ঢাকা: দলের কর্মসূচি পালনে এবার ক্ষতিগ্রস্ততদের সহযোগিতা নিয়ে তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। বিশেষ করে হামলায় আহতদের সুচিকিৎসা ও মামলার শিকার নেতাকর্মীদের আইনি সহযোগিতা করা হচ্ছে দলীয়ভাবে। এ ছাড়া সম্প্রতি কর্মসূচিতে নিহত বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের চার নেতার পরিবারেরও দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিষয়টিকে তৃণমূল ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। দাবি আদায়ে আগামীতে আন্দোলন বেগবান করতেই দলটির এমন উদ্যোগ বলে জানা গেছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সবসময় দলের ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দল ছিল। এখন টানা কর্মসূচিতে হামলা-মামলা অব্যাহত থাকায় সহযোগিতাও বাড়ানো হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের দলের সহযোগিতা পাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক বলেও দাবি তাদের।
টানা তিন মাস মাঠের কর্মসূচিতে বিএনপি। সাম্প্রতিক কর্মপরিকল্পনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দলটি এখন আন্দোলনমুখী। ক্রমে আন্দোলনের গতিও বাড়ানো হচ্ছে।
জানা গেছে, জুলাই মাসের শুরু থেকেই ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে মাঠে আছে বিএনপি। বিশেষ করে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দৃঢ়ভাবে মাঠে বিএনপি। একই সঙ্গে ভোটাধিকার হরণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ইস্যুও রয়েছে। সারা দেশে বিএনপি এসব ইস্যুতে মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, এমনকি ইউনিট ও হাট-বাজারে কর্মসূচি পালন করেছে। এসব কর্মসূচি পালনে শুরুর দিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও পুলিশ কিছুটা নমনীয় ছিল। তবে জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
জ্বালানি খাতের অব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে গত ৩১ জুলাই ভোলায় বিএনপির বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিম। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষ হয়। এরপরও কর্মসূচি পালনে মাঠে থাকে বিএনপি। আগস্ট মাসের শুরু থেকেই মাঠে থাকে বিএনপি। গত ২২ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী লাগাতার সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় দলটি।
গত ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও কর্মসূচি ছিল বিএনপির। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে নারায়ণগঞ্জে নিহত হন যুবদল কর্মী শাওন। দলীয় নেতাকর্মী হত্যা ও সমাবেশে বাধার প্রতিবাদেও কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বিএনপি।
এ ছাড়া গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি নতুন করে ১৬ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। ওই কর্মসূচি পালনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মিরপুরের সমাবেশে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশ ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া ১৭ সেপ্টেম্বর বনানীতে কর্মসূচি পালনে হামলায় আহত হন দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। আজ মঙ্গলবার এই কর্মসূচির শেষ দিন। এ কর্মসূচি পালনেও হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছিল, ২২ আগস্ট থেকে পরবর্তী ২২ দিনে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৭২টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ২০ হাজারের অধিক জনকে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩২৯ জনের অধিক। আহত হয়েছে ১৭১১ জন। আর ৩১ জুলাই পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা তিনজন ছিল। বিএনপির সংবাদ সম্মেলনের পর ইতোমধ্যে আরো দুই সপ্তাহ পার হয়েছে। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জে একজন নিহত হয়েছেন। ফলে নিহতের সংখ্যা এখন চারজনে। আহতের সংখ্যা এবং মামলাও বেড়েছে বলে জানা গেছে।
এবারের টানা কর্মসূচিতে নিহত, আহত ও মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছে বিএনপি। ৩১ জুলাই ভোলায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে নিহত ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য আব্দুর রহিমের বাড়িতে যান বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মিডিয়া সেলের প্রধান সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপনসহ প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত এই পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবর্ষিকীর মিছিলে গুলিতে যুবদল কর্মী শাওন নিহত হন। ২ সেপ্টেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শাওনের বাড়িতে গিয়ে দলের পক্ষ থেকে এই পরিবারটির দায়িত্ব নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
২২ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত যুবদল কর্মী শাওন ভূঁইয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শাওনের বাড়িতে গিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। জানা গেছে, এবারের কর্মসূচি পালনে হামলায় আহত ও মামলার শিকার পরিবারের পাশে আছে বিএনপি। ঢাকা, ফেনী, যশোর, রংপুর, ভোলা, মানিকগঞ্জ, নোয়াখালী, ঝিনাইদহ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় দায়ের হওয়া মামলায় নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করেছে বিএনপি। এসব জেলায় কর্মসূচি পালনে সংঘর্ষে আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসা প্রদানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। নারায়ণগঞ্জ, ভোলা ও চট্টগ্রামে দলের কেন্দ্র থেকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নামে মামলাও করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন বিএনপির তৃণমূলের অভিযোগ ছিলÑ কঠিন বিপদের মুহূর্তে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রকে সঠিকভাবে পাশে পায়নি। তাদের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশ্যেও এসেছে। আইনি সহযোগিতার জন্য একসময় সেল গঠন করা হলেও সেটি অকার্যকর ছিল।
তবে এবার দলের এ বিষয়ে অবস্থান পরিবর্তনকে অনেকটাই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। যশোরের মনিরামপুরের জয়পুরের ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ভোরের আকাশকে বলেন, তার এলাকার সক্রিয় বেশিরভাগ নেতাকর্মীর নামে মামলা আছে। অনেকেই হামলার শিকার হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের এখন সহযোগিতা করা হচ্ছে। যে কারণে দল আরো চাঙা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, দল সবসময় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে ছিল। তার দাবি প্রতিদিনই তাকে মামলার শিকার নেতাকর্মীর আইনি লড়াইয়ে থাকতে হয়। টাকা নেয়া দূরের কথা বরং তাদের হাতখরচও দিতে হয়। আগের তুলনায় এখন তৃণমূলকে সহযোগিতার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে করা হয়নি এমনটি নয়। তবে এখন টানা কর্মসূচি চলছে। তাই সহযোগিতা অব্যাহত থাকায় চোখে পড়ছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, দলের কেন্দ্র সবসময় তৃণমূলের পাশে ছিল। আগামী দিনেও থাকবে। দল করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো নেতা বা কর্মীর সহযোগিতা পাওয়া তার অধিকার।
ভোরের আকাশ/আসা