ভয়াল বন্যা। চারিদিকে থৈ-থৈ পানি। জীবন বাঁচাতে মানুষের দিকবিদিক ছোটাছুটি। কে রাখে কার খবর। এই পরিস্থিতি সিলেটের বন্যা কবলিত মানুষের।
কয়েক দিন আগেও যাদের আধাপাকা বা টিন, ছন, বাঁশ ও মাটির ঘর ছিল- তারা রাতারাতি ছিন্নমূল। ঘরের চালার ওপর দিয়ে বন্যার পানির স্রোত বয়ে গেছে। উঁচু গাছও পানির নিচে ডুবে যায়। শতশত মানুষ কোনোরকমে জীবন বাঁচিয়ে ঠাঁই পেয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। বন্যাকবলিত জনপদে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট বর্ণনাতীত।
কোম্পানীগঞ্জ সদরের দক্ষিণ বুড়দেও গ্রামের বাসিন্দা জোনাকি বেগম বলেন, ‘গোলায় একশ’ মণের ওপর ধান আছিল। অবস্থা ছিল পুরো বছরের সংসার চালানোর। হঠাৎ পানিতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এ কথা বলতে বলতে জোনাকির চোখে জল এসেই গেল। বললেন, একরাতে পথের ফকির হয়ে গেলাম।’
সিলেটের ভয়াবহ বন্যায় হাজার হাজার মানুষের এখন এই করুণ পরিণতি। সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তীর্ণ গ্রাম এখনো পানির ওপর ভাসছে।
সিলেটে গত বুধবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার তা ভয়াবহ রূপ নেয়। পানিতে তলিয়ে যায় জেলার সবকটি উপজেলা। দ্রুত বাড়তে শুরু করে পানি। তলিয়ে যায় সিলেট নগরের বেশিরভাগ এলাকা।
সিলেট নগরীর দুর্গকুমার পাঠশালায় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পাওয়া লিটন বলেন, একদিন কেবল খাবার পেয়েছিলাম। এরপর আর কিছু পাইনি। এখানে রান্নার সুযোগ নেই। তাই খুব কষ্টে আছি। আমরা না হয় যেকোনো কিছু খেয়ে ফেললাম। বাচ্চারা তো বুঝতে চায় না।
এদিকে ভয়াবহ বন্যায় এখন পর্যন্ত সিলেটে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্তে মা-ছেলের মরদেহ ভেসে ওঠে। শুক্রবার তীব্র বন্যার পানিতে তারা ভেসে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া সোমবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপ্লব মিয়া নামে আহত আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বন্যায় ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে। এদের মধ্যে সিলেটে ১২ জন, সুনামগঞ্জে ৫ জন ও মৌলভীবাজারে ৩ জন মারা গেছেন। জৈন্তাপুর ও তাহিরপুরের ঘটনার তথ্য তিনি শুনেছেন। এদের যোগ করলে মৃতের সংখ্যা ২৩ জন হবে।’
অপরদিকে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, ‘মেঘালয়ের ঢলে সুরমা, ধলাই ও পিয়াইন নদীর পানি বাড়ে। আসাম থেকে ঢল নামলে কুশিয়ারার পানি বাড়ে। এখন ঢল নামছে আসাম থেকে। তাই কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে এবং ওই নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।’
সিলেট-সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। সিলেট নগরীতে কিছু কিছু জায়গা থেকে পানি দু-এক হাত নেমে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সুরমা নদীর পনি কমলেও বাড়ছে কুশিয়ারায়। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হলে বন্যা পরিস্থিতির আর অবনতি হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।