সর্বগ্রাসী, খরস্রোতা পদ্মা নদীর বুক চিরে গড়ে উঠেছে স্বপ্নের সেতু। আজ বাংলাদেশের অহংকারের প্রতীক হিসেবে দেখা দিয়েছে এই পদ্মা সেতু। অথচ এই পদ্মা সেতুর বিষয়ে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতেও মামলা গড়িয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি এবং দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পাঁচ বছর আগে মামলাটির উদ্ভব হলেও তা এখনো হাইকোর্টে বিচারাধীন।
২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ড. ইউনূসের বিচার দাবি :
আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো একাট্টা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি আদেশ দেন। আদেশে পদ্মা সেতু নির্মাণের চুক্তি ও এ বিষয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যের প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন বা কমিটি গঠন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং দোষীদের কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
মন্ত্রিপরিষদ, স্বরাষ্ট্র, আইন ও সেতু সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যানকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সময় নেওয়ায় এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ২ আগস্ট হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ৩১ আগস্টের মধ্যে কমিশন গঠন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে সেতু মন্ত্রণালয়ের চিঠি যুক্ত করে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি সংযুক্ত করা হয়। সেতু মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে দেখা যায়, এ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত কমিশনের সদস্য হিসেবে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক (কারিগরি) মো. কামরুজ্জামানকে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শুনানিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছিলেন, ‘পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, পদ্মা সেতু নির্মাণের চুক্তি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ অভিযোগ ওঠার পর বিশ্বব্যাংক ও অপরাপর দাতা সংস্থা অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যা জাতির মর্যাদাকে মারাত্মকভাবে আঘাত করছে। এ অভিযোগের বিষয়ে দুদক ও অপরাপর তদন্ত সংস্থা তদন্ত করেছে। এ তদন্তে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি। কিন্তু তারপরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। ওই মন্ত্রণালয়ের সচিবকে মারাত্মকভাবে ভুগতে হয়েছে।’
আদালত বলেন, এ দুর্নীতির সঙ্গে কানাডিয়ান কোম্পানির তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়টি কানাডিয়ান আদালতে বিচার হয়েছে। আদালত তাদের খালাস দিয়েছেন। আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
আদালত বলেন, একটি মহল থেকে পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির গল্প ও অভিযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জাতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এ কারণে এই গল্প সৃষ্টির নেপথ্যে কারা জড়িত তাদের খঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা দরকার ন্যায়বিচারের স্বার্থে।