logo
আপডেট : ২৬ জুন, ২০২২ ১৫:৪৯
সেতুতে অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেখছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান
# বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের অভিনন্দন # উচ্ছ্বসিত চীনের রাষ্ট্রদূত পদ্মায় কাটালেন পূর্ণ রাত # অতিথি ভবন পদ্মা থেকে পদ্মায় গেলেন বিদেশিরা
তরিকুল ইসলাম

সেতুতে অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেখছেন
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় এবং এর উদ্বোধনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেখছেন বিশ্ব নেতারা। একই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণ রাষ্ট্র ও সরকার প্রাধানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তারা। পদ্মা সেতুর ফলে আঞ্চলিক যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং এই সেতু বাংলাদেশকে তার বাইরেও বহুদূর নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

 

পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী সেতুটি উদ্বোধন করলেও মূলত শুভেচ্ছা বার্তা আসা শুরু করে তার আগ থেকেই। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রধানরাও তাদের মূল্যায়ণ তুলে ধরেছেন। সেতু উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণ এবং অভূতপূর্ব মুহূর্তের সাক্ষী হতে বেশিরভাগই যোগ দিয়েছেন সেতুর বর্ণাঢ্য উদ্বোধনীতে।

 

রাষ্ট্রিয় অতিথি ভবন পদ্মায় শনিবার সকালে এসে পৌঁছান রাষ্ট্রদূত, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স, কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভরা। সেখান থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের নেতৃত্বে বিশেষ পরিবহন যোগে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনস্থল ও সুধী সমাবেশে যোগ দেন তারা।

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স, কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ মিলে প্রায় ৮০ জনকে হস্তান্তরযোগ্য নয় এমন পত্রে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সরকার। এর মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কনসালটেশনে ওয়াশিংটনে ও বৃটিশ হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য ছুটিতে লন্ডনে থাকায় অনুষ্ঠানস্থলে যেতে পারেননি। পাকিস্তানের হাই কমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকীর কোভিড-১৯ ধরা পড়ায় এবং কানাডিয়ান হাই কমিশনার লিলি নিকোলসও যেতে পারেননি।

 

সেতু উদ্বোধনের দিন শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট, ভুটান ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বার্তাগুলোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পদ্মা বহুমুখী সেতু সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেখছে শ্রীলঙ্কা। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে বলেছেন, এর ফলে অর্থনীতির গতি আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তায় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও শিল্প অগ্রগতি বাড়াতে সংযোগ এবং অন্তর্ভুক্তিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।

 

অভিনন্দন বার্তায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেছেন, পদ্মা সেতুর আইকনিক রোড-রেল কাঠামো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করবে। পদ্মা সেতুর ফলে আঞ্চলিক যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশকে তার বাইরেও নিয়ে যাবে বহুদূর। পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভুটান সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। লোটে শেরিং বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু সফল ভাবে সম্পন্ন করায় এবং সেতু উদ্বোধনে নেপালের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহণ করুন।

 

পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নেপালের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা। অভিনন্দন বার্তায় শের বাহাদুর দেউবা বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনে নেপালের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহণ করুন। পদ্মা সেতুর ফলে আঞ্চলিক যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

 

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দুদিন আগে অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও পাকিস্তান। পদ্মা সেতু নির্মাণকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংযুক্তি বিকাশে বাংলাদেশের নেতৃত্বের আরেকটি উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

 

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে মানুষ ও পণ্য পরিবহনের জন্য টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ অপরিহার্য। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করবে। তেমনি এটি ব্যবসার বিকাশ ও জীবনের গুণগত মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ দক্ষিণ এশিয়ায় সংযুক্তির বিকাশে বাংলাদেশের নেতৃত্বের আরেকটি দৃষ্টান্ত।

 

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সমাপ্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শেহবাজ শরীফ। অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্তিতে আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সে দেশের জনগণকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় এই সেতুটির উদ্বোধন এক দৃষ্টান্ত উদাহরণ। এটি বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই ও স্থায়ী উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যেটা প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় সংকল্পের একটি প্রমাণ। আমি রাষ্ট্রপ্রধানের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি, সেইসঙ্গে বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের দীর্ঘস্থায়ী উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আমার ব্যক্তিগত অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ‘অনুগ্রহ করে আমার এই অভিনন্দন সর্বোচ্চ বিবেচনায় গ্রহণ করুন।

 

আলোকোজ্জ¦ল পদ্মা দেখার ইচ্ছে পূর্ণ করতে এবং উদ্বোধনীর নৈশকালীন ছবিগুলো ধারণ করতে শুক্রবার রাতেই পদ্মা সেতু এলাকায় পৌঁছে যান ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। উচ্ছ্বসিত চীনের রাষ্ট্রদূত রাতে সেখানেই অবস্থান করলেন। সকালে অন্য কূটনীতিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দিলেন।

 

পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে এক ভিডিও বার্তায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, পদ্মা সেতু আমার কাছে সাহসের একটি প্রতীক, সংকল্পের প্রতীক এবং সমৃদ্ধিরও প্রতীক। ‘আজ শনিবার একটি মহৎ দিন! বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতু অবশেষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, আর এক দশকের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে! এ পর্যায়ে আমি এই অসামান্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে চাই! আজ আমার কাছে রয়েছে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি এই ক্ষুদ্রাকৃতির পদ্মা সেতু। সেতুটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়নকারী কোম্পানি চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ বা এমবিইসি এটিকে আমার কাছে একটি স্মারক হিসেবে পাঠিয়েছে।

 

নিজের অর্থে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণে সাহসিকতার প্রশংসা করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, সেতুটি আমার কাছে সাহসের একটি প্রতীক। স্বল্পোন্নত দেশ বাংলাদেশ এমন সেতু নির্মাণ করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল। আজ সেতুটি শুধু বাস্তবায়নই হয়নি, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে এর শতভাগ নির্মিত হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে যদি সাহসের কোনো সীমা না থাকে, তবে আকাশ তার সীমা। পদ্মা সেতু একটি সংকল্পের প্রতীক। সেতুটি নির্মাণে সময় লেগেছে আট বছর। শক্তিশালী পদ্মার স্রোতধারার ওপর এর অবয়ব একটি গল্প বলছে যে কীভাবে মানব প্রকৌশল প্রকৃতির শক্তিকে জয় করেছে। নদী হয়তো হাজার বছর ধরে বহমান, কিন্তু এর চেয়ে বেশি টেকসই হলো সেই মানুষের অধ্যবসায়, যারা একদম শূন্য থেকে সেতুটি তৈরি করেছেন।

 

মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন, ঐতিহাসিক এই দিনে বাংলাদেশের ভাইবোনদের ভারতের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। পদ্মা সেতুকে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশ ও উপ-অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করবে। বাংলাদেশ সরকার নানা প্রতিকূলতার মাঝেও পদ্মা সেতু প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এটি দেখে আমরা খুবই আনন্দিত। পদ্মা সেতুর ফলে এ অঞ্চলে বাণিজ্য ও যোগাযোগ আরো সহজতর হল।

 

এদিন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, যুগান্তকারী এই প্রকল্পের সফল সমাপ্তিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে ভারতের সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছে। বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রকল্পটির সমাপ্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের সাক্ষ্য দেয়। এই সাফল্য প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে প্রমাণ করে এবং এতে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, যা আমরা অবিচলভাবে সমর্থন করে এসেছি যখন বাংলাদেশ একাই এই প্রকল্পটি এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।