logo
আপডেট : ২০ জুন, ২০২২ ১২:০৭
বন্যা পরিস্থিতি
পানি নামতে দেরি হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে
#কারণ খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন
শাহীন রহমান

পানি নামতে দেরি হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে

পানি নামতে দেরি হওয়াতে পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। ছবিঃ সিলেটের সুনামগঞ্জ এলাকাথেকে তোলা।

পুরো সিলেট বিভাগ বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। বানভাসিদের নিদারুণ কষ্ট বাড়িয়ে তুলছে অব্যাহত বৃষ্টিপাত। গত ২৪ ঘণ্টায়ও সিলেট অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পানি যত দ্রুত নেমে যাওয়ার কথা, সেভাবে নামছে না। সময় বেশি নিচ্ছে। তবে এর কারণ খতিয়ে দেখতে পানিসম্পদ মন্ত্রনালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি দু-একদিনের মধ্যে উন্নতির হওয়ার সম্ভবনা নেই।

একমাত্র বৃষ্টির কারণেই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এছাড়া পানি নামতে সময় বেশি নিচ্ছে। এর কারণ খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

এদিকে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেও বৃষ্টি যেন থামছে চাচ্ছে না। এক সপ্তাহ আগ থেকে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও আসাম, মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শনিবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিলেট সুনামগঞ্জে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে।

এই সময়ের মধ্যে সিলেটের জাফলংয়ে ৩১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেট দক্ষিণবাগে ২০৫ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ১২৯ মিমি,  সিলেটে ৩১৫ মিমি, জকিগঞ্জে ১৯৩ মিমি, শেওলা সিলেটে ১১৫ মিলিমিটার, সিলেটের লালখালে ৩১১ মিলি, লাটু সিলেট ১৭৫ মিলিমিটার এবং কানাইঘাটে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

একই সঙ্গে উজানেও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। ২৪ ঘণ্টায় আসামে বৃষ্টি হয়েছে ২৮৯ মিলিমিটার, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ২৫৩ মিলিমিটার এবং মিজোরামে ৮৫ মিলিমিটার।

এই পানি দ্রুত নেমে আসছে। এ কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, দু-একদিনের মধ্যে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আশা নেই। বরং এই সময়ের মধ্যে আরো অবনতি হতে পারে। তারা জানায়, বৃষ্টিপাত থেকে গেলে বন্যার পানি নামতে শুরু করবে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ফলে নতুন করে আরো কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ  লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। নতুন করে প্লাবিত হতে পারে টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চল। ৯টি নদীর পানি ১৮ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া আরো জানান, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গের স্থানসমূহে মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে।

ফলে ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সকল প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।

এই সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। একই সময়ে তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার কাছাকাছি অথবা ওপরে অবস্থান করতে পারে।

লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে বন্যার পাশাপাশি ভয়াবহ বৃষ্টির কারণে অসহায় হয়ে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা। বন্যা ও বৃষ্টির কারণে এখনো অনেকেই নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে পারেননি।

বৃষ্টির পানি বাড়ায় সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং সিলেটের ৬৫ শতাংশের বেশি এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য। ১৩টি জেলায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী আরফিুজ্জামান ভুঁইয়া

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানায়, চলতি সপ্তাহজুড়েই বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সপ্তাহজুড়েই সিলেটসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে বৃষ্টি হবে।

তবে থেমে থেমে হবে।  আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।