logo
আপডেট : ২২ জুন, ২০২২ ২১:১৬
প্রথম আদিবাসী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে ভারত?

প্রথম আদিবাসী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে ভারত?

দ্রৌপদী মুর্মু

বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোট ভারতের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করেছে। দ্রৌপদী মুর্মু প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলে প্রথম আদিবাসী প্রেসিডেন্ট পাবে ভারত। পার্লামেন্টে নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করলে প্রথম আদিবাসীর পাশাপাশি সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হবার রেকর্ডও গড়বেন। তার প্রতিপক্ষ বিরোধী জোটের প্রার্থী যশবন্ত সিনহা।

৬৪ বছর বয়সী দ্রৌপদী ভারতের ওড়িশা রাজ্যের সাওতাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সঙ্গে সভার পর প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদীর নাম ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ব্যক্তিগত জীবনে স্বামী এবং দুই ছেলেকে হারিয়েছেন দ্রৌপদী। একটি মেয়ে রয়েছে তার। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি একটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৯৭ সালে বিজেপির হয়ে ওড়িশার রায়রংপুর নগর পঞ্চায়েতের কাউন্সিলর হন তিনি।

এরপর ২০০০ এবং ২০০৪ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে তিনি নবীন পট্টনায়কের নেতৃত্বাধীন বিজেডি-বিজেপি সরকারের মন্ত্রী হন। প্রথম দফায় তিনি সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরে তিনি পরিবহন, পশুপালন, মৎস্য দপ্তরও সামলান।

২০১৫ সালে ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নেন দ্রৌপদী মুর্মু। ঝাড়খণ্ডের প্রথম রাজ্যপাল হিসেবে তিনিই পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন।

ধারণা করা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি ভবনের জন্য তিনি মোদির নিজস্ব পছন্দ। এ নিয়ে টুইটারে একটি বিবৃতিও দিয়েছেন মোদি। এতে তিনি বলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ, বিশেষ করে যারা দারিদ্র্য এবং কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন, তারা শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মুর জীবন থেকে শক্তি লাভ করেন। নীতিগত বিষয়ে তার বোঝাপড়া এবং সহানুভূতিশীল প্রকৃতি আমাদের দেশকে ব্যাপকভাবে উপকৃত করবে।

নির্বাচিত হলে প্রতিভা পাতিলের (২০০৭-১২) পর দ্রৌপদীই হতে চলেছেন ভারতের দ্বিতীয় নারী প্রেসিডেন্ট। আগামি ১৮ই জুলাই নির্বাচনে তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ব্যবধান সামান্য হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের। এছাড়া কিছু আঞ্চলিক দলের সমর্থনও পাওয়ার আশা করছে এনডিএ। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও তার সমর্থনে টুইট করেছেন।

রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দ্রৌপদী এর আগে ওড়িশার মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী টুইট বার্তায় বলেন, দ্রোপদীর মনোনয়ন পাওয়া ওড়িশার মানুষের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। ভারতে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে বড় ভূমিকা রাখবেন তিনি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওড়িশা রাজ্যে জন্ম নেয়া এবং রাজনীতি করা একজনকে সমর্থন না দেয়া কঠিন ছিল মুখ্যমন্ত্রীর জন্য।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও দ্রৌপদী মুর্মুকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, তার মনোনয়ন ‘সবকা সাথ-সবকা বিকাশ’ স্লোগানের প্রতি বিজেপির প্রতিশ্রুতির প্রমাণ। আদিত্যনাথ একটি টুইটে লেখেন, দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য এনডিএ প্রার্থী করায় আন্তরিক অভিনন্দন।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, একজন আদিবাসী নারীকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য বেছে নেয়া বিজেপির আরেকটি মাস্টারস্ট্রোক।

এর আগে,দলিত নেতা রামনাথ কোবিন্দকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সমর্থন দিয়েছিল বিজেপি। এবার একজন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি দ্রৌপদীকে প্রার্থী করে বিজেপি বিরোধী জোটকে টেক্কা দিল।

২০১৭ সালেও রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে তার নাম উঠে এসেছিল। কিন্তু তখন বিহারের তৎকালীন রাজ্যপাল রামনাথ কোবিন্দকেই বেছে নেয় কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন জোট।

ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি পদে ভোট হবে এবং ২১ জুলাই ভোট গণনা হবে। আর ২৫ জুলাই শপথ নেবেন নতুন রাষ্ট্রপতি।

সূত্র: এনডিটিভি, জি নিউজ