার প্রতি দুইরান করে জমা করেছেন স্কোরবোর্ডে।
বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা দুই। ব্রাথওয়েটের পাশাপাশি জার্মেই ব্লাকউড ৬৩ রান করেছেন। মূলত এই দুইজনের ব্যাটের ওপর ভর করেই ইনিংস সমৃদ্ধ হয়েছে। তবে গুডাকেশ মতিয়ার কথা না বললে তার প্রতি অবিচার হবে। যেখানে অন্যদের এক রান করতে প্রায় তিন বল খেলতে হয়েছে সেখানে গুডাকেশ ছিলেন ব্যতিক্রম। বলের তুলনায় তার রান বেশি। ২১ বলে ২৩ রান করেছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্বল্প রানে বেঁধে রাখার কাজটা করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। একে একে চার উইকেট তুলে নিয়েছেন। তার চমৎকার বোলিংয়ের কল্যাণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিডল অর্ডার ব্যাটাররা দাঁড়াতেই পারেনি। এ সময় মাত্র ১৫ রানে চার উইকেট হারায় স্বাগতিক দল। কাইল মায়ার্স মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে মাত্র ৭ রান করেছেন। জোসুয়া ডি সিলভা মিরাজের বলে নুরুল হাসানের হাতে ধরা পড়ার আগে এক রান করেছেন। একই রসায়নে আউট হয়েছেন পরের ব্যাটার আলঝারি জোসেফ। ১৫ বল খেললেও রানের খাতা খোলা হয়নি তার। এ সময়ে মিরাজের সঙ্গে হাত মেলান এবাদত হোসেন। কেমার রোচকে বিনা রানে ফেরত পাঠান তিনি। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপর দিয়ে এ সময় একটা ঝড় বয়ে যায়। সে ঝড়ের পর আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দাঁড়াতে পারেনি। শুধুমাত্র গুডাকেশ মতিয়া ছিলেন ব্যতিক্রম।
মিরাজই ছিলেন সফল বোলার। তার শিকার চার। খালেদ আহমেদ ও এবাদত হোসেন দুটো করে উইকেট পেয়েছেন। উইকেট শিকার তালিকায় নাম আছে মুস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসানের। দুটো করে উইকেট তাদের।
১৬২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। শুরুটা স্বস্তিদায়ক থাকলেও শেষ পর্যন্ত অস্বস্তিই আবার ফিরেছে। কেননা দুই উইকেট হারিয়েছে। দলীয় মাত্র দুই রানের ব্যবধানে তারা ফিরে যাওয়ায় আবারো ব্যাটিং লাইন নিয়ে দুঃশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। তামিম ইকবাল ২২ রান করেছেন। দিনের শেষ সময় দেখে মেহেদি হাসান মিরাজ ক্রিজে এসেছিলেন। কিন্তু দলের উদ্দেশ্যটা পূরণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। মাত্র ৬ বল খেলে ফিরে যান তিনি। ফলে মাহমুদুল হাসানের সঙ্গী হয়েছেন নাজমুল হাসান শান্ত। তারা ৮.২ ওভার খেলে দিন শেষে স্কোরবোর্ডে ১৫ রান যোগ করেন। মাহমুদুল হাসান ৬০ বলে ১৮ রানে এবং নাজমুল হোসেন ৮ রানে অপরাজিত।