logo
আপডেট : ১৮ জুন, ২০২২ ১৯:১৩
বন্যার কারণ- অতিবৃষ্টি, অপরিকল্পিত বসত বাড়ি, সড়ক
নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যার কারণ- অতিবৃষ্টি, অপরিকল্পিত বসত বাড়ি, সড়ক

ভারতের আসামও মেঘালয় রাজ্যে অতিবৃষ্টির বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার প্রধান কারণ হিসেব দেখছে গবেষকরা।

গণমাধ্যমে দেয়া মতামতে তারা দাবি করছেন, হঠাৎ উজান থেকে আসা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি নদী হয়ে বের হবার পথ না পেয়ে এ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত নগরায়ন, ঘর-বাড়ি, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে খাল-বিল বরাট করে রাস্তা তৈরিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। আর ২০০ মিলিমিটার টানা বৃষ্টির পরের তিনদিন বিরতি না থাকলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া সাভাবিক। তবে চরম বিপর্যয় পর্যায়ে নয়।

বিবিসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত তিনদিন থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জি অঞ্চলে যে পরিমাণ বৃষ্টির হয়েছে এর আগে ১৯৭৪ ও ১৯৯৫ সালে হয়েছিল। ওই দুই সালে টানা তিনদিন যথাক্রমে-২৭৬০ ও ২৭৯৮ মিলিমিটর বৃষ্টিপাত হয়েছিল। যা গত তিনদিনে রেকড করা হয়েছে ২৪৮৭ মিলিমিটার। যদিও এবারের বৃষ্টির পরিমানের দিক থেকে পূর্ববর্তী দুই বছরের তুলনায় কম। আবহাওয়া দপ্তর বলছে, অঞ্চলটিতে এখনও বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

আর ভারতের চেরাপুঞ্জি অঞ্চলে অতিমাত্রায় পাথর উত্তোলনের ফলে পানির সঙ্গে ভেসে আসা পলি এবং পলিথিন ও গৃহস্থলি বর্জের কারণে নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। ফলে ভারি বৃষ্টিপাতে পানি প্রবাহে এবং গতিপথ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বন্যা দেখা দিচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন- ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টির পর যদি তিন দিন বিরতি পাওয়া যায়, তবে এ পানি নেমে চলে যেত। বর্তমানের বৃষ্টির পরিমাণ এর কয়েকগুন বেশি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের মতে, গত ১৫ থেকে ১৭ জুন এই তিন দিন চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ২ হাজার ৪৫৭ দশমিক ২ মিলিমিটার। তিন দিনের সমন্বিত বৃষ্টির হিসাবে এবারকার বৃষ্টি তৃতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম হোক বা তৃতীয় হোক, এটা একটা রেকর্ড। আর গত এক সপ্তাহে চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি হয়েছে, ১২ জুন ৩৫৪, ১৩ জুন ২৯৩, ১৪ জুন ৬২ দশমিক ৬, ১৫ জুন ৮১১ দশমিক ৬, ১৬ জুন ৬৭৪ এবং ১৭ জুন ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

শনিবার দুপর পর্যন্ত ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ১২ জুন থেকে আজ পর্যন্ত ৩ হাজার ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টির পানি যাবে কোথায়?

বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে- বাংলাদেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোয় হঠাৎ শুরু হওয়া বন্যার পেছনে অতিবৃষ্টির বাইরে আরো কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, জেলাগুলোতে বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অপরিকল্পিত বা পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে এমন আড়া-আড়ি রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ জেলার বাসিন্দারা বলছেন, বহু বছরের মধ্যে তারা এতো মারাত্মক বন্যার মুখোমুখি হননি। সিলেট অঞ্চলে ৩৫ লাখের মত মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যেই সুনামগঞ্জের সঙ্গে দেশের অন্য অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ এবং নেত্রকোনার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ দেশের আরো অন্তত ১৭টি জেলায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

এদিকে গত জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাওর অঞ্চলকে উড়াল সড়ক তৈরি করার জন্য। যাতে বর্ষা সময়ে বন্যা পরিস্থিতি সহজে মোকাবেলা করা যায়।