বিমান ওঠানামা বন্ধের পর এবার সিলেট রেল স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে ঢাকার সঙ্গে সিলেটের সারাদেশের রেল যোগাযোগও বন্ধ হয়েছে। ইতোমধ্যে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে সুনামগঞ্জ। সিলেট-সুনামগঞ্জের সঙ্গে প্রায় সব উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
দুই জেলাই এখন বিদ্যুৎহীন। মোবাইল নেটওয়ার্কও বেশিরভাগ এলাকায় কাজ করছে না। অনেকের মোবাইলে চার্জ শেষ হয়ে গেছে। তাই বিপাকে পড়া লোকজন উদ্ধারের জন্য সাহায্য পর্যন্ত চাইতে পারছেন না। যোগাযোগ করতে পারছেন না স্বজনদের সঙ্গেও। সব মিলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পুরো এলাকা। পরিণত হয়েছে ভূতুড়ে নগরীতে।
বিদ্যুৎ না থাকায় বেড়েছে মোমবাতির কদর। যারা কোন রকম ঘর থেকে বের হতে পারছেন তাদের কেউ কেউ কেরোসিন সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন। কারো ঘরে জ্বলছে কুপি বাতি বা হেরিকেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখার চেষ্টা করছেন তারা।
এজন্য সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। মূলত সবকটি উপকেন্দ্রে বন্যার পানি ওঠায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধ করতে হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে সুনামগঞ্জের মানুষ।
ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় মুঠোফোন নেটওয়ার্ক কাজ করছে না। চারদিকে শুধু পানিবন্দী মানুষের আহাজারি আর কান্নার রোল। উপজেলার খাজাঞ্চি, লামাকাজী, রামপাশা ইউনিয়নের অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে অনেক মানুষ আটকা পড়েছে।
শনিবার সকালে ব্যাপক হতাশা নিয়ে এসব কথা বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সিলেট-২ আসনের গণফোরামের এই সংসদ সদস্য বলেন, গতকাল শুক্রবার রাতে এলাকার এমন দুরবস্থার খবর শুনে সড়ক পথে রওনা দিয়েছিলেন। রাতেই সিলেট পৌঁছে শুকনা খাবারসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করেন।
তবে সকাল থেকে উপজেলার কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। সহায়তার জন্য দুটি গাড়িতে প্রায় চার হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার নিয়ে রওনা দিলেও পানি বেশি থাকায় সেগুলো বিশ্বনাথে পৌঁছাতে পারছে না। তিনি নিজেও বিভিন্ন এলাকা হয়ে বিশ্বনাথে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমি আজ সিলেট থেকে বিশ্বনাথ যাওয়ার তিনটি পথ দিয়ে রওনা দিয়েছিলাম। কিন্তু মাঝপথ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে না পারছি সেখানে যেতে, না পারছি সিলেটে অবস্থান করতে। বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
মোকাব্বির খান আরও বলেন, গতকাল এলাকার মানুষের কাছে ফোন করেছিলাম। বন্যায় আটকে পড়া মানুষের আহাজারি শুনতে পেয়ে আমি দ্রুত এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করছি। তাদের উদ্ধার করতে নেই কোনো নৌকার ব্যবস্থা।
তবে গতকাল বিকেলে সিলেটের জেলা প্রশাসক আমাকে আশ্বস্ত করার পরও এখনো প্রশাসন উদ্ধারকাজে নামেনি। এখন আমার নির্বাচনী এলাকার চারদিকে শুধু কান্না আর বাঁচার জন্য আর্তনাদ। জেলা প্রশাসক বলেছিলেন সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহানের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনা খাবার এবং যেখানে রান্না করার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যেদিক থেকে খবর পাচ্ছি, সেদিকে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত থাকা দল পাঠাচ্ছি।’
সিলেটে গত বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সেসব এলাকায় এখন মোমবাতির আলোতেই ভরসা। কিন্তু এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায়ও মোমবাতির সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া বন্যার পানিতে কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ায় সেগুলো বন্ধ রয়েছে। এতে সংকট আরও বেড়েছে। এদিকে সিলেটের কিছু এলাকায় শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল থাকলেও পরবর্তী সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর পর থেকে আরও সংকেট পড়েছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মোমবাতি ও দেশলাই সংগ্রহ করেছে অনেকে।
রিকাবীবাজার এলাকার আল মক্কা স্টোর নামের মুদিদোকানের ব্যবসায়ী মো. জসিম আহমদ বলেন, এখন মোমবাতি ও দেশলাইয়ের চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেকে দুই থেকে তিন প্যাকেট করে মোমবাতি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে দাম বাড়েনি বলে জানান তিনি।