logo
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৫:৪৬
বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে ভাড়ানি খাল
বরগুনা প্রতিনিধি

বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে ভাড়ানি খাল

বরগুনা জেলা সদরে ভাড়ানি খাল খননের পর তীব্র স্রোতে ভাঙছে বসতি এলাকা ।

বরগুনা: বরগুনা পৌর শহর থেকে বুড়ির চর ইউনিয়নের গুলবুনিয়া পর্যন্ত খনন করা হয়েছে নয় কিলোমিটার দৈর্ঘের ভাড়ানি খাল। খালটি এখন শহর ও উভয় পাড়ের বাসিন্দাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

বরগুনা জেলা সদরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি খননের পর স্রোতে উভয়পাড়ে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বরগুনা-পৌর শহরের একাংশসহ বরগুনা-বাঁশবুনিয়া-গুলবুনিয়া সড়কটিও হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়াও নয় কিলোমিটার খালে নির্মাণ করা মোট ১১টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে শহরের দুটি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দখল ও দূষণে মৃতপ্রায় ভাড়ানি খালটি পুনরুদ্ধারে পরিবেশবাদী বেশ কয়েকটি সংগঠন আন্দোলন করছে।

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা খালটির দখলমুক্ততে উচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়ের পর খাল দখলমুক্ত করতে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে উচ্ছেদাভিযান শুরু হয়।

পাউবো কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে খালটি খননের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গরীবে নেওয়াজ ও পটুয়াখালীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল মামুন এন্টারপ্রাইজ যৌথভাবে কার্যাদেশ পায়। বরাদ্দকৃত এ কাজের দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ স্থানভেদে ২৬ থেকে ৩০ মিটার বা ৮৫ থেকে ১০০ ফুট এবং নিম্নস্তরের প্রস্থ ১২ মিটার বা ৩৯ দশমিক ৩৬ ফুট এবং গভীরতা ১ দশমিক ৫ মিটার থেকে ২ মিটার পর্যন্ত বা ৫ ফুট থেকে ৬ দশমিক ৫০ ফুট। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খালটি খননের কাজ শেষ হয়। খননের ফলে খালটিতে এখন অবাধে জোয়ার-ভাটার প্রবাহ শুরু হওয়া মাত্র তিন মাসের মধ্যেই উভয় পাড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। আষাঢ় শ্রাবণের বৃষ্টি ও জোয়ারের তোড়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে বরগুনা শহরের মাদরাসা ও জেলা পরিষদ সেতু দুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। খাল খননের ফলে পিলারের নিচের মাটির ভিত নড়বড়ে হয়ে যায়। স্রোতের তোড়ে মাটি ভেসে গিয়ে একইভাবে শহরের মাছ বাজার থেকে শুরু করে গুলবুনিয়া পর্যন্ত মোট ১১টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এ ছাড়া খালের পশ্চিম পাড়ের বরগুনা-চালিতালী সড়কের পৌর শহরের মাদরাসা সড়ক থেকে শুরু করে খাদ্যগুদাম হয়ে জেলা স্কুল ও বাঁশবুনিয়া এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে সড়কের একাংশ ভেঙে খালে পড়েছে। একইভাবে পূর্বপাশের শহীদস্মৃতি সড়ক হয়ে মাইঠা, লবনগোলা থেকে গুলবুনিয়া পর্যন্ত ভাঙনে ঝুঁকির মুখে রয়েছে খাল পাড়ের বেশ কিছু স্থাপনা।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর বরগুনা প্রেসক্লাবে বরগুনা পৌর শহরের খাকদোন ও ভাড়ানি খালের দুই পাড় সংরক্ষণ, উপকূলীয় সুরক্ষায় বেরিবাঁধ নির্মাণ ও মেরামত বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে খাকদোন নদী ও ভাড়ানিখালের দুপাড় উঁচু করে বাঁধ ও গাইডওয়াল নির্মাণসহ বনায়ন, শহরের জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে কালভার্ট ও স্লুইসগেটগুলো সংস্কার, খাকদন নদী, ভাড়ানিখাল খনন, শহরের পর্যটন শিল্পকে দৃষ্টিনন্দন করার বিষয় আলোচনা করা হয়। এতে পাউবোর বরিশাল বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কাইছার আলম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বরগুনা পৌরসভার মেয়র কামরুল আহসান মহারাজসহ সচেতন নাগরিকরা ভাড়ানি খালের ভাঙন নিয়ে আলোচনা ও প্রতিকারে গাইড ওয়ালসহ সুরক্ষা বাঁধ স্থাপনের দাবি জানান।

বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ ভোরের আকাশকে বলেন, জোয়ার ভাটার অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে গিয়ে অপরিকল্পিতভাবে খালটি খনন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সুবিধার জন্য খনন করা হলেও এখন সেই খননই উভয়পাড়ের বাসিন্দাদের বসতিসহ স্থাপনা, উভয় পাড়ের সড়ক ও ১১টি সেতুর জন্য বিপদ ডেকে এনেছে। দ্রত উভয়পাড়ে সুরক্ষাবাঁধ স্থাপন না করলে সড়ক, সেতু ও পাড়ের বসতিসহ অনেক স্থাপনা খালের পেটে চলে যাবে।

বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানির হোসেন কামাল ভোরের আকাশকে বলেন, অনেক আন্দোলনের পর খালটি দখলমুক্ত করে অপরিকল্পিতভাবে খননের পর এখন ভাঙনের শিকার হচ্ছে সড়ক, স্থাপনা, পারাপারের জন্য সেতু। খালটি খননের সময় মাছ বাজার থেকে বাঁশবুনিয়া পর্যন্ত সুরক্ষাবাঁধ স্থাপন করা হলে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি উভয়পাড় সুরক্ষিত থাকত। তবে পাউবো চাইলে এ প্রকল্প এখনো হাতে নিতে পারে।

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা আন্দোলন করেছি, খাল দখলমুক্ত হয়েছে এবং খননের কাজও শেষ। কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে খাল কেটে কুমির আনা হয়েছে। উপকার হয়েছে, কিন্ত যে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তা থেকে সুরক্ষা দিতে পাউবোর ভূমিকা রাখতে হবে। দ্রুত খালের উভয়পাড়ে সুরক্ষাপ্রাচীর নির্মাণ করে বাঁধ স্থাপন না করলে হুমকির মুখে পড়বে সড়ক, ব্রিজ ও এলাকার বাসিন্দাদের বসতি। খালটির উভয় পাড়ে এখন সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করলে এটি মানুষের ঘোরাফেরা ও বিনোদনের আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হবে।

বরগুনার পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ ভোরের আকাশকে বলেন, ইতোমধ্যে পৌর শহরের দুটি ব্রিজ ঝুঁকিতে থাকায় বন্ধ করা হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও বিভাগীয় প্রকৌশলীর সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা পাউবোকে সব ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তত।

পাউবো বরিশাল বিভাগীয় তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কাইছার আলম ভোরের আকাশকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ করা যায় না। বরগুনায় ৫টি প্রকল্প অনুমোদন চাওয়া হলেও ২টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। খাকদন নদী ও ভাড়ানি খালের পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করে অনুমোদন প্রস্তাব করা যেতে পারে।

ভোরের আকাশ/আসা