ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাটে ২০০২ সালের ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ওই দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যান, যাদের সিংহভাগই ছিলেন মুসলিম। শুক্রবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে নরেন্দ্র মোদিকে দায়মুক্ত করে দেওয়া গুজরাটের আদালতের রায় বহাল রেখেছে।
দাঙ্গার শুরু থেকেই নানা অভিযোগ-সন্দেহ ওঠে যে গুজরাটের তৎকালীন বিজেপির রাজ্য সরকার পরোক্ষভাবে দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছে এবং হত্যাযজ্ঞ থামাতে ইচ্ছাকৃতভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়নি। তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০০৫ সালে নরেন্দ্র মোদির ভিসার আবেদন পর্যন্ত খারিজ করে দিয়েছিল।
তবে ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ করা একটি তদন্ত কমিটির রিপোর্টে গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গুজরাটে একটি আপিল করেন দাঙ্গায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার রাজ্যের অত্যন্ত সুপরিচিত মুসলিম রাজনীতিক এবং কংগ্রেস এমপি এহসান জাফরির বিধবা স্ত্রী জাকিয়া জাফরি। কিন্তু আদালতে ২০১৩ সালের এক রায় তার আপিল খারিজ করে দেয়।
জাফরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে দাঙ্গা নিয়ে নতুন তদন্তের আবেদন করেন। মামলায় তার অভিযোগ ছিল তদন্তে 'ষড়যন্ত্রকারীদের সুরক্ষা' দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার এক রায়ে যুক্তির ঘাটতি থাকার কথা বলে জাকিয়া জাফরির আপিল খারিজ করে দিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে দায়মুক্ত করে দেওয়া গুজরাটের আদালতের রায় বহাল রেখেছে।
গুজরাট দাঙ্গার প্রথম তদন্ত করেছিল রাজ্য পুলিশ। পরে ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট নতুন তদন্তের জন্য নিরপেক্ষ একটি কমিটি নিয়োগ করে। চার বছর পর ২০১২ সালে ওই কমিটি তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয়, যেখানে বলা হয়-দাঙ্গায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আহমেদাবাদের মুসলিম অধ্যুষিত গুলবাগ এলাকায় সশস্ত্র হিন্দুদের যে হামলায় এমপি এহসান জাফরিসহ ৩৫ জন মুসলিম মারা গিয়েছিলেন সে ঘটনার তদন্তেও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে অভিযুক্ত ৬৩ জন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও কোনো প্রমাণ ওই তদন্তে পাওয়া যায়নি। কিন্তু জাকিয়া জাফরি ক্রমাগত বলে গেছেন দাঙ্গার সময় পুলিশ সহ রাজ্য সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা নিস্ক্রিয় ছিলেন এবং পরোক্ষভাবে সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন।