ঢাকা: বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যূনতম মজুরী ২৫ হাজার টাকা নির্ধারনের দাবি জানিয়েছে খাত সংশ্লিষ্ট ১০টি সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘বাজারদর, মজুরি বৃদ্দি ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন প্রসঙ্গে’ আয়োজিত মতবিনিময় সভা থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রডারেশনের সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি প্রধান তাসলিমা আখতার, জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি এএএম ফয়েজ হোসেন, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি মাহমুদ হোসেন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদ রেজা প্রমূখ
আয়োজকরা জানান, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চালের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ, ডাল (মোটা দানা) ৯৬ শতাংশ, আটা (প্যাকেট) ৭২ শতাংশ, সয়াবিন তেল লুজ ৯৭ শতাংশ, ১ বোতল ৭৮ শতাংশ, ৫ লিটার বোতল ৯৩ শতাংশ, লবণ ৪০ শতাংশ ও ডিম (হালি) ৫০ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করে সংগঠনটি জানিয়ছে- সরকারি হিসাবের চেয়েও প্রকৃত মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে বসবাসরত একজন ব্যক্তির মাসিক খাবার খরচ ৫ হাজার ৩৩৯ টাকা। চারজনের একটি পরিবারের ক্ষেত্রে এই খরচ হচ্ছে ২১ হাজার ৩৫৮ টাকা। খাবারের সঙ্গে এক কক্ষের ঘরভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল, চিকিৎসা ব্যয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষার পণ্য ক্রয়, সন্তানের পড়ালেখার খরচ, যাতায়াত, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের বিল হিসাব করলে ঢাকার আশপাশের এলাকায় ৪ সদস্যের এক পরিবারের মাসিক খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৫৪৮ টাকা। তবে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে বাড়িভাড়া বেশি। সে ক্ষেত্রে মাসিক খরচ হবে ৪৭ হাজার ১৮২ টাকা। খাবারের তালিকা থেকে মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও মুরগি বাদ দিলেও তা ৩৩ হাজার ৮৪১ টাকায় দাঁড়ায়। তিন মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের উপরে। কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
বেঁচে থাকার জন্য ২৫ হাজার টাকার কম মজুরিতে একজন পোশাক শ্রমিক চলতে পারেন না বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
তারা বলেন, জ্বালানী তেলসহ দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি শুধু শ্রমিকের জীবন নয় উৎপাদনে তৈরী করেছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি করেছে। ফলে শ্রমিক এবং শিল্পের স্বার্থেই অতিদ্রুত মজুরি বোর্ড গঠন করে মজুরি বৃদ্ধি প্রয়োজন। পোশাক শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির লড়াইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার দিকে নিয়ে যাবার জন্য সকলকে আহব্বান জানিয়েছেন বক্তারা।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকরা বর্তমানে খুব অসহায় সময় পার করছে। তাদের এই দুঃসময়ে তাদের কথা সবাইকে ভাবতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
শ্রমিকদের মানসম্মত মজুরির বিষয়ে ব্রাক ইন্সটিটিউট অব গভর্নেন্স এন্ড ডেভলপমেন্টের গবেষক মাহীন সুলতানা বলেন, কোন ধরণের মজুরীর কথা আমরা বলছি। মান সম্মত নাকি বেঁচে থাকার জন্য মজুরি। শুধু বেঁচে থাকার জন্য একটা মজুরি নিয়ে কেন আমরা বাচতে চাইব? সেই হিসেবে ২৫ হাজার টাকা মজুরিও অনেক কম। সঞ্চয়, স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষা সব মিলিয়ে এই টাকাটায় হয় না। এগুলো বাদই থেকে যায়। সরকার ও মালিকপক্ষের সাথে বসে সমস্যার সমাধানের পরামর্শ দেন তিনি। সবশেষ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রতি জোর দেন মাহিন সুলতানা।
সরকার মালিকদের অনুগত হয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের ভারপাপ্ত সভাপতি শামীম ইমাম বলেন, মালিক রা তাদের কুত্তার জন্য দৈনিক ২০০ টাকা খরচ করে। সেই কুকুর কে দেখবালের জন্যও এক জন লোক রাখা হয়। সে হিসেবে একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের পেছনে তার অর্ধেক টাকাও খরচ করেনা মালিকরা। শ্রমিকদের টাকা দেবার সময় আসলে মালিক এবং সরকারের টাকা থাকেনা। সরকার মালিক দের অনুগত হয়ে কাজ করছে। আমাদের কে চিনতে হবে আমাদের বন্ধুকারা এবং শত্রু কারা। শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আমাদের এই আন্দোলন রাজনৈতিক ভাবে করতে হবে।
শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি শাহলম ভূইয়া বলেন, শ্রমিক আন্দোলনে জীবন বাচার জন্য ক্যালরির হিসাব করে লাভ নেই। মোট কথা শ্রমিক আন্দোলনে তার অধিকার আদায়ে ঐক্য বধ্য হতে হবে। যারা স্বাধীনতার পর থেকে ক্ষমতায় এসেছে তারা শুধু পেরেছে কত ভাবে এবং কয় ধাপে শ্রমিকদের বেতনকে কাটা ছেড়া করা যায়। আপনারা যদি গবেষনা করে দেখেন গার্মেন্টস মালিকরা যাত দ্রুত শিল্পপতি হয়েছে তাদের শুরুর অবস্থা কেমন ছিল। কোন সেক্টরের মালিকরা এত দ্রুত কখনো এত টাকা পয়সার মালিক হতে পারেনি। সকল সেক্ট্ররের শ্রমিকরা এক প্লাটফর্মে এসে আন্দোলন করেলে একটা বিপ্লব ঘটবে।
গার্মেন্টস মালিকরা মজুরি কম দিয়ে অর্থ বিদেশে পাচার করছে উল্লেখ করে গবেষক মাহা মির্জা বলেন, মজুরি বৃদ্ধিপেলে যে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংশ হয়ে যাবে এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিপেলে উল্ট শিল্পের মান আরো উন্নত হবে। গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে বলে মালিকরা যে অপপ্রচার করছে তা শ্রমিকদের মজুরী না বাড়ানোর জন্য। মালিকদের মুনাফার অংশ যদি দেশে বিনিয়োগ হত তাহলে তাদের ছাড় দেয়াযেত। মালিকরা যে আয় করছে তাদিয়ে তারা মালয়শিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরি করছে। তারা মুনাফার টাকা দেশে বিনিয়োগের বদলে দেশের বাইরে ইনভেস্ট করছে। বিগত ১০ বছরের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক হিসাব দেখলে আমরা এই চিত্র দেখতে পাই। শ্রমিকরা টাকা পাচার করেনা তারা এ টাকা দেশেই খরচ করে। আর মালিকরা।
ভোরের আকাশ/ইএস/জেএস