logo
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৩:০৮
জেলা পরিষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের হিড়িক
শাহীন রহমান

জেলা পরিষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের হিড়িক

ঢাকা: জেলা পরিষদেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের হিড়িক শুরু হয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর দেশের ৬১ জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই ২৭ জেলায় চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ইসির হিসাব অনুযায়ী, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার এই হার ৪৪ শতাংশ। তারা জানান, চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় ৩৪ জেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।


জেলা পরিষদ নির্বাচন আইন অনুযায়ী এই নির্বাচনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও নারী সদস্য, পৌরসভার মেয়র, কমিশনার, সংরক্ষিত নারী কমিশনার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলররা স্থানীয় এই সরকার পরিষদে ভোট দিয়ে একজন চেয়ারম্যান, প্রত্যেক উপজেলার সমান একজন করে সাধারণ সদস্য এবং এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য নির্বাচিত করবেন।


ইসির তফসিল অনুযায়ী এই নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ছিল গত ১৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমার দিনেই ১৯ জেলায় একক প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। একক প্রার্থী থাকায় এসব জেলায় চেয়ারম্যান পদে আর নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝালকাঠি, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, বরগুনা, বাগেরহাট, ভোলা, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ ও সিলেটে একজন করে প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। প্রার্থীরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী।


এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়। বাছাই দিনে আরও তিনজন প্রার্থীর মনোনয়পত্র বাতিল হলে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী দাঁড়ায় ২২ জনে। ওই দিন মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিনে কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম ও নাটোরে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। এতে ওই তিন স্থানে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় একজন করে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ছিল এই নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। শেষ দিনে আরও ৫ জেলার প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলে একক প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭ জনে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, শেষ দিনের পর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। ফলে বাকি ৩৪ জেলায় এখন নির্বাচন হবে। ২৭ জেলায় প্রার্থীরা ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হওয়ায় এখন ৪৪ শতাংশ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ করতে হচ্ছে না। বাকি ৫৬ শতাংশ জেলায় ভোটগ্রহণ করতে হবে।


ইসি কর্মকর্তারা জানান, এই নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে প্রার্থীরা নির্বাচনে মাঠে নেমে পড়েছেন। এদিন প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ৩৪ জেলায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের পাশাপাশি দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আইন অনুযায়ী এই নির্বাচনে দল থেকে প্রার্থিতা দেয়া হলেও কোনো দলের নিজস্ব প্রতীকে ভোট হচ্ছে না। ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সোমবার থেকে প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। তবে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।


জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ছাড়াও সদস্য ও সংরক্ষিত পদে ভোটগ্রহণ করা হবে। এসব পদে বহু প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে ইসির দেয়া হিসাব অনুযায়ী এই নির্বাচনে সংরক্ষিত সদস্যপদে ১৯ জন এবং সাধারণ সদস্যপদে ৬৮ জন প্রার্থী ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে জেলা পরিষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন ৭৭ প্রার্থী। প্রত্যাহার শেষে ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৯৩ জন। তাদের মধ্যে ২৭ জন একক প্রার্থী। এসব জেলায় সংরক্ষিত সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬১৭ জন। আর সাধারণ সদস্যপদে ১ হাজার ৪৯৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ৬৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।


আইন অনুযায়ী প্রতিটি জেলা পরিষদে একজন চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলার সংখ্যার সমান সংখ্যক সাধারণ সদস্য এবং উপজেলার এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যক সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত হবেন, তবে তা দুই-এর কম হবে না। এর আগে ২০১৬ সালের ভোটেও প্রতিটি জেলা পরিষদে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং ৫ জন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করার সুযোগ ছিল। চলতি বছর এ নিয়মে সংশোধনী আনা হয়। এবার ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের মোট ৬৩ হাজারেরও বেশি নির্বাচিত প্রতিনিধি জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর ২০১৬ সালে প্রথম নির্বাচন হয় স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানে। এবার হচ্ছে দ্বিতীয় নির্বাচন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক।

 

ভোরের আকাশ/আসা