রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) চত্বরে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী জাতীয় ফলমেলা-২০২২। এ মেলা ১৬-১৮ জুন হওয়ার কথা থাকলেও তা আরো দুদিন বাড়িয়ে পাঁচ দিন করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে মেলার উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। এ মেলা আজ শেষ হবে। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য হলো ‘বছরব্যাপী ফল চাষে, অর্থ পুষ্টি দুই-ই আসে’।
মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ফল চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে এবং রাসায়নিকমুক্ত বিভিন্ন জাতের ফল ক্রয় করতে পারছেন। সরকারি ও বেসরকারি মিলে ৬৭টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণ করেছে।
মেলার প্রবেশমুখেই সাড়ে ৩৯ কেজির একটি কাঁঠাল। ময়মনসিংহের কেওয়াটখালী হর্টিকালচার সেন্টারে এ কাঁঠাল উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে-বিদেশি ৭৮ রকমের ফল চাষ হচ্ছে।
তবে উৎপাদিত ফলের ৬০ শতাংশই হচ্ছে আম, কলা ও কাঁঠাল। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন স্টলের কর্তব্যরত কর্মকর্তা মো. জাহিদ ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের এখানে ৪৮ প্রকারের আম প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। অন্যান্য ৭০ রকমের ফল প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।
মেলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকে ফল চাষ করে। আবার সবাই কম বেশি ফল খায়। কিন্তু সব ফল সম্পর্কে সবার নির্দিষ্ট কোনো ধারণা নেই। এখানে সব ফলের গায়ে নাম লেখা আছে। সবাই নাম দেখে এখানে ফল সম্পর্কে জানতে পারবে। মূলত ফল সম্পর্কে জানা এবং ফলের গুরুত্ব বোঝার জন্য এ মেলা।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে তিন প্রকারের আম বিক্রি করা হয়। সেগুলো হলো- হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি। বাকি আমগুলো প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। নতুন নতুন ফলের জাত তৈরিতে কাজ করছে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনও। বিদেশ থেকে ফল এনে বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী করছে এ প্রতিষ্ঠান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার শাখার উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা এবিএম শাহ এমরান ভোরের আকাশকে বলেন, তাদের স্টলে প্রায় ২০০ প্রজাতির ফল রয়েছে। যার মধ্যে ৫০ প্রজাতির শুধু আমই রয়েছে। এ দেশি-বিদেশি প্রজাতির সব ফলই দেশে উৎপাদিত হয়।
তিনি বলেন, এ স্টলে করমচা, কতবেল, অরবরই, ডুমুর, ডেউয়া, কামরাঙা, কাউফল, তাল, গাব, লটকন, খেজুর, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, প্রেজাম (পাহাড়ি ফল), সিংহলী নারকেল, লালী বাঙ্গি, আমলকী, লুকলুকি, পানিয়ল, মিষ্টি তেঁতুল, চাপালিশ, আলুবোখারা, রামবুটান, প্যাসন, অ্যাভাকাডো, বাক্স বাদাম, কফি বিন, কাজুবাদামসহ দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির ফল। মেসার্স বিসমিল্লাহ নার্সারির মো. রাকিব হাসান বলেন, আমাদের স্টলে ৩০ জাতের পাওয়া যায়।
মূলত এ আমগুলো বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। ফজলি, সুরমা ফজলি, আশ্বিনা, ক্ষীরমন, ক্ষীরসাপাতি, হাড়িভাঙ্গা, আলফানসো, ল্যাংড়া, গৌড়মতি, গোপালভোগ, মধু চুষকী, বৃন্দাবনি, তোতাপুরী (ম্যাট্রাস), রানিপছন্দ, ক্ষীরসাপাতি, আম্রপালি, হিমসাগর, বাতাসা, ক্ষুদিক্ষীরসা, বোম্বাই, সুন্দরী, বৈশাখী, ইয়ার চারা, রসকি জাহান, হীরালাল বোম্বাই, ওকরাং, মালদা, শেরীধন ইত্যাদি। এখানে বেশিরভাগ আম স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা হয়। এখানে সর্বনিম্ন ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় আম বিক্রি হচ্ছে।
ফল মেলায় ঘুরতে এসেছেন আরমান হোসেন। তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা কৃষি বিষয়ে পড়লেও ফল সম্পর্কে অনেক কিছু জানি না।
এ মেলায় ফলের বিভিন্ন প্রকারের প্রদর্শনী দেখে অনেকগুলো ফল সম্পর্কে জানতে পারলাম। যেটা আমাদের ব্যবহারিক ও তত্ত্বীয়ভাবে কাজে আসবে। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করব যেন এ ফল মেলা প্রতি বছর হয়। এবারের ফল মেলায় অংশ নিয়েছে নারী উদ্যোক্তা ফোরাম। তারা ফল মেলায় এসেছেন ভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে।
সেখানে নারী উদ্যোক্তা ফোরামের পরিচালক মুসরাত জাহান ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন ফল দিয়ে কেক বানানো হয়। এছাড়া কাঁঠাল দিয়ে কাঁঠালের বড়া, কাঁঠালের কাপকেক, কাঁঠালের কাবাব, কাঁঠালের নিমকি, কাঁঠালের পায়েস, কাঁঠালের পাতাপিঠা, তেঁতুলের ভর্তা।
আমের আচার, আমসত্ব , সালাদ, চিঁড়াভাজা, পুটিং, ফলবড়া, সবজিভর্তাসহ বিভিন্ন ধরনের ফল দিয়ে ২২-২৩ ধরনের আইটেম তৈরি করা হয়। ২০২০ সাল থেকে আমাদের এ কার্যক্রমের শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত চলছে। সারা দেশে বর্তমানে আমাদের ফোরামের ৪২০০ হাজার সদস্য রয়েছেন।
নানা জাতের ফল উদ্ভাবন করে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। ফল মেলায় তাদের একটি স্টল রয়েছে। এ স্টলে কর্মরত মো. রাফি ভোরের আকাশকে জানান, গত এক বছরে তারা মোট ১৩টি জাতের ফল উদ্ভাবন করেছেন। নতুন উদ্ভাবিত এসব ফল হলো বারি আম-১২ থেকে ১৮, বারি লেবু-৬, বারি মাল্টা-২, বারি কাঁঠাল-৪, বারি জাম-১, বারি আতা-১ ও বারি ফলসা-১।
তার মধ্যে জাম, আতা ও ফলসার নতুন জাত এবারই প্রথম উদ্ভাবিত হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে যে পরিমাণ কাঁঠাল উৎপাদিত হয়, তার প্রায় ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। অথচ কাঁঠাল দিয়ে অনেক খাবার বানানো যায়। এসব খাবার জনপ্রিয় হলে অপচয় কম হবে।
তিনি বলেন, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন। অথচ এখন বাচ্চারা ফল কম খায়। তারা ফার্স্টফুড বেশি খায়। তারা মেলায় এলে ফল খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত হবে।