জীববৈচিত্র্য-সমৃদ্ধ পদ্মা সেতু প্রাণী জাদুঘর সংগ্রহশালাটি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দোগাছি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পদ্মা সেতু সার্ভিস এলাকা ১-এ সংরক্ষিত রয়েছে। এই মুহূর্তে সেখানে জনসাধারণের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।
পদ্মা সেতু জাদুঘরের সংগ্রহশালায় দুই সহস্রাধিক নমুনা সংরক্ষিত আছে। এটি পদ্মা সেতুরই একটি অংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
জাদুঘরের কর্মীরা দেশের পদ্মাপারের এলাকার জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এ বিপুলসংখ্যক নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এখানে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক উপায়ে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রাণীর নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ এখন শেষ সংরক্ষণ পর্যায়ে। পদ্মা অববাহিকার জেলা শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ এবং এ অঞ্চলের প্রাণী নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পদ্মা সেতু প্রাণী জাদুঘর। সেতু বিভাগের কাছে হস্তান্তরের পর পদ্মা সেতু প্রাণী জাদুঘর উন্মুক্ত হবে সর্বসাধারণের জন্য।
পদ্মা সেতু জাদুঘরে এ পর্যন্ত দেড় সহস্রাধিক প্রজাতির প্রায় ২৩৫২টি নমুনা সংগৃহীত হয়েছে। ৩৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৭৭ প্রজাতির পাখি, ৭৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও উভচর, ৩২৮ প্রজাতির মাছসহ প্রায় ১৪২০ প্রজাতির প্রাণীর নমুনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাণীর দেহবিশেষ, ডিম, পরিত্যক্ত বাসা, মাছ ধরার সরঞ্জাম, বিভিন্ন ধরনের নৌকা ও বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য প্রাণীর প্রতিরূপ এই সংগ্রহশালাকে সমৃদ্ধ করেছে।
পদ্মা সেতু জাদুঘরে ৩৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর ৯২টি নমুনা রয়েছে। এখানে ১৭৭ প্রজাতীর পাখির ৪৪০টি নমুনা রয়েছে। এখানে ৪৭ প্রজাতির সরীসৃপের ১৪৫টি নমুনা রয়েছে। ২৮টি উভচর প্রজাতির ৫৫টি নমুনা রয়েছে। ৩২৮ প্রজাতির মাছের ৩৪৩ প্রজাতির নমুনা রয়েছে। ৩০৪ প্রজাতির শামুক-ঝিনুকের ৩১১টি নমুনা রয়েছে। ৬৩ প্রজাতির চিংড়ি-কাঁকড়ার ৭০টি নমুনা রয়েছে। ১৮০ প্রজাতির প্রজাপতি ও মথের ২৩১টি নমুনা রয়েছে। ২০৯ প্রজাতির নানা ধরনের পোকামাকড়ের ৩৭৩টি নমুনা রয়েছে। ৪৮ ধরনের নানা ধরনের অমেরুদণ্ডী প্রাণীর ৬৬টি নমুনা রয়েছে। ১৬ ধরনের কঙ্কাল ও দেহাবশেষের ২২টি নমুনা রয়েছে। ১৭ ধরনের নানা প্রাণীর ডিমের ২৫টি নমুনা রয়েছে। ২৯ ধরনের নানা প্রাণীর বাসার ৪৮টি নমুনা রয়েছে। ৬১ ধরনের মাছ ধরার সরঞ্জামের ৭৩টি নমুনা রয়েছে। ২০ ধরনের নৌকার ২০টি নমুনা রয়েছে। ১৪ ধরনের নৌকার বিভিন্ন সরঞ্জামের ১৪টি নমুনা রয়েছে। ১৮ ধরনের বিভিন্ন প্রতিরূপ বা মডেলের ২৪টি নমুনা রয়েছে।
জাদুঘরটির দায়িত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডক্টর মু নাইমুল নাসের বলেন, ‘পদ্মা সেতু জাদুঘরের সংগ্রহশালায় এই মুহূর্তে ২৩৫২টি নমুনা রয়েছে। এর মধ্যে ১৪১৯ প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণ করা হয়েছে।
আমরা বিভিন্ন পাখি, সরীসৃপ প্রাণীর ডিম, পাখির বাসা, মাছ ধরার নৌকা, বিশেষ করে পদ্মা নদীতে যেসব নৌকা ব্যবহৃত হতো এ রকম ১৫৯৪টি নমুনা সংগ্রহ করেছি। এগারোটা গ্রুপের প্রাণীর সংগ্রহ রয়েছে এই জাদুঘরে। এর চেয়ে বেশি রয়েছে ৩২৮ প্রজাতির মাছ।’
তিনি বলেন, ‘এই সংগ্রহটি আসলে রাষ্ট্রীয় সংগ্রহশালার মতো নয়। পদ্মা নদীর এ অঞ্চলে কোথাও দুর্ঘটনায় আহত বা মারা যাওয়া এসব প্রাণী নিয়ে এসে আমরা এখানে সংগ্রহ করি। আমরা সাত বছর ধরে এগুলো সংগ্রহ করেছি। জাদুঘর করা হয় জ্ঞান অন্বেষণ এবং বিনোদনের জন্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এখানে এসে শিখতে পারবে।
‘এখানে নির্ভুলভাবে প্রতিটি প্রাণীর নাম সঠিকভাবে লেখা আছে। যার ডেটাবেজ গবেষকরা আমাদের থেকে নিতে পারবেন। এত প্রাণী একসঙ্গে আর কোথাও দেখা সম্ভব নয়। তাই আমরা বলছি, পদ্মা জাদুঘর হবে জ্ঞানের আঁধার। নতুন প্রজন্মের জন্য আগামী ১০০ বছরের উপহার।’
পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার রজ্জব আলী জানান, ‘পদ্মা সেতু জাদুঘরের সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ ও রক্ষণ অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ব্রিজ মিউজিয়াম প্রধানমন্ত্রীর একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপরই আমরা কনস্ট্রাকশনে চলে যাব। ডিজাইন এরই মধ্যে কমপ্লিট। এ ধরনের স্ট্রাকচার বাংলাদেশ আগে কখনো হয়নি। আশা করি ঈদের পরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে কাজ শুরু করা হবে।’