তুরস্কে নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্সি পাওয়ার চেষ্টা করছেন ভারতীয় ধনী মুসলিমরা। দেশটির ধনী মুসলমানরা ৪ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে তুরস্কে নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করছেন। হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপগুলিতে লোকজন তুরস্কে বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়ে আলোচনা করছেন।
দিল্লি, মিরাট, লখনউ, হায়দরাবাদ, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু এবং তিরুবনন্তপুরমের ধনী মুসলিমরাই তুর্কি নাগরিকত্ব চাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন।
তুরস্কে যদি কোনো বিদেশি নাগরিক কমপক্ষে ৪ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের রিয়েল এস্টেট কেনেন, তাহলে তিনি তুর্কি নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য যোগ্য।
এক্ষেত্রে শর্ত হলো, তুর্কি ব্যাঙ্কে টাকা জমা করা এবং তিন বছরের জন্য বাড়ি বিক্রি করা যাবে না। এই শর্ত পূরণকারী বিদেশি নাগরিকরা তাদের স্ত্রী এবং ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তানদের সঙ্গে তুর্কি পাসপোর্ট পাবেন। আবাসন বিক্রি বাড়াতে এই নতুন পন্থা কাজে লাগছে তুরস্কের।
কয়েকজন বিনিয়োগকারীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, যারা সম্প্রতি তুরস্কের বিভিন্ন শহরে বাড়ি কিনেছেন।
মিরাটের বাসিন্দা মোহাম্মদ খাজা (নাম পরিবর্তিত) জানান, স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে তুর্কির নাগরিকত্ব পেতে তিনি আড়াই লক্ষ ডলার মূল্যের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।
তিনি বলেন, তুরস্কে ব্যবসার সুযোগ বাড়ছে। তাই, আমি ইস্তাম্বুলে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করি।
মুম্বাইয়ের ব্যবসায়ী ফিরোজ আলম (নাম পরিবর্তিত) জানিয়েছেন, তার বাবা তুরস্কের আঙ্কারা সিটিতে ৮ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করে তিন তলা বিল্ডিং কিনেছিলেন।
ফিরোজ দাবি করেছেন, ভারতের মেট্রো সিটির তুলনায় তুরস্কে রিয়েল এস্টেট সস্তা এবং তারা শীঘ্রই তুর্কি পাসপোর্ট পাবেন।
বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা হোটেল মালিক সৈয়দ ওসমান কাদরিও (নাম পরিবর্তিত) সম্প্রতি ইস্তাম্বুলে বসবাসের জন্য ৫০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেছেন।
তিনি জানান, তার ভাই তুরস্কের আঙ্কারায় একটি দক্ষিণ ভারতীয় খাবার খোলার পরিকল্পনা করেছেন।
কেন তুরস্কে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী লোকজন?
তুরস্কে বিনিয়োগ করা একটি পুরো পরিবারকে উপকৃত করে। যে যে সুবিধাগুলি পাওয়া যায় সেগুলি হলো--
১২০টি গন্তব্যে ভিসামুক্ত ভ্রমণ, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিনামূল্যে শিক্ষা, উন্নত অর্থনৈতিক সুযোগ, জীবনের মান উন্নয়ন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে E-2 বিনিয়োগকারী ভিসার ( E-2 Investor Visa) জন্য যোগ্যতা (৫ বছরের পুনর্নবীকরণ বিকল্প সহ):
নাগরিকত্ব:স্বামী-স্ত্রী, ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তান, সেই সঙ্গে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষসহ পরিবারের সকল সদস্যের জন্য আজীবন তুর্কি নাগরিকত্ব। স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
চার মাসের মধ্যে তুর্কি পাসপোর্ট যোগ্যতা:কোনো বিশেষ যোগ্যতা লাগে না, ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা নেই, স্ত্রী, ১৮ বছরের কম বয়সি সন্তানদেরও একই সুবিধা দেওয়া হয়, বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন যে কোনো বয়সের শিশুরা একই সুবিধা পাবেন।
সম্পদ: সম্পদ ঘোষণা করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তুরস্কের বাইরে অর্জিত কোনো আয়ের উপর কর নেই। তিন বছর পর ১০০ শতাংশ সম্পদ প্রত্যাবর্তন (সমস্ত আয় সহ), তা-ও কোনো বিনিময় নিয়ন্ত্রণ নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই।
তুরস্কে বিনিয়োগের কী কী সুযোগ রয়েছে?
