logo
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৮:৫৭
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: রোডম্যাপ বাস্তবায়নে কাজ শুরু
শাহীন রহমান

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: রোডম্যাপ বাস্তবায়নে কাজ শুরু

ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে আগেই। রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী বছর ডিসেম্বরে অথবা পরের বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে সংসদ নির্বাচন। এর প্রস্তুতি হিসেবে সারা দেশে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সারা দেশে ৩০০ আসনে নির্বাচনের জন্য ২৪ হাজার ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে যেসব প্রতিষ্ঠান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, এবারো সেসব প্রতিষ্ঠান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তবে নদী ভাঙন বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার পরিবর্তে নতুন কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশে ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা আগামী বছর জুলাইয়ে প্রকাশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের ২৫ দিন আগে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আড়াই হাজার ভোটারের জন্য একটি কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। গড়ে ৬০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি এবং ৫০০ মহিলা ভোটারের জন্য একটি করে কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। তবে ইভিএমের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে ৪৫০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি এবং ৪০০ মহিলা ভোটারের জন্য একটি করে কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে।

অবস্থানগত কারণে কোনো ভোটকেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা অধিক হলে সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভোটারের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক অতিরিক্ত ভোটকক্ষের ব্যবস্থা করা যাবে। বিশেষ ক্ষেত্রে জনবসতি কম এলাকায় এবং ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে নির্দিষ্ট ভোটারের কমসংখ্যক ভোটারের জন্যও ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে (যেমন পার্বত্য জেলাগুলো)। এ ছাড়া কম জনবসতিসম্পন্ন এলাকা, দুর্গম পার্বত্য এলাকা, দ্বীপ অঞ্চল এবং প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে উপরোক্ত শর্তগুলো শিথিল করা যেতে পারে- যাতে ভোটারদের ভোট প্রদানে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।

এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র স্থাপনে সরকারি ভবনগুলো প্রাধান্য দেয়ার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা পরিচালিত কমিউনিটি সেন্টার, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, সরকারি অফিস, ক্লাব এ ধরনের ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে। কারো প্রভাবাধীন বা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়Ñ এমন স্থানে কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে না। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাতায়াতের সুবিধা ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে; যাতে ভোটার এলাকাগুলো যেন ভোটকেন্দ্রের সংলগ্ন ও সুনিবিড় হয়। দুটি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের রাখতে বলা হয়েছে।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম স্বাক্ষরিত ভোটকেন্দ্র স্থাপনসংক্রান্ত ইসির নির্দেশনা সারা দেশের জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন অনুমোদিত ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা নীতিমালার’ আলোকে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রস্তাবিত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত রাখার জন্য অনুরোধ করা হবে।

এতে আরো বলা হয়, বিগত সংসদ নির্বাচনে যেসব প্রতিষ্ঠান বা ভবন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠান এবারো কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তবে ভোটার বৃদ্ধির কারণে নতুনভাবে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন হলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, নির্বাচিত প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নতুনভাবে ভোটকেন্দ্রের জায়গা ও তালিকা নির্ধারণ করতে হবে। যেসব ব্যক্তি রাজনীতির সঙ্গে অথবা নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের নামে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভোটকেন্দ্র স্থাপন থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে বিকল্প কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকলে শর্তটি শিথিল করা যাবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিবিড় তদারকি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়োগ পর্যাপ্ত থাকতে হবে।

ভোটকেন্দ্র যে স্থানে হবে, ভোটকেন্দ্রের নামকরণ সে স্থানের নামে করতে হবে। কোনো অস্থায়ী জায়গায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হলে এলাকার অবস্থান সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ করতে হবে। শহর এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ বিধায় পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হয়। শহর এলাকায় যতদূর সম্ভব পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে পৃথক পৃথক ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে। প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের নামের বিপরীতে উল্লিখিত প্রতিটি ভোটার এলাকার নাম উল্লেখ করতে হবে।

ভোটার এলাকার নামের পাশে কতজন ভোটার ওই ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন, তার সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে। পুরুষ ও মহিলা ভোটার সংখ্যা আলাদাভাবে দেখাতে হবে। কোনো ভোটার এলাকাকে বিভক্ত করে একাধিক ভোটকেন্দ্রের জন্য নির্ধারণ করা হলে ভোটার তালিকায় বর্ণিত ক্রমিক নম্বরগুলো ভোটকেন্দ্রের বিপরীতে প্রদর্শন করতে হবে- যাতে স্পষ্ট বোঝা যায়, ভোটার তালিকায় কোন কোন ভোটারকে কোন কোন ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে- যেন ভোটগ্রহণের দিন ভোটাররা অযথা হয়রানি বা বিভ্রান্তির সম্মুখীন না হন।

ভোরের আকাশ/আসা