logo
আপডেট : ২২ জুন, ২০২২ ০৮:২৫
ত্রিশ বছর পর লঙ্কার সিরিজ জয়
ক্রীড়া ডেস্ক

ত্রিশ বছর পর লঙ্কার সিরিজ জয়

কথা রেখেছেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। অর্থনৈতিক কারণে দেশটির অবস্থা বেশ নাজুক। ফলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ শঙ্কা ছিল। কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নির্ধারিত সময়ে সিরিজ শুরু হয়। শুধু তাই নয়, সত্যিকারভাবেই উত্তেজনাপূর্ণ এক সিরিজ দেশবাসীকে উপহার দিয়ে চলেছে লঙ্কার ক্রিকেটাররা। দিয়েছে সিরিজ জয়ের আনন্দ। মঙ্গলবার সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই শেষে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ৪ রানে জয় পেয়েছে। এ জয়ের মাঝ দিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ শ্রীলঙ্কা চতুর্থ ম্যাচ শেসে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো।

কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ম্যাচটি শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম এক স্মৃতি হয়ে থাকবে। ত্রিশ বছরের মধ্যে এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়েছে দলটি। মঙ্গলবারের ম্যাচে শ্রীলঙ্কা অসাধারণ এক জয় পেয়েছে। ম্যাচ জুড়েই টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে ছিল। ম্যাচের শেষ মূহুর্তে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে কেউ জয়ের কেতন উড়াতে পারতো।

প্রথমে ব্যাট হাতে নামা শ্রীলঙ্কার করা ২৫৮ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়েছিল। ছড়িয়ে দিয়েছিল উত্তেজনা। শ্রীলঙ্কার নিশ্চিত জয় কেড়ে নেওয়ারও আয়োজন করেছিল। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৯ রানের কঠিন লক্ষ্য ছিল অস্ট্রেলিয়ার সামনে। লোয়ার অর্ডার ব্যাটার ম্যাথিউ কুহনেমান ব্যাটিংয়ে। যার ক্যারিয়ারে ম্যাচের সংখ্যা তিন। আর সর্বোচ্চ রান ১৬। সেই কুহনেমান শ্রীলঙ্কাকে চরম উত্তেজনায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। প্রথম বল থেকে কোনো রান না নিতে পারলেও পরের চার বল থেকে ১৪ রান তুলে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। ফলে শেষ বলে দরকার ছিল ৫ রান অর্থাৎ একটা ওভার বাউন্ডারি। কিন্তু দাসুন শানাকার করা শেষ বল থেকে তিনি কোনো রান নিতে পারেননি। বরং আসালাঙ্কার হাতে ধরা পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ার আমন্ত্রণে ব্যাট হাতে নেমে শ্রীলঙ্কা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ৩৪ রানে তিন উইকেট বসেছিল তারা। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও চারিথ আসালাঙ্কার হাত ধরে সে বিপর্যয় তারা দারুণভাবে সামাল দেয়। নিরোশান ডিকভেলা (১), পাথুম নিশাঙ্কা (১৩) ও কুশাল মেন্ডিসের (১৪) আউটে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল তা দূর করেন ধনঞ্জয়া ও আসালাঙ্কা। ১০১ রানের পার্টনারশিপ তাদের। শেষ পর্যন্ত মিশেল মার্শ এ জুটিতে ভাঙ্গন ধরান। ৬১ বলে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে ৬০ রান উপহার দেন তিনি। সাতটি বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল তার ইনিংস। অন্যদিকে আসালাঙ্কার ইনিংসটি ছিল ১১০ রানের। ১০৬ বলে তিনি এ ইনিংসটি খেলেন। ১০ বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারিত সাজানো ছিল তার ইনিংসটি।

২৫৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমেই অস্ট্রেলিয়াকে বড় ধাক্কা হজম করতে হয়। তৃতীয় ওভারেই তারা হারায় অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে। চার বল খেলেছেন তিনি। তবে রানের খাতা খুলতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়া এই ধাক্কাটা সহজে সামাল দিতে পারেনি। যদিও একপ্রান্তে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার দারুণ ব্যাটিং করেছেন। একের পর এক বলকে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে নিজের রান যেমন সমৃদ্ধ করেছেন তেমনি দলেরও। তবে একটা পর্যায়ে লক্ষ্য থেকে ক্রমেই তারা দূরে সরে যাচ্ছিল। কিন্তু কামিন্সের চমৎকার ব্যাটিং অস্ট্রেলিয়াকে আবার ট্রাকে ফিরিয়ে আনে। সে সঙ্গে জয়েরও সম্ভাবনা তৈরি করে। যার ফলে ১৮ বলে তাদের দরকার হয় ৩৩ রান। কিন্তু ৪৮তম ও ৪৯তম ওভার দুটোতে শ্রীলঙ্কা একটু বেশি ভালো বোলিং করায় অস্ট্রেলিয়ার সামনের পথটা তুলনামূলক কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৯ রানের প্রয়োজন হয়। আর এ সময়ে কুহনেমান ম্যাচে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়। তবে সে উত্তেজনা ব্যারোমিটার পারদের উচ্চতা বাড়িয়ে দিলেও লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। শানাকার হাতে শ্রীলঙ্কার ম্যাচ শেষ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলেও তার হাত ধরেই ৩০ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় স্বাগতিকরা।