ত্বকে নানা সমস্যা ও ঘামাচি গরমকালের একটি সাধারণ সমস্যা। বড়দের তো বটেই, শিশুদেরও গরমকালে ঘামাচির সমস্যা দেখা দেয়। ঘামাচি থেকে কোনো বড় সমস্যা না হলেও, এর থেকে জ্বালা ও ত্বকের চুলকানিতে কষ্ট পায় শিশুরা।
গরম এলেই শিশুদের শরীরে ঘামাচি দেখা যায়। কয়েক মাসের শিশু থেকে শুরু করে, স্কুলগামী শিশু প্রায় প্রত্যেকের শরীরই ঘামাচিতে ঢেকে যায়। একে মিলিয়ারিয়া রুব্রা, মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টলাইনও বলা হয়। পেট, বুক, ঘাড়, নিতম্ব এবং শরীরের ভাঁজযুক্ত জায়গায় ঘামাচি বেশি হয়ে থাকে।
ঘামাচির কারণ
লম্বা ছুটিতে দীর্ঘ ভ্রমণ বা অধিক ঘামের কারণেও ঘামাচি দেখা দিতে পারে। মূলত শরীরে বেশি ঘামের কারণে রোমকূপ বন্ধ হয়ে গিয়ে ঘাম বেরোতে না পারলে ঘামাচি হয়। শিশুদের রোমকূপ ছোট হওয়ায় তাদের প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বেশি ঘামাচি হয়ে থাকে।
লক্ষণ
ঘামাচি ছোট ছোট লাল রঙের ফোড়ার মতো দেখায়। এর ফলে ত্বকে চুলকানি হয় ও শিশুরা কাঁদতে থাকে। কাপড় দিয়ে ঘষা খেলে জ্বালা বাড়ে যায়।
সতর্কতা
ঘামাচি যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
খরতাপ থেকে দূরে থাকতে হবে।
শিশুর পোশাক খুলে কিছুক্ষণ ছেড়ে দিন এবং সহনীয় ঠান্ডা পানিতে গোসল করান। অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছিয়েও পরিষ্কার করতে পারেন।
শিশুদের ঢিলেঢালা ও সুতির কাপড় পরাবেন।
শিশুর যাতে ঘামাচি না হয়, সে জন্য তোয়ালে দিয়ে মুছে শিশুর গা শুকাবেন না।
শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য অন্তত ফ্যান চালান।
শিশুরা যাতে প্রাকৃতিক হাওয়া পায়, সে দিকে লক্ষ রাখুন।
ত্বকের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ক্রিম ব্যবহার করবেন না।
স্বস্তি পেতে ঘরোয়া উপায়
শিশুকে ঠান্ডা পরিবেশে রাখুন। প্রচলিত আছে, ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে গোসল করলে ঘামাচি সেরে যায়।
ঘরে এয়ারকন্ডিশনার থাকলে ভালো হয়, না হয় ফ্যানের বাতাসও ঘামাচি দূর করতে উপকারী।
পরিমিত পরিমাণে বেবি ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে।
যা করতে হবে
ঘামাচিতে তেমন কিছু না হলেও সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানকে রোদ থেকে দূরে রাখুন এবং নিজেও রোদ থেকে দূরে থাকুন, বিশেষত গরমে শিশুদের বাইরে নিয়ে গেলে তাদের ছায়ায় রাখুন। এ জন্য ছাতা ব্যবহার করুন। এ ছাড়া গরমে শিশু যাতে পানিশূন্যতার শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ সময় প্রচুর পানি পান করান।
গরমের দিনে শিশুদের অবশ্যই হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরানো উচিত। তবে প্লাস্টিকের স্তরবিশিষ্ট ডায়াপার পরাবেন না। ঘাড়, বাহুমূল, জঙ্ঘা ও ভাঁজ হয় শরীরের এমন অংশে বেশি ঘাম জমে। এই জায়গাগুলো ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে দিন এবং সেই জায়গাগুলো যাতে শুকনো থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
সন্তান যদি ঘন ঘন ঘেমে যায়, তাহলে তাদের ত্বক ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিন। ত্বক শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। ঘরোয়া উপায়ে শিশুর ঘামাচি না কমলে এবং চুলকানোর কারণে রক্ত বেরোলে বা ঘা হয়ে গেলে বিলম্ব না করে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
চিকিৎসা
ঘামাচিতে লাল ভাব, ঘা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো কিছুদিন কিউরিল অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যেতে পারে। ক্যালামিলন লোশন ঝাঁকিয়ে ঘামাচি আক্রান্ত শরীরে ঘণ্টাখানেক লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে এ লোশন তিন থেকে চার দিনের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
আর যদি ফোসকা, ঘা, ফোড়া হয়ে যায় বা ত্বকে অন্য আরও সমস্যা দেখা দেয়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ মুখে খেতে হবে। এ অবস্থায় চিকিৎসক উপসর্গ দেখে চিকিৎসা দেবেন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ত্বক, চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।