হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প এলাকায় হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, দোকানসহ নির্মিত সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা ৬০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা আপাতত বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের করা আবেদনে আদালত কোনো স্থগিতাদেশ না দিয়ে আগামী ২৭ জুন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করে আদেশ দেন।
হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প এলাকায় হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, দোকানসহ নির্মিত সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্ট গতবছর ৩০ জুন রায় দেন। তবে এ বিষয়ে ৫৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ লিখিত রায় গত ২৪ মে প্রকাশিত হয়। রায়ে প্রকল্প এলাকায় ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস চলাচল বন্ধের সুপারিশ করা হয়।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের(এইচআরপিবি) পক্ষে অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈ’র করা এক রিট আবেদনে এ রায় দেন হাইকোর্ট। আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ও অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল।
রায়ের নির্দেশনায় বলা হয়, তুরাগ নদীর রায়ের নীতি অনুসারে ঢাকার হাতিরঝিলকে জনগণের সম্পত্তি, তথা জাতীয় সম্পত্তি। ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্পে হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ ও নির্মান অবৈধ। প্রকল্প এলাকায় হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, দোকানসহ বাণিজ্যিক স্থাপনা নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হলো। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সকল বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ প্রদান করা হলো। রায়ে ৯দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।
রায়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে-‘(১) প্রকল্পটি সংরক্ষন, উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তত্বাবধানে পরিচালনা করা। (২) প্রকল্পের স্থায়ী পরামর্শক হিসেবে বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগ এবং সেনাবাহিনীর ২৪তম ব্রিগেডকে যৌথভাবে পরামর্শক নিয়োগ করা। (৩) প্রকল্প এলাকায় জনসাধারনের জন্য মাটির নীচে টয়লেট/ওয়াশরুম তৈরি করা। (৪) প্রকল্প এলাকায় নির্ধারিত দূরত্বে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। (৫) পায়ে চলা, সাইকেল চালান এবং প্রতিবন্ধিদের জন্য আলাদা চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহন করা। (৬) প্রকল্পের এলাকার লেকে মাছের অভযারন্য তৈরি করা। এবং (৭) বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে প্রকল্পের নামকরন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। (৮) লেকে সব ধরনের যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং (৯) সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রেভিনিউ (রাজস্ব) বাজেট থেকে বরাদ্দ করা।
হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হাতিরঝিল বেগুনবাড়ি প্রকল্পের নকশাবহির্ভূত স্থাপনার নির্মাণ বন্ধে এবং লে-আউট প্ল্যান অনুসারে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প রক্ষায় কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দেন হাইকোর্ট।