ক) নাগরিকত্ব চাইলে:
১) রিয়েল এস্টেট (Teal Estate): তিন বছরের জন্য বিক্রি না করার বিধিনিষেধ সহ কমপক্ষে ৪ লক্ষ ডলার মূল্যের রিয়েল এস্টেট কিনতে হবে।
২) সরকারি বন্ড (Government Bonds): তিন বছরের জন্য বিক্রি না করার শর্তে ৫ লক্ষ ডলার মূল্যের সরকারি বন্ড কিনতে হবে।
৩) ব্যাঙ্ক ডিপোজিট (Bank Deposit): তিন বছরের জন্য না তোলার করার শর্তে তুর্কি ব্যাঙ্কে নগদ ৫ লক্ষ ডলার জমা করতে হবে।
৪) শেয়ার কেনা (Share Purchase): তিন বছরের জন্য বিক্রি না করার শর্তে তুর্কি REITs বা VCT-তে ৫ লক্ষ ডলার মূল্যের শেয়ার কিনতে হবে।
৫) চাকরি সৃষ্টি (Job Creation): তুরস্কে ৫০টি ফুল-টাইম চাকরির সংস্থান করতে হবে। খ) বাসিন্দা হতে চাইলে:১) রিয়েল এস্টেট: অন্তত ৫০ হাজার ডলার মূল্যের রিয়েল এস্টেট কিনতে হবে। অথবা সবচেয়ে উন্নত পৌরসভা বা অঞ্চলে ৭৫ হাজার ডলার মূল্যের রিয়েল এস্টেট কিনতে হবে। ২) ব্যবসায়িক বিনিয়োগ (Business Invest): একটি ব্যবসায় কমপক্ষে ৫০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।
বিনিয়োগের জন্য পদ্ধতি কী?
রিয়েল এস্টেট প্রোগ্রামে বিনিয়োগের মাধ্যমে তুর্কি নাগরিকত্ব হলো বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, লাভজনক এবং সহজবোধ্য প্রোগ্রামগুলির মধ্যে একটি। এখানে মাত্র কয়েকটি শর্ত রয়েছে।
সমস্ত ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেই নাগরিকত্বের আবেদন গৃহীত হয়। আবেদনকারীরাও নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে সম্পত্তি ক্রয় করতে পারে। সম্পূর্ণ পেমেন্ট করতে হবে ও বিক্রির নোটারাইজড চুক্তি থাকতে হবে। একজন বিনিয়োগকারীকে অবশ্যই বিক্রি করার আগে কমপক্ষে তিন বছরের জন্য সম্পত্তির মালিকানা ধরে রাখতে হবে।
তুর্কি নাগরিকত্ব পেতে বিনিয়োগের জন্য সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ খরচ কত?
নাগরিকত্বের জন্য: যদি কেউ ন্যূনতম ৪ লক্ষ ডলার খরচ করে, তবে তাকে অবশ্যই শুধুমাত্র কর, সম্পত্তি মূল্যায়ন, এবং দলিল স্থানান্তরের কথা মাথায় রাখতে হবে। এই খরচ সম্পর্কে আগেভাগেই খোঁজ নিয়ে রাখতে হবে। না হলে কিছু পরিস্থিতি অপ্রীতিকর হতে পারে।
সঠিক পরামর্শদাতার সাহায্য় নেওয়া যেতে পারে। তাই তুরস্কে সম্পত্তি খোঁজা এবং নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে সাহায্য করার জন্য সঠিক পরামর্শদাতা এবং সরকারি ফি-ও বিবেচনা করা উচিত।
রেসিডেন্সির জন্য: কেউ যদি তুরস্কের বাসিন্দা হতে সম্পত্তি কেনার জন্য ন্যূনতম ৫০ হাজার ডলার বা ৭৫ হাজার ডলার খরচ করেন, তাহলে বিবেচনা করা উচিত শুধুমাত্র কর, সম্পত্তি মূল্যায়ন এবং দলিল হস্তান্তর।
বিনিয়োগকারীরা কী করবেন এবং কী করবেন না?
সব বিষয় যাচাই করতে হবে। রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের পরিবর্তে নাগরিকত্ব/আবাসিক পরামর্শদাতাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। যাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো একটি সম্পত্তি কেনা-বেচায় সাহায্য করা।
কোনো এলাকায় সম্পত্তি কিনলে তা নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে আগে থেকেই খোঁজ নিতে হবে। তুরস্কের কয়েকটি এলাকায় আর এই সুবিধা পাওয়া যায় না। সঠিক লোকদের পরামর্শ নিতে হবে এবং কেনার আগে বিনিয়োগের আইন ও প্রভাব জেনে নিতে হবে।
রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের সরাসরি টাকা দেওয়া যাবে না। পরিবর্তে, তুরস্কে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন করতে হবে। সম্পত্তি সার্চিং করিয়ে সঠিক মালিকানা সম্পর্কে জানতে হবে।
তুরস্কের হাশমি গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও তাজামুল হুসেন বলেন, ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে একশ'র বেশি সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী বা ক্রেতার সঙ্গে বসবাস এবং নাগরিকত্বের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেছে।
তিনি বলেন, যারা অন্য দেশে বিনিয়োগ করতে চায়, তারাই এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। যাদের সন্তান আছে, যারা পড়াশোনার জন্য বিদেশে যেতে চায়, যাদের বিদেশে একটি দ্বিতীয় বাড়ির প্রয়োজন, তারাই বিনিয়োগের মাধ্যমে তুরস্কের নাগরিকত্ব পেতে চাইছে।
হায়দরাবাদের সম্পত্তি-সংক্রান্ত পরামর্শদাতা সাদাকাত হুসেন দাবি করেছেন যে, লোকজন তুরস্কের অনেক শহরে কৃষি জমিতেও বিনিয়োগ করছে।