logo
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৬:৫৪
হিজড়া পরিচয়ে চাঁদাবাজি
আসল-নকল নিরূপণে নেই অগ্রগতি
শাহীন রহমান

আসল-নকল নিরূপণে নেই অগ্রগতি

ঢাকা: হিজড়া নয়, অথচ হিজড়া সেজে চাঁদাবাজি চলছে। সম্প্রতি ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে চাঁদাবাজির সময় পুলিশ হাতেনাতে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে দেখা যায়, তারা কেউ হিজড়া নয়। অথচ গায়ে থ্রিপিস, মুখে মেকাপ, কপালে টিপ ও বুকে ওড়না দিয়ে হিজড়া সেজে তারা চাঁদাবাজি করছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত হিজড়া শনাক্তের পদ্ধতি না থাকায় হিজড়া সেজে চাঁদাবাজির ঘটনা বাড়ছে। এ কারণে হিজড়া শনাক্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে তাদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে।

তবে সমাজসেবা অধিদপ্তর জানিয়েছে, হিজড়া শনাক্তকরণ ও তাদের জীবনমান উন্নয়নে ২০১৩ সাল থেকে একটি কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। বর্তমানেও এ কর্মসূচি চলমান। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হিজড়া জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ হলেও তারা অনগ্রসর গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। সমাজে তারা বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার। পারিবারিক, আর্থসামাজিক, শিক্ষাব্যবস্থা, বাসস্থান, স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সর্বোপরি তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় এনে সার্বিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে সরকার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অধিদপ্তরের জরিপে দেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার।

সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে ‘হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের এই কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২১টি জেলায় তা সম্প্রসারণ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ৬৪টি জেলায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রতিবছরই এ কার্যক্রমের আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ সালে ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৮৫ হিজড়াকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।

এদিকে, হিজড়াদের স্বীকৃতির পর থেকেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের তৃতীয় লিঙ্গ পরিচয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রকাশিত ভোটার তালিকায় সাড়ে তিনশর বেশি হিজড়াকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালে সরকার হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিলেও ভোটার তালিকায় তারা তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া হিসেবে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পায়নি। নির্বাচন কমিশনের বিধিমালায় জটিলতার কারণেই হিজড়াদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। বিধিমালা সংশোধনের পর তাদের তথ্য সংগ্রহ ও ভোটার তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত সারাদেশে প্রকৃত হিজড়া শনাক্ত না করায় আসল-নকল হিজড়া নিরূপণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। সারা দিন বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি ফুটপাত, দোকান, বিপণিবিতান এমনকি মহল্লার বাসিন্দারাও এই চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। তবে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত সবাই হিজড়া কিনা তাও নিরূপণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের পক্ষে।

এ অবস্থায় সংসদের স্থায়ী কমিাটর পক্ষ থেকে ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত হিজড়া শনাক্ত করে তাদের আইডি কার্ড দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য শিবলী সাদিক, বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন, অ্যারমা দত্ত, শবনম জাহান ও কাজী কানিজ সুলতানা অংশ নেন। বিশেষ আমন্ত্রণে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু বৈঠকে যোগ দেন।

বৈঠকে ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত হিজড়া শনাক্ত করে আইডি কার্ড প্রদান এবং হিজড়া জনগোষ্ঠী ও মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক তাসলিমা ইয়াসমিন বলেন, নানা দাপ্তরিক কাজে নারী-পুরুষের সঙ্গে কখনো অন্যান্য, কখনো হিজড়া লিঙ্গ ব্যবহার করা হয়। তবে পরিষ্কার করে কোথাও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে, সেটা বাংলাদেশে বলা নেই। সরকার হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও এমন নয় যে, আইন করে তৃতীয় লিঙ্গ বলা হয়েছে। এক লাইনে ছোট করে গেজেট নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে তাদের ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে পরিচয় করাতে। সেখানে তৃতীয় লিঙ্গ শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি। এই বিষয়টা আরো বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবেই হোক হিজড়াদের শনাক্ত করে পরিচয়পত্র দেয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে।