ঢাকা: আয়ুষ্মান রুদ্রর চোখেমুখে আনন্দের বন্যা। বাবা-মায়ের সঙ্গে ফার্মগেটের মার্কেটগুলোতে ঘুরছে। ঘুরে ঘুরে জামা-জুতা-গেঞ্জি-প্যান্ট-খেলনা দেখছে। কিন্তু কোনটা রেখে কোনটা নেবে তা মেলাতে পারছে না দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া রুদ্র। ইতোমধ্যে কিছু কেনা হয়ে গেছে। তার বাবা ব্যবসায়ী। ব্যস্ততার কারণে ছোট্ট রুদ্রকে নিয়ে খুব একটা বের হতে পারেন না। আজ (গতকাল) এসেছেন। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চায় রুদ্র। সামনে পূজা, এই পূজায় তার সবকিছু চাই। পূজার কেনাকাটার পাশাপাশি ব্রাজিলের জার্সিও কিনেছে সে। পূজার আনন্দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্বকাপের আনন্দ।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রুদ্র যেন একটু লজ্জাই পায়। লাজুক হেসে বলে, কিছু কেনা হয়েছে। এখন ঘুরে ঘুরে দেখছি। পছন্দ হলেই কিনব। এখনও জামা-জুতা কেনা বাকি। তুমি তো ব্রাজিলের সমর্থক। জার্সি কিনেছ দেখছি! আবারও হাসে রুদ্র। বলে- সামনে বিশ্বকাপ, সে জন্য কিনলাম। কথা শেষ না হতেই তার বাবা বলেন, আমাদের যৌথ পরিবার। সবার জন্য কেনাকটা করতে হয়। এখন নিউমার্কেটে যাব, ছেলেমেয়েসহ অন্যদের কিছু শপিং বাকি রয়েছে। পূজা এলে সাধ্যমতো সবাইকে দেয়ার চেষ্টা করি। না হলে প্রশান্তি পাই না। পূজা সামনে রেখে এভাবে রাজধানীর শপিংমলগুলোতে কেনাকাটা চলছে। বাড়তে শুরু করেছে ভিড়। তবে তা আশানুরূপ নয়। বিক্রেতারা মনে করছেন, এখনও সময় আছে। সামনে ভিড় আরও বাড়বে।
শরৎকাল আসেই যেন দুর্গাপূজার বার্তা নিয়ে। এবার আশ্বিনেই দেবীদুর্গা আসছেন মর্ত্যলোকে। দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বড় উৎসবের আয়োজনও বেশ বড়। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে পূজার প্রস্তুতি। চারপাশে পূজার আমেজও ছড়িয়ে পড়েছে। পূজা মানে ছোট-বড় সবারই চাই নতুন পোশাক। নতুন পোশাক পরে অঞ্জলি দেয়ার রীতি বেশ প্রচলিত। অনেকের আবার ষষ্ঠী থেকে দশমী প্রতিদিনই চাই নতুন পোশাক। সেই সঙ্গে কাছের আত্মীয়দের মধ্যেও চলে নতুন পোশাক দেয়ানেয়া। সে জন্য দুর্গাপূজা এলেই প্রতিবছর শপিংমলগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। ফুটপাতগুলোতেও বাড়ে ভিড়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিজান পয়েন্ট মার্কেটের শাড়ি ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বেচাকেনা আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে আমাদের আশা ছিল আরও বেশি। কারণ আমরা বছরে ঈদ এবং দুর্গাপূজার জন্য অপেক্ষা করি। এই সময় আমাদের ভালো বিক্রি হয়। কিন্তু এ বছর আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি না। তিনি বলেন, পূজা এবং ঈদ সামনে রেখে অনেকেই কলকাতায় চলে যান। যারা যান তাদের বেশিরভাগই রাজধানীতে বাস করেন। সে কারণে রাজধানীর শপিংমলগুলোতে এর প্রভাব পড়ে। ঢাকার বাইরে এর প্রভাব ততটা পড়ে না। ফলে তাদের বেচাকেনা ভালো থাকে।
একই প্রসঙ্গে ফার্মভিউ সুপার মার্কেটের শাড়ি ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের বেচাকেনা ভালোই বলা যায়। দিন যাচ্ছে আর বিক্রি বাড়ছে। এখন যারা কেনাকাটা করছেন, তাদের বেশিরভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের। তারা এখন আমাদের প্রধান ক্রেতা। এখনও সময় আছে, আশা করছি আরও ভালো বেচাকেনা হবে।
এদিকে পূজা সামনে রেখে ডিজিটাল বাজারগুলোও সরব হয়েছে। অনলাইনে চলছে নানা পোশাকের তোড়জোড় প্রচারণা, সঙ্গে কেনাকাটাও। অনেক দোকান অনলাইন, অফলাইন দুভাবেই বিক্রি করছে। কোনো কোনো পেজ দিচ্ছে কাস্টমাইজড সুবিধা। কাপল ড্রেস এবং ফ্যামিলি ড্রেসগুলোর বেশ চাহিদা। বাবা-মায়ের পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হচ্ছে বাচ্চাদের পোশাক। অনলাইনে নেয়া হচ্ছে এসব অর্ডার। এগুলোর দাম এক হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কোনো কোনো পেজ থেকে আরও কমে কেনা যাচ্ছে। কুমিল্লা খাদি নামক পেজে ফতুয়া, পাঞ্জাবি এবং থান কাপড় ৭০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে কেনা যাচ্ছে। একইভাবে এবারের পূজায় জামদানি, সুতি শাড়ি, টাঙ্গাইল, কাতান সিল্ক, মণিপুরি শাড়ির পাশাপাশি ইন্ডিয়ান বিভিন্ন সিল্কের শাড়িরও চাহিদা রয়েছে। যেগুলোর দাম পড়বে এক হাজার থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে।
সাধারণ মার্কেটের পাশাপাশি রাজধানীর অভিজাত মার্কেট যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন প্লাজা, এলিফ্যান্ট রোড, সীমান্ত, স্কয়ার, বেনারশি পল্লি, হকার্স, গাউছিয়া, নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, চন্দ্রিমা, রাজধানী, বঙ্গবাজারসহ সব শপিং কমপ্লেক্সেই ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ছে।
ভোরের আকাশ/আসা