বন্যায় বর্তমানে সিলেটসহ দেশের কয়েকটি জেলা প্লাবিত হয়েছে। যার কারণে সেখানকার জনজীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বন্যার সময় পানিবাহিত রোগগুলো বেশি হয়। কারণ তখন পানির উৎসগুলো সংক্রমিত হয়। নলকূপ ডুবে যায়। বিশুদ্ধ পানির অভাব, দূষিত পানির কারণে এ রকম হয়।
এ ছাড়া বন্যার সময় ময়লা-আবর্জনা, মানুষ ও পশুপাখির মলমূত্র এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা একাকার হয়ে এসব উৎস থেকে জীবাণু বন্যার পানিতে মিশে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে বন্যায় সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার বেড়ে যায়।
বন্যায় সৃষ্ট রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে কি কি করবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক-
>> বন্যার পানি পান করবেন না।
>> পানি আধা ঘণ্টা ফুটিয়ে পান করুন। পানি ফুটানো সম্ভব না হলে পানি বিশুষ্ক করে পান করুন।
>> পানি বিশুদ্ধ করার জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি (হ্যালোজেন ট্যাবলেট), ফিটকারী ব্যবহার করতে পারেন।
>> ১৫ মিলিগ্রামের ২টি পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি (হ্যালোজেন ট্যাবলেট) ১০ লিটার (১ কলস) পানিতে মিশিয়ে আধা ঘণ্টা পর পান করুন।
>> বন্যাপরবর্তী প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হলো ডায়রিয়া। ডায়রিয়া দেখা দিলেই পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন খেতে হবে। যদি পাতলা পায়খানা ও বমির মাত্রা বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হবে। ডায়রিয়া হলে রোগীকে স্বাভাবিক খাবার দিন। আক্রান্ত শিশুকে মায়ের দুধ অবশ্যই খাওয়াতে হবে।
>> বন্যাজনিত যে কোনো রোগে (যেমন ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি, চর্মরোগ) মেডিকেল টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
>> অসুস্থ, আঘাতপ্রাপ্ত, সাপে কাটা ও পানিতে ডোবা রোগীকে উদ্ধার করে মেডিকেল টিমের সহায়তা চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
>> বন্যাপরবর্তীতে বাড়িঘর, পয়োনিষ্কাশনসহ বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করুন। যে কোনো মরা, পচা জীবজন্তু দেখামাত্রই মাটিতে পুঁতে ফেলুন।
>> বন্যায় নিরাপদ পয়োপ্রণালির অভাব ঘটে। এ সময়ে কৃমির ওষুধ খেতে হয়। কেননা নিরাপদ পয়োনিষ্কাশনের অভাবে কৃমির সংক্রমণ বেড়ে যায়। যেখানে-সেখানে পায়খানা না করে একটি নির্দিষ্ট নিরাপদ পায়খানার ব্যবস্থা করতে হবে।
>> খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। খাবার যাতে পচে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
>> বন্যায় চর্মরোগ হতে পারে। যতটা সম্ভব শরীর শুকনো রাখতে হবে। একই গামছা বা তোয়ালে অনেক জন ব্যবহার করবেন না।
>> বন্যায় মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। ব্যাপক মশা নিধনের ব্যবস্থা না করলে ম্যালেরিয়া হতে পারে।
দুর্ঘটনা এড়াতে
বন্যার কারণে যেমন রোগের বিস্তার বৃদ্ধি পায়, তেমনি দেখা দেয় আকস্মিক কিছু দুর্ঘটনা। কেবল একটু সতর্কতার মাধ্যমে এসব দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
বন্যায় সাধারণত যেসব ঝুঁকি বাড়ে
>> বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি
>> পানিতে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি
>> সাপ ও পোকামাকড়ের কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটে।
পানিতে ডুবে যাওয়া ও সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যার সময় শিশুদের প্রতি বাড়তি নজর রাখতে হবে। এ সময় শিশুদের চোখের আড়াল করা যাবে না।
অভিভাবকদের অসচেতনতার দরুন বন্যার পানি থেকে শিশুদের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। একটু বাড়তি নজর রাখলেই এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে শিশুরা রক্ষা পেতে পারে।