ভারতের কারাগারে আটক থাকা দেশের কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারে অভিযুক্ত আলোচিত দুর্নীতিবাজ, পলাতক আসামী প্রশান্ত কুমার হালদার বা পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনতে কোন অগ্রগতি হয়নি। দিল্লির পক্ষ থেকে এবিষয়ে দুদক কোন তথ্য পায়নি। তবে সম্প্রতি পররাষ্টমন্ত্রীর দিল্লি সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে এ বিষয়ে আলচনা হয়েছে। যেহেতু পি কে হালদার সেদেশেও (ভারতে) অপরাধমূরক কর্মকাণ্ড করেছে, সেজন্য সেখানকার বিচার প্রক্রিয়া শেষে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
কলকাতা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২১ জুন) কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত বাংলাদেশের এই পলাতক আসামিকে ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ৫ জুন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আবার আদালতে হাজির করা হবে। গত ১৪ মে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পি কেসহ তার ৫ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে গত ১৯ জুন রাতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) ৭ম বৈঠক শেষে দেশে ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন গত সোমবার (২০ জুন) বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের জানান- জেসিসি বৈঠকে অন্য অনেক আলোচনা মধ্যে পিকে হালদারকে ফেরানোর প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিচার শেষে না হওয়া পর্যন্ত তাকে ফেরত পাওয়া বিষয়টি বলা যাচ্ছেনা। বৈঠকে ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর।
অপর দিকে মঙ্গলবার (২১ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়মিত ব্রিফিং শেষে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন ভোরের আকাশকে জানান, পি কে হারদারের বিষয়ে ভারতের দিক থেকে কোন খবর এখনও আসেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা’ জানা জায়নি। যোগাযোগ করা হয়েছে। কোন তথ্য থাকলে বা কোন খবর আসলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো। বিভিন্ন মাধ্যমে আসা-যাওয়া, কথা-বর্তা চলছে। খবর হলে জানাবো।
এদিকে মঙ্গলবার আদালতে ইডির আইনজীবী পিকে হালদারদের কাছ থেকে আরও তথ্য পেতে ১৪ দিনের জেরার আবেদন করেন। তবে এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী এ আবেদনের বিরোধীতা করলেও তদন্তের স্বার্থে আদাত ইডি’র আবেদন মঞ্জুর করেন।
জানা গেছে, ইডি ভারতে পিকে হালদারের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে। দেশটিতে পি কে হালদারের ৮৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ৪০টি অবৈধ সম্পত্তি এবং মালিয়েশিয়ায় ৭টি ফ্ল্যাটসহ এমন অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে ইডি।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে পি কে হালদারসহ তার সহযোগীরা অবৈধ ব্যবসা চালু করে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৪ মে পি কে হালদারসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ইডি। পরে তাদের আদালতে তোলা হলে প্রথমে তিন দিনের ও পরে আরো ১০ দিনের হেফাজতে নেয় ইডি। হেফাজতে থাকাকালীন ইডি অনেক তথ্যই সংগ্রহ করতে পেরেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারের পর তাদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায় সংস্থাটি। এর পর গত ৭ জুন তাদের আদালতে হাজিার করে সরকার পক্ষ আরও ১৪ দিনের হেফাজতে জেরার আবেদন করলে আদালত মঞ্জুর করে ২১ জুন পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠায় আদালত।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে দুদকের এক মামলায় গ্রেপ্তার আদেশ জারির পর ২৩ অক্টোবর বেনাপোল দিয়ে দেশ ত্যাগ করে পি কে হালদার। এর পর থেকে পলাতক ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক ভাবে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ট জারি করে দুদক।
দুদকের তথ্য মতে, পি কে হালদারের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি ও পাচার ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে ৪৩টি মামলায় ১৪৪ জনেরমত আসামি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ৩৫টি মামলায় পি কে’সহ ৮৪ জন আসামি রয়েছে। মাত্র একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৪ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেন আদালত। এদের মধ্যে মাত্র ৬ জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকি ৮ জনের বিরুদ্ধে গেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত এসব মামলায় মোট ১৩ জন আসামি দেশে গেপ্তার আছেন। বাকিরা ধরা চোয়ার বাহিরে।
সর্বশেষ গত ১৮ মে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পি কে হালদারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।