অর্থনৈতিক কারণে শ্রীলঙ্কার অবস্থা বেশ নাজুক। এমন পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটি মাঠে গড়াবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। সে শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ মাঠে গড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, লঙ্কান ক্রিকেটাররা তাদের কথা রাখছে। দেশবাসীকে ক্রিকেটের মাধ্যমে কিছুটা আনন্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী তারা আনন্দ দিয়ে চলেছেন। রোববার অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে তারা জয় পেয়েছে। এ জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে তারা তৃতীয় ম্যাচ শেষে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো।
কলম্বোতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ম্যাচে ৬ উইকেটে জয় পেয়েছে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। আগে ব্যাট হাতে নাম অস্ট্রেলিয়ার করা ২৯১ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা ৪৮.৩ ওভাওে ৪ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয়। স্বাগতিক দলের এ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন পাথুম নিশাঙ্কা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দলকে জয় এনে দেন তিনি। পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের দেখা। ১২৩ বলে তিনি তিন অঙ্কেও রানে পৌঁছান। এ সেঞ্চুরির মাঝ দিয়ে পাথুম নিশাঙ্কা রেকর্ডের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো লঙ্কান ব্যাটারের এটা ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগে এ রেকর্ডের কীর্তি ছিল শ্রীলঙ্কার সাবেক ওপেনার সনাথ জয়সুরিয়ার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার সেরা ইনিংস ছিল ১২২ রানের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিকও ছিলেন তিনি। এ ইনিংসেটি ছিল ১১৪ রানের।
ব্যাট হাতে এ লড়াইয়ে তিনি সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন কুশাল মেন্ডিসকে। চমৎকার ব্যাটিং করেছেন দুইজনে। দলীয় ৪২ রানে ওপেনার নিরোশান ডিকভেলা আউট হওয়ার পর নিশাঙ্কা ও কুশাল মেন্ডিস জুটি বাঁধেন। ১৭০ রানের পার্টনারশিপ তাদের। তবে দুর্ভাগ্য মেন্ডিসের। শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থাকতে পারেননি। আহত হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ম্যাথিউ কুহনেমানের বলে আহত হয়ে যখন তিনি মাঠ ছাড়েন তখন তার রান ছিল ৮৭। মাত্র ৮৫ বালে তিনি এ রান করেছিলেন। ইনিংসটি সমৃদ্ধ করতে আটটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন মেন্ডিস।
দল জয়ের বন্দরে পৌঁছানো পর্যন্ত পাথুম নিশাঙ্কাও ক্রিজে থাকতে পারেননি। তবে তিনি যেখানে দলকে পৌঁছে দিয়েছিলেন সেখান থেকে জয়টা ছিল হাত ছোঁয়া দূরত্বে। দলীয় ২৮৪ রানে তিনি রিচার্ডসনের বলে ওয়ার্নারের হাতে ধরা পড়েন। এ সময় তার রান ছিল ১৩৭। ১৪৭ বলে এ রান করতে তিনি এগারটি বাউন্ডারির পাশাপাশি দুটো ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন। স্থানীয় এ ব্যাটারের সামনে অস্ট্রেলিয়ার কোনো বোলারই সুবিধা করতে পারেননি। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু রিচার্ডসন। ৯ ওভারে ৩৯ রানে তিনি দুই উইকেট শিকার করেন। অন্যদের বোলিং ছিল যথেষ্ঠ খরুচে। রিচার্ডসন যেখানে ওভার প্রতি ৪.৩৩ রান দিয়েছেন সেখানে অন্যদের ওবার প্রতি খরচ ছিল ৬ থেকে ৯ রান।
অস্ট্রেলিয়া টস জয়ের পর প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শুরুটা মোটেও স্বস্তিদায়ক ছিল না তাদের। শুরুতেই ডেভিড ওয়ার্নার মাত্র ৯ রানে আউট হয়ে যাওয়ায় দল বিপদের মুখে পড়ে। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ মিচেল মার্শকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করলেও সফল হননি। সফলতা আসেনি মার্নাস লাবুশেন যোগ দেওয়ার পর। তবে তার ব্যক্তিগত ইনিংসটা যথেষ্ঠ সমৃদ্ধ ছিল। যদিও তার জন্য যথেষ্ঠ বেশি বল খরচ করতে হয়েছে। ৮৫ বলে ৬২ রান করেন তিনি। মূলত ১০ ওভার থেকে ২০ ওভার পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বোলাররা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের বেশ চাপের মুখে রেখেছিল। এ সময়ে মাত্র দুইবার তারা বলকে সীমানার বাইরে পাঠানোর সুযোগ পেয়েছিল।
তবে পঞ্চম উইকেটে অ্যালেক্স ক্যারে ও ট্রাভিস হিড দলকে ভালো একটা অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন। অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন উভয়ে। ক্যারের ব্যাটিং যেমন ঝড় তুলেছিল তেমনি ট্রাভিস হিডের ব্যাটও। ক্যাওে ৫২ বলে ৪৯ রান করেন। আর হিডের সংগ্রহ ছিল ৬৫ বলে ৭০ রান। তবে অস্ট্রেলিয়ার রানটা তড়তড় করে বেড়েছে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটে। ১৮ বলে তিনি ৩৩ রান করেছেন। তিনটি বাউন্ডারি ও একটি ওভার বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল তার ইনিংসটি।
শ্রীলঙ্কার সফর বোলার ছিলেন জেফ্রে ভ্যান্ডারসে। ১০ ওভারে ৪৯ রানে তিনি ৩ উইকেট শিকার করেন।