logo
আপডেট : ২৮ জুন, ২০২২ ১৫:১১
চীনা তুলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
চাপে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প
জাফর আহমদ

চাপে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

মানবাধিকার ও শ্রম আইন ইস্যুতে চীনের তুলাজাত পোশাক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা। চলতি ২০২২ সালের ২১ জুন থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা শঙ্কিত। বাংলাদেশে ব্যবহৃত তুলার ৩০ ভাগ আসে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে। অন্যান্য এ্যাক্সেসোরিসের বড় অংশ আসে চীন থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকরা।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা মনে করছেন, যখন করোনা ও বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির মোকাবিলা করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখন এই নিষেধাজ্ঞা এলো। তারা এই নিষেধাজ্ঞা কমপক্ষে এক বছর স্থগিত চান। যাতে তারা প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

তারপর নিষেধাজ্ঞা এলে তা মোকাবিলা সহজ হবে বলে মনে করছেন তারা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার এবং তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি সমূহের উদ্যোগ নিতে দাবি জানাচ্ছে এ খাতের উদ্যোক্তারা।

উদ্যোক্তারা বলছেন, চীন বাংলাদেশে উৎপাদিত তৈরি পোশাকের বড় কাঁচামাল সরবারহকারী দেশ। বিশেষ করে তুলা ও কাপড়ের বড় অংশ আসে চীন থেকে। চীন তুলনামূলকভাবে কাছের দেশ হওয়া এবং কম সময়ে চীন থেকে পণ্য সরবারহের সুবিধা থাকার কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা অনেকটাই চীন-নির্ভর। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে সমস্যায় পড়বে উদ্যোক্তা। এমনিতেই তুলার বাজার অস্থির, তারপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর অস্থিরতা আরো বাড়বে। তৈরি পোশাকের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে।

এ বিষয়ে নিট তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ভোরের আকাশকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে জিনজিয়াং প্রদেশের ফেবরিক শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ ইউরোপেও রপ্তানি করা যাবে না। এর ফলে চীন জিনজিয়াংয়ের তুলা বিশ^বাজার থেকে তুলে নেবে, আমরা ব্যবহার করতে পারবো না। এতে আমাদের তুলার সমস্যা আরো ঘনীভূত হবে। গত এক বছর ধরেই আমরা তুলার সংকটে আছি, অস্থিরতা বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে এই অস্থিরতা আরো বাড়বে। তুলা আমদানি করতে ব্যয় বাড়বে, ব্যয় বাড়লেও সুতা তৈরি করতে খরচ বাড়বে। আর খরচ বাড়লে তার প্রভাব পড়বে রপ্তানি ব্যয়ে।

অন্যদিকে চীনের বাজার বাংলাদেশের রপ্তানি আশঙ্কাজনকভাব কমে গেছে। আগামীতে চীনে রপ্তানি আরো কমবে বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা নেতা। তিনি বলেন, জিনজিয়াংয়ের তুলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে চীন এই তুলা দিয়ে নিজেদের ব্যবহারের জন্য পোশাক বানাবে। এতে চীনের বাজারে আগামীতে আমাদের রপ্তানি আরো কমবে।
বাংলাদেশের সংকটের জায়গা হলো বাংলাদেশে বোনা কাপড়ের মোট চাহিদার ৬৫ শতাংশ আমদানি করে এবং এই আইটেমের বড় অংশ আসে চীন থেকে।

এ বিষয়ে অন্যতম বড় উদ্যোক্তা ও বিজিএমইএ-এর অন্যতম নেতা শোভন ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে সময়ে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যখন আমরা একটি বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি মোকাবিলা করছি। যুক্তরাষ্ট্র চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের তুলাকে শুধু নিষেজ্ঞাধাই জারি করেনি, ওই অঞ্চলের পানি ও বায়ুতে বানানো ফেব্রিক্সকে চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ মেশিন আবিষ্কার করেছে। কোনো দেশ ভুল করেও জিনজিয়াং প্রদেশের তুলা দিয়ে ফেব্রিক্স বানিয়ে রপ্তানি করলে যুক্তরাষ্ট্র ওই বিশেষ মেশিন ব্যবহার করে তা ধরে ফেলবে।

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য বিজিএমইএ এর পক্ষ থেকে মেশিন কেনার জন্য আমরা আহবান জানিয়েছি। এটা কোনো একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উচ্চমূল্যের মেশিন কেনা সম্ভব নয়।

আমরা চীন থেকে তুলা আমদানি করার সময় সেখানকার রপ্তানীকারকদের কাছে থেকে নিশ্চয়তা রাখছি তারা জিনজিয়াং এর তুলা পাঠাবে না। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই আমরা এ ধরনের প্রস্তুতি রেখেছি। এ মুহূর্তে নিষেধজ্ঞিা জারি করার পর তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়ে গেলো। দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন

বিজিএমইএ-এর সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক দুই প্রতিনিধি বাংলাদেশে ঘুরে গেছে। এ সময় আলোচনায় সংগঠনকে অবহিত করা হয় যে, বাংলাদেশ চীন থেকে তুলাজাত কাপড় আমদানি করলে সেই তুলা যদি জিনজিয়াং প্রদেশের হয় এবং সেই কাপড় থেকে তৈরি পোশাক যদি যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা হয় তাহলে তা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। যদি কোনোভাবে প্রমাণিত হয় যে পোশাকগুলো জিনজিয়াংয়ের তুলাজাত কাপড় থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে, তাহলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।

সূত্রটি জানায়, জিনজিয়াং প্রদেশের যেখানে এ তুলা তৈরি হয়, সেখানে উইঘুর মুসলিম নির্যাতন, শিশু শ্রম ও শ্রম আইনের লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে থাকে। যা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার ও শ্রম আইনের পারমিট করে না। এ কারণে এখানে উৎপাদিত পণ্য নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। বেশ কিছুদিন ধরে বলা হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র প্রদেশটি থেকে উৎপাদিত পণ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারিও করেছিল। সর্বশেষ জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে বানানো ফেব্রিক জাত পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাক্তা জারি করলো। যা ২১ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে।