logo
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১২:২০
বাজলো পূজার ঘণ্টা: এবার দুর্গামণ্ডপ ৩২ হাজার ১৬৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজলো পূজার ঘণ্টা: এবার দুর্গামণ্ডপ ৩২ হাজার ১৬৮

ঢাকা: করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত দুর্গাপূজা এবার উৎসবের রঙে ফিরছে। সারা দেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

 

গতকাল শনিবার এবারের দুর্গোৎসব নিয়ে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আসেন হিন্দু ধর্মীয় নেতারা। সভায় এবারের দুর্গোৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। গত বছর কুমিল্লায় কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলেও জানান পরিষদের নেতারা।

 

বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার ঘণ্টা বেজেছে আজ রোববার মহালয়ার মধ্য দিয়ে। আগামী ১ অক্টোবর শুরু হবে মূল পূজা, যা ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

 

পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বলেন, ‘গত বছরের ঘটনার প্রেক্ষাপটে এ বছর সরকার চাচ্ছে- কোনো অবস্থায়ই যেন কোনো অঘটন না ঘটে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি সক্রিয়। আমরা মনে করি, আমাদের ৩২ হাজারর ১৬৮টি মন্দিরের সুরক্ষা দেয়া খুব কঠিন। তাই আমরা এ বছর প্রত্যেক মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করছি, যারা রাতেও পাহারা দেবে। গত বছর কুমিল্লায় একটি মণ্ডপে প্রতিমার ওপর কুরআন রাখার ঘটনায় বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হয়। তার জেরে আরো কয়েকটি জেলায়ও হামলা হয় হিন্দুদের ওপর।’

 

তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ- এ কথা বলা যাবে না। ঘটনা ঘটতে পারে, তবে আমরা এবার খুব সচেতন। সর্বোচ্চ সিসিটিভির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গ্রামে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সেই মন্দিরগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, যেগুলো অস্থায়ী মন্দির। স্থায়ী জায়গায় না হয়ে মাঠে, ময়দানে বা বিভিন্ন রাস্তাঘাটে যেসব মণ্ডপ স্থাপন করা হয়, সেগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে আমাদের বেশি বেশি পাহারা দিতে হবে এবং সারারাত বসে থাকতে হবে।’ ভৌমিক আগামী নির্বাচনের আগেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

 

তিনি বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বারবার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের কথা বলা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগেই এটা করতে হবে।’

 

তিনি বলেন, আমরা বলেছি, এমন একটি আইন করতে হবে, যেমন এসিড নিক্ষেপ হতো বাংলাদেশে, সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করে স্পেশাল আইন করার ফলে কিন্তু এটা একেবারেই কমে গেছে। আমাদের জন্যও এমন একটি আইন করতে হবে, যারা অপরাধী তাদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে হবে এবং স্পেশাল আদালতে কম সময়ের মধ্যে বিচার করতে হবে।

 

মতবিনিময় সভায় পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান, গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮। এবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪১, যা গত বছরের থেকে ৬টি বেশি।

 

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে পূজার সংখ্যা বাড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ও শুভানুধ্যায়ীদের অনুদান নিঃসন্দেহে পূজার সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বলা যায়। পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি নিশ্চয়ই আনন্দদায়ক। তবে পূজার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পূজাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টিও সবাইকে বিবেচনায় নেয়া দরকার।

 

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, পূজা, ঈদ, বড়দিন, বৌদ্ধ পূর্ণিমা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। আমরা এমন একটি সমাজের অপেক্ষায় আছি, যে সমাজে ঈদ-পূজা-বড়দিন-বৌদ্ধ পূর্ণিমাসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও সার্বজনীন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো নির্বিঘ্নে, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে, কোনো ধরনের ভয়ভীতি এবং পুলিশি পাহারা ব্যতিরেকে অনুষ্ঠিত হবে।

 

মতবিনিময় সভায় তিনটি বিষয়ের প্রতি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সেগুলো হলো- দুর্গাপূজা চলাকালীন কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেয়া; দুর্গাপূজাসহ অন্য প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় স্কুল, কলেজ, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা না রাখা; দুর্গাপূজাসহ অন্য প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা না রাখা।

 

দুর্গাপূজার প্রাক্কালে বিভিন্ন সাংগঠনিক পর্যায়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভা এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভার মতামতের ভিত্তিতে সভা থেকে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়।

 

সেগুলো হলো- দুর্গাপূজায় দুদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা। দুর্গাপূজাও জাতীয় মর্যাদায় পালনের পদক্ষেপ নেয়া। পূজার দিনে কারাগার, হাসপাতাল, অনাথ আশ্রমে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা। সরকারি অনুদান পূজা উদযাপন পরিষদের স্থানীয় কমিটির তালিকা অনুযায়ী বণ্টন করা।

 

দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়নে সাম্প্রতিক সময়ে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি ফেরত প্রদানে প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া এবং দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি সরকারের এ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পরিবর্তে হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন করা। প্রতিটি জেলায় একটি করে মডেল মন্দির কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা।

 

টোলগুলোর সংস্কার ও টোল শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ধার্য করা। আজ মহালয়া উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও বনানী মাঠে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করার কথা। বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন শুভ মহালয়া আজ। মূলত এদিন থেকেই শুরু হয়েছে দেবীপক্ষের। শ্রী শ্রী চণ্ডী পাঠের মধ্য দিয়ে দেবীদুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এ ‘চণ্ডী’তেই আছে দেবীদুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা।

 

শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো মহালয়া। বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহিষাসুরমর্দিনী দেবীদুর্গা সব অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। পুরাণে আছে, মহালয়ার দিনে, দেবীদুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোনো মানুষ বা দেবতা কখনো মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলত অসীম হ্মমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হতে চায়।

 

ভোরের আকাশ/আসা