বৃষ্টি একটু হলেও আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল। তারপরও ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেও বড় ব্যবধানে হয়েছে বাংলাদেশকে। বৃষ্টির কারণে চতুর্থ দিনে গড়ানো টেস্টে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ তে জিতে নিয়েছেন।
বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ বাঁচাতে একমাত্র বৃষ্টিই ছিল ভরসা। বৃষ্টিই ম্যাচের চতুর্থ দিনে ঠিকমতো সময় খেলা শুরু করতে দেয়নি। সকাল তো গেছেই, দুপুরেও খেলা শুরু হতে পারেনি। আসলে বৃষ্টির উত্তাপটা এতটা বেশিই ছিল কোনো দলই মাঠে আসতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত বিকাল তিনটায় খেলা শুরুর কাঙ্খিত ঘোষণাটা আসে। অবশ্য বাংলাদেশের জন্য তা মোটেও কাঙ্খিত ছিল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য সময়টা ছিল তো খুবই বিরক্তিকর। কেননা এই বৃষ্টির কারণেই তাদের একটা দিন অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। নতুন তৃতীয় দিনেই ম্যাচের ফল হয়ে যাওয়ার খুবই সম্ভাবনা ছিল।
প্রথম ইনিংসে ১৭৪ রানে পিছিয়ে থাকার সময় ম্যাচের ফল নিয়ে অনেকেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে বৃষ্টির আগে খেলা বন্ধ হওয়ার সময়ই বাংলাদেশের লো অর্ডার ব্যাটাররা ক্রিজে আসতে শুরু করেছিলেন। ৬ উইকেট হারিয়ে করেছিল ১৩২ রান। চতুর্থ দিনে তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবার ব্যাটিংয়ে নামাতে অন্তত ৪২ রানের দরকার ছিল। নুরুল হাসানের সাহসিকতাপূর্ণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে বাংলাদেশ সেই কাজটি করতে পেরেছে। উইকেটরক্ষক কাম ব্যাটার নুরুল হাসান শেষ পর্যন্ত ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন। তার ব্যাটিংয়ের কল্যাণে বাংলাদেশ ইনিংস হার থেকে রেহাই পায়। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে বড় কোনো লক্ষ্যমাত্রা দিতে পেরেছিল তা নয়। মাত্র ১৩ রানের লক্ষ্যমাত্রা। আর তা যা হওয়ার তাই হয়েছে। লড়াইয়ের ফল আগেভাগে জেনেও বল হাতে পরীক্ষায় নামতে হয়েছে।
নুরুল হাসান অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে বলার মতো এটুকুই। আগের দিন ১৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে তার সঙ্গী হিসেবে ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তিনি অবশ্য সেদিন রানের খাতা খুলতে পারেননি। পরের দিন খুলেছিলেন, তবে নামের পাশে মাত্র ৪ রান লেখাতে পেরছেন। তার তার ব্যক্তিগত রানের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছিল ক্রিজে তার উপস্থিতি। ৩১ বল খেলেছেন। তার সঙ্গ নিয়েই নুরুল হাসান কাজের কাজটি করেছেন। বাংলাদেশকে ইনিংস ব্যবধানের হারের যে হুমকি চোখ রাঙাচ্ছিল তা থেকে দলকে তিনি রক্ষা করেন। মেহেদি হাসানের সঙ্গে তার ৩০ রানের জুটি ছিল।
পরের ব্যাটারদের কেউ আর রানের খাতা খুলতে পারেননি। এবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ তিনজনই শূন্য রানে আউট হয়েছেন। তবে তারাও নুরুল হাসানকে ভালোভাবে সঙ্গ দিয়েছেন। তাই তো এ সময়ে বাংলাদেশের ইনিংসে যোগ হয়েছে আরো ৩৮ রান। নুরুল হাসান তার ৬০ রানের ইনিংসটি সাজাতে ছয়টি বাউন্ডারির পাশাপাশি দুটো ওভার বাউন্ডারিও মেরেছিলেন।
চতুর্থ দিনে কেমার রোচ বল হাতে নিলেও কোনো উইকেটের দেখা পাননি। এদিন হারানো বাংলাদেশের চার উইকেটের দুটো নেন জেডেন সিলেস। আর একটা নেন আলঝারি জোসেফ। অন্যটি ছিল রান আউট। ফলে কেমার রোচ, আলঝারি জোসেফ ও জেডে সিলেসের উইকেট সংখ্যা দাঁড়ান তিন।
১৩ রানের লক্ষ্য খেলতে নেমে হেসেখেলেই জয়টা তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ জন্য মাত্র ২.৫ ওভার খেলতে হয় তাদের। ক্রেগ ব্রাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেল উভয়ে ১৩ বল খেলেছেন। ব্রাথওয়েট করেন ৪ রান, ক্যাম্পবেলের সংগ্রহ ছিল ৯। চমৎকার ব্যাটিংয়ের কল্যাণে কাইল মায়ার্স শুধু ম্যাচে নয় সিরিজ সেরাও হয়েছেন।
দুই হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশের টেস্ট মিশন শেষ হয়েছে। এখন শুরু হবে টি-টোয়েন্টি লড়াই। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টির প্রথমটি মাঠে গড়াবে ২ জুলাই। সফরে বাংলাদেশ সমসংখ্যক ওয়ানডে ম্যাচ খেলবে। ১০ জুলাই হবে প্রথম ওয়ানডে। শেষ ওয়ানডে ১৬ জুলাই। এ ম্যাচের মাঝ দিয়ে শেষ হবে বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর।