logo
আপডেট : ১৯ জুন, ২০২২ ১৭:৫০
নাজুক ব্যাটিংয়ে নাখোশ ডমিঙ্গো
ক্রীড়া প্রতিবেদক

নাজুক ব্যাটিংয়ে নাখোশ ডমিঙ্গো

প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৩ রানে অলআউট। ৬ ব্যাটার পেয়েছেন শূন্য। সর্বোচ্চ ৫১ রানের ইনিংস অধিনায়ক সাকিবের ব্যাটে। ২৯ রান ওপেনার তামিমের। বাকিদের রান না বলাই ভালো। দ্বিতীয় ইনিংসে ডাকের সংখ্যা নেই একটিও। তাই বলে রান আহামরি হয়নি। সম্মিলিত প্রচেষ্টার সঙ্গে সপ্তম উইকেটে সাকিব ও সোহানের ১২৩ রান অবশ্য বাঁচিয়েছে ইনিংস হার থেকে। এবার ২৪৫ রানে অলআউট। সব মিলিয়েও অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং মন ভরাতে পারেনি সবাইকে। টাইগার ব্যাটারদের নাজুক ব্যাটিংয়ে তাই নাখোশ বাংলাদেশ দলের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। তবে বোলারদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট তিনি।

টেস্টের প্রথম দিনে প্রথম সেশনে ৪৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে খাদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর সেখান থেকে আর উদ্ধার হয়নি দল। প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া দল কী আর ম্যাচে টিকতে পারে! বোলাররা তবু চেষ্টা করেছেন। ক্রমেই সহজ হয়ে আসা উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস আটকে রাখে তারা ২৬৫ রানে। ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও। টপ ও মিডলঅর্ডার ব্যর্থ এবারো ১০৯ রানের মধ্যে পড়েছে ৬ উইকেট। এরপর সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসান সোহানের ১২৩ রানের জুটিতে কিছুটা মুখ রক্ষা হয়। জয়ের জন্য শেষ ইনিংসে উইন্ডিজের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৮৪ রান। এ পুঁজি নিয়েও বোলাররা লড়াই কম করেনি। সৈয়দ খালেদ আহমেদের দারুণ বোলিংয়ে ৯ রানে ৩ উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা। পরে অবশ্য তারা দিন শেষ করে ৩ উইকেটে ৪৯ রানে। জয়ের জন্য চতুর্থ দিনে তাদের প্রয়োজন স্রেফ আর ৩৫ রান।

তৃতীয় দিন শেষে বিশ্লেষণে বাংলাদেশের কোচের কণ্ঠেও উঠে এলো ব্যাটিং নিয়ে হতাশা। প্রথম ইনিংসে ৬ জন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন শূন্য রানে। তামিম ইকবালের মতো অভিজ্ঞ ওপেনার দুই ইনিংসেই থিতু হওয়ার পর আউট হয়েছেন আলগা শটে। বড় ভরসা লিটন দাস দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছেন বাজে শট, একই ইনিংসে দেড়শ বল খেলার পর উইকেট বিলিয়ে আসেন তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।

টানা ব্যর্থতার চক্রে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হকের ব্যাট কথা বলেনি এ টেস্টেও। সব মিলিয়ে ব্যাটিংয়ে দল আত্মবিশ^াসের অভাবে ভুগেছ বলে মনে করেন রাসেল ডমিঙ্গো। তিনি বলেন, ‘(ব্যাটিং) মোটেও ভালো নয়, দুই ইনিংসেই। খুব বেশি আলগা আউট, ব্যাটিংয়ে বাজে সিদ্ধান্ত খুব বেশি। প্রথম ইনিংসে মোটে ১০৩ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৫-এর বেশি করতেই হবে। এটাই মূল কথা, আলগা আউট অনেক বেশিই হয়ে গেছে।’

‘ওদের সবার আত্মবিশ^াস এখন তলানিতে। আমাদের কয়েকজন বড় ক্রিকেটার, মুমিনুল, শান্ত ওদের কয়েকজনের আত্মবিশ^াস এখন তলানিতে। ক্রিকেটে আত্মবিশ^াস অনেক বড় ব্যাপার। এ মুহূর্তে ব্যাটিং লাইনআপের আত্মবিশ^াস নেই খুব একটা।’ বোলিং দুই ইনিংসেই ছিল যথেষ্ট গোছানো। প্রথম ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ নেন ৪ উইকেট, এবাদত হোসেন ও খালেদ নেন দুটি করে। খালেদ দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনটি উইকেট নিয়ে ফেলেছেন। বোলারদের প্রচেষ্টায় কোনো ঘাটতি দেখেন না কোচ, ‘বোলাররা দুই ইনিংসেই অসাধারণ বল করেছে। প্রথম ইনিংসে যেভাবে বোলিং করেছে, এতটা ভালো কমই দেখেছি। এ পিচে ২৬০ রানে ওদের আটকে রাখা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। বোলারদের পারফরম্যান্সে তাই আমি গর্বিত।’ টেস্টের তৃতীয় দিন বিকেলে দুর্দান্ত বোলিং করেন খালেদ। ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে এখনো পর্যন্ত তিনিই দলের সফলতম বোলার। গত মার্চ-এপ্রিলে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও তিনি দারুণ বোলিং করেন। ডারবান টেস্টের প্রথম ইনিংসে নেন ৪ উইকেট। পরের টেস্টে পোর্ট এলিজাবেথে ৪ উইকেট নেন ম্যাচে। তবে এ দুই সফরের মাঝে দেশের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে দুই টেস্টে তিনি ছিলেন উইকেটশূন্য।

শুধু উইকেট পাননি বলেই নয়, লঙ্কানদের বিপক্ষে দুই টেস্টেই তিনি বেশ এলোমেলো বোলিং করেন। ধারাবাহিকভাবে ভালো জায়গায় বল রাখতে পারেননি, জুটি গড়ে বোলিং করতে পারেননি। বরং বারবার আলগা বল করে তিনি সরিয়ে দেন চাপ। তাতে চরমভাবে ভুগতে হয় দলকে। অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি ভালো বোলিং করলেও মাঝেমধ্যেই আলগা ডেলিভারি করে সহজ করে দিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের কাজ। উন্নতির পথে থাকলেও তাই খালেদকে আরো অনেক কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ডমিঙ্গো বলেন, ‘সে ৩ উইকেট নিয়েছে বটে (শেষ ইনিংসে), তবে এখনো অনেক উন্নতি করতে হবে। আরো ধারাবাহিক হতে হবে তাকে। কখনো কখনো এমন হতে পরে যে সে ভালো বল করছে, কিন্তু উইকেট পাচ্ছে না। কখনো কখনো ভালো বোলিং না করেও উইকেট পাবে। এটাই খেলার ধরন। দ্বিতীয় ইনিংসে সে ভালো বোলিং করেছে এবং কয়েকটি উইকেট নিয়েছে। তবে তাকে এখনো অনেক উন্নতি করতে হবে, এটায় কোনো সংশয় নেই।’