পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলো গতকাল শনিবার। দিনভর গোটা দেশ ছিল উৎসবের আমেজে। বাদ যায়নি ক্রিকেটেও। মিরপুর শেরেবাংলা থেকে সূদুর সেন্ট লুসিয়া, সব জায়গায় ছিল পদ্মা সেতু নিয়ে গভীর আবেগ। কেক কেটে নানা আয়োজনে ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছেন সাকিব-তামিমরা। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট থেকেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী আয়োজনে শামিল হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন, বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে কর্তারাও ছিলেন এ আয়োজনে। বাংলাদেশ জাতীয় দল এখন দেশের বাইরে। তবে মিরপুর স্টেডিয়ামে চলছে বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্প। সেই ক্যাম্পে থাকা ক্রিকেটার সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, নাঈম ইসলাম, আল আমিন হোসেন, কামরুল ইসলাম রাব্বিসহ অন্য আরো ক্রিকেটার ও কোচরাও ছিলেন বিসিবির এ আয়োজনে।
হাজার হাজার মাইল দূর থেকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দ আয়োজনের অংশ হয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও। উইন্ডিজ সফরে থাকা দল সেন্ট লুসিয়ায় কেক কেটে শামিল হয়েছে দেশের গৌরবে। বিশ^ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান পদ্মার ওপারের ছোট্ট শহর মাগুরার সন্তান। উইন্ডিজ থেকে ভিডিও বার্তায় টেস্ট দলের টেস্ট অধিনায়ক কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ; বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য। আমার কাছে মনে হয়, এটা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় অবদান রাখবে। বাঙালি জাতির একটা স্বপ্ন ছিল, যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কারণেই পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। আশা করছি, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ চট্টগ্রামের সন্তান তামিম ইকবালের খুব একটা অভিজ্ঞতা নেই পদ্মা পাড়ি দেওয়ার ঝক্কি-ঝামেলার। তবে গোটা দেশের আবেগকে ঠিকই ধারণ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, বাংলাদেশের জন্য এটা বিশাল এক অর্জন। একটা সময় এমন ছিল যে আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, পদ্মা সেতু হবে কিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। উনার নিবেদন ও চেষ্টার কারণে আমরা সবাই পদ্মা সেতু পেয়েছি।’
‘পাশাপাশি এটাও বলব, যারা এ প্রকল্পের অংশ ছিলেন, তাদেরও ধন্যবাদ। বিশেষ করে যারা শ্রমিক ছিলেন, যারা কাজ করেছেন, তাদের বলতে চাই, আপনারা যা করেছেন, বাঙালি জাতি তা আজীবন মনে রাখবে। আমার ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পক্ষ থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’ উদ্বোধনী আয়োজনের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ক্রিকেটের পরিভাষায়ই তুলে ধরেন পদ্মা সেতুর গুরুত্ব। তার মতে, সেতুর কারণে ওই অঞ্চলের ক্রিকেট উন্নয়নের পথও মসৃণ হবে। তিনি বলেন, ‘গেম চেঞ্জার বলা হয় না? পদ্মা সেতু আসলে গেম চেঞ্জার। দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি অনেক কিছু বদলে যাবে এখন। আর সত্যি বলতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্রিকেট নিয়ে আমরা ওইভাবে জোর দিতে পারিনি। কিন্তু এখন আমাদের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ওই জায়গায় জোর দিলে ক্রিকেটেরও অনেক উন্নয়ন হবে।’ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনী উপলক্ষে বিসিবির পক্ষ থেকে বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানায় দোয়া মাহফিল ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বন্যাকবলিত সিলেট অঞ্চলে ইতোমধ্যেই ত্রাণ পাঠানো হয়েছে বলে জানালেন তিনি। বন্যার কবলে পড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও ত্রাণের প্রস্তুতি নেওয়া আছে বলে জানান তিনি।
হজের কারণে উইন্ডিজ সফরে যেতে না পারা অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম তার আবেগের প্রকাশ করেন সামাজিক মাধ্যমে। তিনি সেখানে লেখেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যেটির স্বপ্ন দেখে আসছিলাম আমরা, অবশেষে তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আমাদের একান্ত নিজস্ব পদ্মা সেতু নিয়ে গর্ব অনুভব করছি।’ ক্রিকেটারদের আরো অনেকেই তাদের উচ্ছ্বাস, আবেগ আর গর্বের কথা জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর মধ্যে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, ‘এটা তো বলার অবকাশ রাখে না যে এটার মূল্য কী। এখানে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, এটা বিরাট বিষয় আমাদের দেশের জন্য। আমাদের দেশ ভালো একটা জিনিস অর্জন করা এবং সেটার সুনাম হওয়া এটা একটা বিরাট ব্যাপার। নিজস্ব আবেগের অনেক বিষয় থাকে, অনেক সময় অনেক মানুষের ক্ষতিও দেখেছি চোখের সামনে (যখন পদ্মা সেতু ছিল না)। তারা এমন এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়েছে, এমন এমন সময় ছিল মানুষের পার হওয়ার প্রয়োজনেও হতে পারেনি। অনেক ব্যবসায়ীর অনেক ক্ষতি হয়েছে। এটা যে কত বড় একটা আশীর্বাদ আমাদের জন্য, একমাত্র যারা এ পথে যাওয়া আসা করছে সারা জীবন, তারাই বলতে পারবে। এখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, সেটা অবিশ^াস্য। আমার কাছে মনে হয়, এটা যদি রাজনৈতিকভাবে চিন্তা না করা হয়, তাহলে আমাদের একটা বিরাট গর্বের জায়গা।’