মাত্র দুই বছর চার মাস বয়সেই চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসকদের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যু হয় সাংবাদিককন্যা রাইফার। ২০১৮ সালের ২৯ জুন মধ্যরাতে এই হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটলেও চার বছরেও শেষ হয়নি পুলিশি তদন্ত। বর্তমানে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির তদন্ত করছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর ইন্সপেক্টর আবু
জাহর মো. ওমর ফারুক।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে।’ একই প্রসঙ্গে রাইফার শোকাহত বাবা ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য রুবেল খান বলেন, ‘ম্যাক্স
হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসকদের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে আমার একমাত্র শিশু কন্যা রাফিদা খান রাইফার অকাল মৃত্যু হয়। আমি মনে করি, এটি 'মেডিকেল মার্ডার' ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই এই নির্মম ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাহলে এদেশে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর হার হ্রাস পাবে এবং দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটা আমুল পরিবর্তন আসবে। এ জন্যই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। তবে গত চার বছরেও পুলিশের তদন্তই শেষ না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক ও হতাশাজনক।’
তিনি বলেন, ‘ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রাইফার অকাল মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে রাইফার চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটি ওই ম্যাক্স হাসপাতালের ১১টি ত্রুটি চিহ্নিত করেছে। তদন্তকারী পিবিআই কর্মকর্তা যদি সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদন দুটির সহযোগিতা নেন, তাহলে এই মামলার তদন্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন।’
চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু প্রতিরোধ এবং দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এবং চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের স্বার্থে রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের
বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশীট প্রদানের দাবি জানান রাইফার বাবা রুবেল খান।
তিনি অভিযোগ করেন, চট্টগ্রামের বিএমএ নেতারা ও ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত চিকিৎসকদেরকে বাঁচানোর জন্য এখনও নানামুখী অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ক্ষমতা ও টাকার জোরে সবকিছুই নিজেদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করছে।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন রাইফার শোকাহত বাবা সাংবাদিক রুবেল খান।
এদিকে রাইফার শোকাহত মা রুমানা খান বলেন, ‘রাইফার বড় কোনো অসুখ ছিল না। প্রাণঘাতি অসুখ না হওয়ার পরও চিকিৎসকদের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছে সে। যাদের কারণে আমার কোল খালি হয়েছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
প্রসঙ্গত. সামান্য গলা ব্যথা নিয়ে ২০১৮ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রাইফাকে। কিন্তু ওই হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তাকে ভুল চিকিৎসা দেয়া হয় এবং চিকিৎসায় সীমাহীন অবহেলা করা হয়। চিকিৎসকরা রাইফাকে রফিসিন নামের একটি অ্যান্টিবায়োটিক পুশ করেন। ওই অ্যান্টিবায়োটিক পুশ করার পর থেকে রাইফার শরীরের অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যেতে থাকে। ওভারডোজ অ্যান্টিবায়োটিক পুশ করায় রাইফার রিঅ্যাকশন শুরু হয়। ওই রিঅ্যাকশনের কারণে তার শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি হয়। খিঁচুনির কারণে রাইফার যখন মুমূর্ষু অবস্থা, তখন আবারও ভুল চিকিৎসার শিকার হয় সে। তাকে এনআইসিইউতে না নিয়ে কেবিনের ভেতর ওভারডোজ সেডিল পুশ করা হয়। এভাবে বারবার অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে ২০১৮ সালের ২৯ জুন মধ্যরাতে ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রাইফা।
চাঞ্চল্যকর এই অকাল মৃত্যুর ঘটনায় ওই বছরের ১৮ জুলাই ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নগরীর চকবাজার থানায় এজাহার দায়ের করেন রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান। দু’দিন পর এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। চকবাজার থানায় দায়ের করা মামলায় ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত, ডা. শুভ্র দেব ও বেসরকারি ম্যাক্স
হাসাপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খানকে আসামী করা হয়।