বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ, সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালু ও আধুনিকায়ন ও শ্রমিকদের নামে মিথ্যা ও হয়রানি মূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) ঘেরাও করেছে পাটকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ শেষ বিক্ষোভ মিছিল করে বিজেএমসি ঘেরাও করে সংগঠনটি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন উপস্থিত ছিলেন পাটকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যের সংগঠক নিয়াজ মোর্শেদ দুলাল, মিহীর বৈদ্যনাথ, আলমগীর হোসেন, মো. রুবেল হোসেনসহ প্রমুখ। সমাবেশ শেষ বিক্ষোভ মিছিল করে নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাব থেকে গুলিস্তান হয়ে বিজেএমসি ভবনে যান এবং সেখানে সমাবেশ করেন।
ঘেরাওপূর্ব শ্রমিক সমাবেশে পাটকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যের আহ্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, 'স্বাধীনতা উত্তর সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের ভূমিকার কারণে পাটকে সোনালী আঁশ বলা হতো।
কিন্তু আশির দশক থেকে সিনথেটিক দ্রব্যের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী পাটপণ্যের চাহিদা কমতে থাকে এবং বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়ে। আর এ সময়ে বাংলাদেশে গড়ে ওঠে গার্মেন্টস শিল্প, যার কাঁচামাল থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী পাটপণ্যের চাহিদা ব্যাপকহারে বাড়ার ফলে পাট ও পাটপণ্যের সুদিন ফিরে এসেছে।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের অর্থনীতি গড়ে উঠতে পারে পাট ও পাট শিল্পকে কেন্দ্র করেই। অথচ সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা না করে, সামগ্রিকভাবে পাট-শিল্পকে বিকশিত করার কোন পরিকল্পনা হাতে না নিয়ে কেবলমাত্র লসের অজুহাত দেখিয়ে গত বছর ২০২০ সালের ২ জুলাই সরকার একযোগে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫ টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। যেটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।'
রুহুল আমিন বলেন, 'বিগত ৫০ বছরে ৭৮ টি পাটকলে যেখানে লোকসানের পরিমাণ ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সেখানে বিদ্যুৎ খাতের রেন্টাল সেক্টরে গত এক বছরে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা।
যেখানে দরকার ছিল পাটকলের লোকসানের কারণ অনুসন্ধান করে তা দূর করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া, অথচ সেটা না করে প্লাস্টিক ব্যবসায়ী পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ সিনথেটিক ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করতে বন্ধ করে দেওয়া হলো সর্বশেষ ২৫ টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল। ফলে কর্মহারা হলো ৭০ হাজার শ্রমিক, চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে প্রতিটি পাটকল এলাকার স্থানীয় অর্থনীতি-জনজীবন।'
তিনি আরও বলেন, 'রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালু থাকা অবস্থায় তারা (বিজেএমসি) মোট উৎপাদিত পাটের ৩০-৩৫% কাঁচা পাট বিক্রি করতো সরকার নির্ধারিত দামে। ফলে অবশিষ্ট বেসরকারি পাটকল মালিকরা তার কাছাকাছি দামে পাট কিনতে বাধ্য হতো। কিন্তু এখন আর সেই সুযোগটাও থাকল না। ফলে এখন পাটচাষিদের অবস্থা হবে ভয়াবহ।'